অম্বিকেশ গ্রেফতার নিয়ে প্রশ্ন রাজ্যকে |
ব্যঙ্গচিত্র কাণ্ডে রাজ্য সরকারের কিছু বক্তব্যে অসঙ্গতি খুঁজে পেয়েছে রাজ্য মানবাধিকার কমিশন। তার মধ্যে প্রধান, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্রকে ‘নিরাপত্তার জন্য’ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলে জানায় সরকার। এই বক্তব্য ঠিক বলে মনে করছে না কমিশন। শুধু মনে করাই নয়, সরকারের বক্তব্যের কোথায় কোথায় এবং কেন তাদের খটকা লাগছে, তা জানিয়ে রাজ্যকে চিঠিও দিয়েছে তারা।
সরকারের কাছে পাঠানো চিঠিতে কমিশন জানিয়েছে, আইন অনুযায়ী কোনও শিশু বা মহিলা বিপদে পড়লে নিরাপত্তার জন্য পুলিশ তাঁদের থানায় নিয়ে যেতে পারে। কিন্তু অম্বিকেশবাবুর ক্ষেত্রে তা অবান্তর। একই সঙ্গে কমিশন জানতে চেয়েছে, নিরাপত্তার কারণে অম্বিকেশবাবুদের যদি থানায় নিয়ে যাওয়া হয়ে থাকে, তাঁদের গ্রেফতার করা হল কেন? যারা অম্বিকেশবাবুদের আক্রমণ করেছিল, পুলিশ তাদের বিরুদ্ধেই বা কোনও ব্যবস্থা নিল না কেন? প্রশ্ন তুলে বা অসঙ্গতির কথা বলেই চিঠি শেষ করেনি কমিশন। ব্যঙ্গচিত্র কাণ্ডে কমিশনের সুপারিশ যে-দু’টি কারণে রাজ্য মানবে না বলে জানিয়েছিল, সেগুলি ফের বিবেচনা করতেও বলা হয়েছে ওই চিঠিতে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৎকালীন রেলমন্ত্রী মুকুল রায়ের ব্যঙ্গচিত্র ই-মেলে কয়েক জনকে পাঠানোর অভিযোগে পূর্ব যাদবপুরের কয়েক জন তৃণমূল নেতা অম্বিকেশবাবু এবং তাঁর প্রতিবেশী সুব্রত সেনগুপ্তের উপরে চড়াও হন বলে অভিযোগ। পুলিশ উল্টে আক্রান্তদেরই গ্রেফতার করে। তার তদন্তে নামে মানবাধিকার কমিশন।
কমিশনের সুপারিশ ছিল, অম্বিকেশবাবু ও সুব্রতবাবুর ক্ষতিপূরণ হিসেবে তাঁদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা দিক সরকার। দু’মাসের মধ্যে ওই সুপারিশ রূপায়ণ করে কমিশনে রিপোর্ট পাঠাতে বলা হয়েছিল রাজ্যকে। কিন্তু ওই সময়সীমা পেরোনোর পরে কমিশনের কাছে আরও সময় চায় সরকার। রাজ্যের অনুরোধে পরপর দু’বার সময়সীমা বাড়িয়ে দেয় কমিশন। কিন্তু তার পরেও ওই সুপারিশ কার্যকর হয়নি।
কমিশনের বক্তব্য, ভারতীয় দণ্ডবিধির যে-ধারায় অম্বিকেশবাবুদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে, তা আদালতে প্রমাণ ও প্রতিষ্ঠা করা কঠিন। অম্বিকেশবাবুদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৫০৯ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। ওই ধারায় আনা অভিযোগে বলা হয়, ‘আকারে-ইঙ্গিতে কোনও মহিলার শালীনতা লঙ্ঘন করা হয়েছে।’ কমিশনের চিঠিতে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, সে-ক্ষেত্রে ‘তথ্যপ্রযুক্তি আইন, ২০০০’-এর ৬৬এ (বি) ধারায় প্রথমেই অভিযোগ দায়ের করা হয়নি কেন? শুনানির সময়েও কলকাতা পুলিশের তরফে ওই ধারার কথা জানানো হয়নি। পরবর্তী কালে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ওই ধারা জুড়ে দেওয়া হয়েছিল বলে মনে করছে কমিশন।
|