গঙ্গায় সাঁতরে, পাঁক মেখে ছিনতাইবাজ ধরল পুলিশ |
কিছুক্ষণ আগেও গঙ্গায় সাঁতার কাটতে দেখা যাচ্ছিল তাকে। গঙ্গার পাড় ধরে প্রায় ৩০০ মিটার যাচ্ছিল। কিছুক্ষণ দম নিয়ে ফের ফিরে আসছিল। কিন্তু হঠাৎ ‘ভ্যানিশ’!
মুহূর্তেই ‘খোঁজ খোঁজ’ রব পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা উৎসাহী জনতা আর পুলিশকর্মীদের মধ্যে। কিন্তু কোথায় গেল স্যান্ডো গেঞ্জি, ছাই রঙের প্যান্ট পরা ওই যুবক?
উত্তর এল গঙ্গা দিয়ে যাওয়া লঞ্চ থেকে। লঞ্চের যাত্রীরা চিৎকার করে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন স্যান্ডো গেঞ্জি-ছাই ফুল প্যান্ট আশ্রয় নিয়েছে গঙ্গায় বেরোনো নিকাশির একটি হাইড্র্যান্ট পাইপের মধ্যে।
অগত্যা কী আর করা? বুট, প্যান্ট পরেই পুলিশকে নদীতে নামতে হল। অন্তত ৫০ মিটার সাঁতার কেটে পৌঁছতে হল নিকাশি পাইপের কাছে। পাইপের মধ্যে থেকে পাঁকে মাখামাখি অবস্থায় তাকে তুলে আনতে হল ডাঙায়। প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে নাস্তানাবুদ হওয়ার পরে পুলিশ যাকে গঙ্গা থেকে তুলে আনল, সে আর কেউ নয়, পুলিশের খাতায় নাম থাকা এক কুখ্যাত ছিনতাইবাজ। নাম ছোট্টু ওরফে ল্যাংড়া রাজু। তার আস্তানা কলকাতার দিকে জগন্নাথ ঘাটে।
মঙ্গলবার সকাল ৯টা নাগাদ এই ঘটনা ঘটেছে হাওড়া স্টেশন সংলগ্ন গঙ্গার ঘাটে। হাওড়া সিটি পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার সূত্রপাত হাওড়া স্টেশনে এক যুবকের মোবাইল ছিনতাই হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে। পুলিশ জানায়, এ দিন হাওড়া স্টেশনের নিউ কমপ্লেক্সের ২৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে চেন্নাই মেলের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন অমল মান্ডি নামে এক যুবক। অমলবাবুর বাড়ি মালদায়। তিনি এ দিন ব্যক্তিগত কাজে চেন্নাই যাচ্ছিলেন। ওই সময়েই তাঁর দামি মোবাইলটি ছিনতাই হয়ে যায়। |
পুলিশ জানায়, মোবাইল ছিনতাই হওয়ার পরেই ওই ছিনতাইকারীকে ‘চোর’ ‘চোর’ বলে তাড়া করেন অমলবাবু একাই। তাঁকে দৌড়তে দেখে স্টেশনে অপেক্ষারত অন্য যাত্রী এবং রেলের কুলিরাও তাঁর সঙ্গে ছুটতে শুরু করেন। নিউ কমপ্লেক্সের গেটের বাইরে ১০ নম্বর পোস্টে তখন ডিউটি করছিলেন হাওড়া সিটি ট্রাফিক পুলিশের এএসআই বিভাস বিশ্বাস, কনস্টেবল আশিস মণ্ডল-সহ দুই সিভিক পুলিশকর্মী পূর্ণেন্দু ঘোষ ও রাজেশ সিংহ। ঘটনাটি বুঝতে পেরে তাঁরা চার জনই ছিনতাইকারীকে ধরতে ছুটতে শুরু করেন।
বিভাসবাবু বলেন, “ছেলেটা ছুটতে ছুটতে ট্রাফিক স্ট্যান্ড পেরিয়ে সোজা গঙ্গায় ঝাঁপ দেয়। তার পরে সাঁতার কেটে এক বার লঞ্চ ঘাটের দিকে যায়। সেখানে থেকে তাড়া খেয়ে ফিরে আসে উল্টো দিকে।”
এই ভাবে চোর-পুলিশ খেলা চলে প্রায় আধ ঘণ্টা। ঘটনা দেখতে গঙ্গার ঘাটে ভিড় জমে যায়। এর পরেই আচমকা যুবকটিকে আর দেখা যায় না। তখনই পাশ দিয়ে যাচ্ছিল হুগলি নদী জলপথ সমবায় সমিতির একটি বাবুঘাটমুখী লঞ্চ। পুলিশ জানায়, ওই লঞ্চ থেকেই যাত্রীরা চিৎকার করে দেখিয়ে দেন ছিনতাইবাজ লুকিয়ে রয়েছে হাওড়া স্টেশন থেকে মাটির নীচ দিয়ে আসা বড় নিকাশি পাইপের মধ্যে। বিভাসবাবু পুলিশের পোশাকেই গঙ্গায় নেমে পড়ার সিদ্ধান্ত নেন। প্রায় ১৫ মিনিটের চেষ্টায় ওই ছিনতাইবাজকে পাকড়াও করে ট্রাফিক গার্ড অফিসে নিয়ে আসেন।
বিভাসবাবু বলেন, “বুট, জামা, প্যান্ট পরেই নদীতে আমরা নেমে পড়েছিলাম। যে পাইপে ছেলেটা লুকিয়ে বসে ছিল, তাতে ঢুকতে গিয়ে পাঁকও মাখতে হয়েছে।”
সবই তো হল, কিন্তু ছিনতাই হওয়া মোবাইলটা উদ্ধার হল কি?
হাওড়া স্টেশনের ট্রাফিক গার্ডের ওসি ইন্দ্রনীল সান্যাল বলেন, “ছিনতাই হওয়া মোবাইলটা পাওয়া যায়নি। তবে ধৃতের কাছ থেকে আর একটি মোবাইল বাজেয়াপ্ত করেছি। ধৃতকে হাওড়া সিটি পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।” |