প্রেসিডেন্সিতে হামলার কতটা কী তদন্ত হবে, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। তার মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন্টর গ্রুপের চেয়ারম্যান সুগত বসুকে আশ্বাস দিলেন, হাঙ্গামার নিরপেক্ষ তদন্ত হবে। মঙ্গলবার মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন সুগতবাবু। তার পরে যান প্রেসিডেন্সিতে। সেখানেই সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসের কথা জানান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত কাজকর্মে সরকারি হস্তক্ষেপ হবে না বলে এ দিনও মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস মিলেছে বলে জানান সুগতবাবু। প্রেসিডেন্সিকে যে তিনি বিশ্বমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে চান, মমতা আগেও তা জানিয়েছেন। সেই জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে যে-কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার শিক্ষাজগতের মানুষদের হাতেই ছাড়ার পক্ষপাতী তিনি। এ দিনের সাক্ষাতে মমতা ফের সে-কথা বলেছেন বলে সুগতবাবু জানান। মেন্টর গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, “প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিমধ্যে ১৫০ জন শিক্ষক নিযুক্ত হয়েছেন। তার কোনওটিতেই যে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ হয়নি, মুখ্যমন্ত্রী তা-ও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।”
১০ এপ্রিল প্রেসিডেন্সির মূল ফটকের তালা ভেঙে ঢুকে হামলা চালায় বহিরাগতেরা। তাদের সকলেই তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্য বা তৃণমূলের স্থানীয় নেতা বলে অভিযোগ। হাঙ্গামায় কিছু পড়ুয়া জখম হন। ভাঙচুর চলে শতাব্দী-প্রাচীন বেকার ল্যাবরেটরিতেও। ঘটনার পাঁচ দিন পরে, ১৫ এপ্রিল প্রেসিডেন্সির ওয়েবসাইটে মেন্টর গ্রুপের বার্তায় হামলার নিরপেক্ষ ও পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত দাবি করা হয়। গ্রুপের চেয়ারম্যান সুগতবাবুর কাছে মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের আশ্বাস সে-দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন অনেকেই।
সুগতবাবু অবশ্য বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী এর মধ্যে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন বলে শুনেছিলাম। তাই সৌজন্যের খাতিরে মহাকরণে গিয়েছিলাম।” সেখানে প্রেসিডেন্সিতে হামলার প্রসঙ্গও ওঠে বলে সুগতবাবু জানান। উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। সুগতবাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী নিরপেক্ষ তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন।”
কিন্তু সুগতবাবু যা-ই বলুন, প্রেসিডেন্সি কাণ্ডের তদন্ত কতটা নিরপেক্ষ হবে, কত দ্রুত সেই তদন্ত শেষ হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের একাংশ তা নিয়ে সন্দিহান। ওই হামলার পরে প্রায় এক মাস কেটে গিয়েছে। হাঙ্গামায় অভিযুক্ত তৃণমূল ও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দুই নেতাকে গ্রেফতার করা হলেও তাঁরা জামিন পেয়েছেন। ঘটনার সাত দিন পরে ফরেন্সিক তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। ১০ দিন পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে যায় ফরেন্সিক দল। কিন্তু সেই দলের কাছে ভাঙা তালা, লোহার শিকল, বেকার ল্যাবরেটরির ভাঙা কাচের টুকরো ইত্যাদি নমুনা জমা পড়েছে প্রায় এক মাস বাদে, গত সোমবার। তাই ফরেন্সিক তদন্তের রিপোর্ট কবে মিলবে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে ছাত্র-শিক্ষকদের একটি অংশের মধ্যে। অভিযুক্তেরা শাসক দলের নেতা বা সমর্থক বলেই তদন্ত দীর্ঘায়িত হচ্ছে, এমন অভিযোগও উঠেছে। মেন্টর গ্রুপের চেয়ারম্যান অবশ্য এ-সব বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
হামলার পরে সুগতবাবু এ দিনই প্রথম প্রেসিডেন্সিতে যান। প্রথমে উপাচার্য মালবিকা সরকারের সঙ্গে কথা বলেন। সেখান থেকে যান বেকার ল্যাবরেটরির সামনে। কোথায় কী রকম ভাঙচুর হয়েছিল, জানতে চান বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীদের কাছে। যদিও ভাঙচুরের কোনও চিহ্ন এখন আর ল্যাবরেটরিতে নেই। পরে সুগতবাবু বলেন, “উপাচার্য জানিয়েছেন, ওই ঘটনার পরেও পঠনপাঠনে কোনও প্রভাব পড়েনি। পড়াশোনার পরিবেশ অক্ষুণ্ণ রয়েছে। এটা আনন্দের খবর।”
প্রেসিডেন্সিতে জীবনবিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়কে সংযুক্ত করে একটি বিভাগ খোলার সুপারিশ আগেই করেছিল মেন্টর গ্রুপ। সেই বিভাগ খোলার ব্যাপারে কাজ অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে বলে জানান সুগতবাবু। তিনি বলেন, “প্রাণিবিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা, শারীরতত্ত্ব, জৈব রসায়ন ইত্যাদি বিষয়কে একত্র করে বিভাগটি খোলা হচ্ছে। শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সিলের বৈঠকে এই বিভাগ খোলার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” বিষয়গুলি একত্র করে একটি বিভাগ খোলার পরে আলাদা ভাবে সেগুলি পড়ার সুযোগ থাকবে না বলে জানান উপাচার্য। তবে তিনি জানান, কেউ চাইলে বিশেষপত্র হিসেবে ওই সব বিষয় পৃথক ভাবে পড়তে পারেন। বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষের আশা, ২০১৩-’১৪ শিক্ষাবর্ষেই এই বিভাগে ছাত্র ভর্তি শুরু করা যাবে।
|