এক ছিল রাজা। তাঁর ছিল দুই রানি...!
সুদীপ্ত সেনের রাজত্বে অন্তত রানিদের মধ্যে সুয়ো-দুয়ো ভেদ ছিল না। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারছে, দুই স্ত্রীর মধ্যে যথেষ্ট ভারসাম্য রেখে চলতেন সুদীপ্ত। দুই স্ত্রীর মধ্যে টাকাপয়সার বিলি-বণ্টনে বৈষম্য করতেন না তেমন। সারদা কেলেঙ্কারি সামনে আসার মাস দুই আগে থেকেই দু’জনের কারও পাত্তা নেই। এক পুলিশকর্তার কথায়, “দুই রানিই যেন ভোজবাজির মতো উবে গিয়েছেন।”
এবং পুলিশের জেরার মুখে সুদীপ্ত এই বিষয়টি নিয়ে একেবারে স্পিকটি নট! পুলিশের দাবি, দুই স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর আইনি বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে বলে ধোঁয়াশা তৈরির চেষ্টাও করেছিলেন সুদীপ্ত। সারদার অফিসেও বিষয়টি নিয়ে কর্মচারীদের অনেকের কাছে ধোঁয়াশা ছিল। কিন্তু ওই দুই মহিলাকে জেরা করা গেলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সূত্র মিলতে পারে বলে মনে করছেন পুলিশ কর্তারা। দুই স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ের নামে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে আমানত করা সম্পদও থাকতে পারে বলে পুলিশের ধারণা। সেই কারণেই সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তের স্বার্থে সুদীপ্তর দাম্পত্যজীবন নিয়ে পুলিশকে মাথা ঘামাতে হচ্ছে। সুদীপ্তের দুই স্ত্রীর খোঁজে পুলিশের একটি দল ইতিমধ্যেই ভিন রাজ্যে অভিযানে গিয়েছে।
সুদীপ্তর দুই স্ত্রী সম্পর্কে কী জানা গিয়েছে? প্রথম স্ত্রী মধুমিতা সোদপুর এলাকার মেয়ে। ৪৬ বছর বয়স। তাঁর এক ছেলে এবং এক মেয়ে রয়েছে। ছেলে, রাজার বয়স ২৮। রাজাও সারদার সংসারে একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। যুবকের ব্যয়বহুল জীবনযাত্রা, ঘন-ঘন গাড়ি পাল্টে বান্ধবী-বিলাসের কথা পুলিশকে জানিয়েছেন সারদার একাধিক কর্তা। পুলিশ সূত্রের খবর, রাজার চার জন দেহরক্ষীও ছিল। খিদিরপুর এলাকার বাসিন্দা ওই চার দেহরক্ষীর প্রত্যেককে মাসে কুড়ি হাজার টাকা বেতন দেওয়া হত।
প্রথম বিয়ের পাঁচ বছর পরে খড়গপুরের পিয়ালিকে বিয়ে করেন সুদীপ্ত। বিবাহ-বিচ্ছেদের ধার ধারেননি। ৩৫ বছরের পিয়ালিরও একটি কন্যা, একটি পুত্র। পুলিশ সূত্রের খবর, কাউকেই বঞ্চিত করেননি সুদীপ্ত। সল্টলেকে দু’টি বাড়িতে দু’জনকে রেখে পৃথক ভাবে সংসারধর্ম বজায় রেখেছিলেন। আপাত ভাবে পারিবারিক অশান্তিও বোঝা যেত না। তবে নিজে সাধারণত মধুমিতার কাছেই বেশি থাকতেন। সেন সাহেবের নির্দেশে সারদা গার্ডেন ও সল্টলেক অফিস থেকে মাঝেমধ্যেই মোটা অঙ্কের টাকা রাজার কাছে পৌঁছে দেওয়া হত। পিয়ালির ছেলে-মেয়ের পড়াশোনার সব খরচও সারদার তরফে মেটানো হত।
পুলিশের দাবি, বিপদ আসন্ন বুঝে দুই স্ত্রী ও চার সন্তানকে আগেভাগেই সরিয়ে দিয়েছিলেন সুদীপ্ত। সেই সিদ্ধান্তটাই সুদীপ্তের মোক্ষম চাল বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। সারদার বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট ও আর্থিক নথি খুঁটিয়ে দেখে পুলিশ নিশ্চিত, ফেব্রুয়ারি মাসে দুই স্ত্রীর জন্য মোটা টাকা সংস্থার অ্যাকাউন্ট থেকে তুলে নিয়েছিলেন সুদীপ্ত। ঠিক ওই সময়েই সুদীপ্তর বড় ছেলে রাজা তাঁর লাল অডি গাড়িটি আলিপুরের এক ব্যবসায়ীকে কম দামে বিক্রি করে দেন। এক তদন্তকারী জানাচ্ছেন, “৪৫ লক্ষ টাকার গাড়ি ৩০ লক্ষ টাকায় বিক্রি করে রাজা আচমকাই কলকাতা ছাড়ে।” রাজার দেহরক্ষীদের এক জন জানান, আলিপুরের ওই গাড়ি ব্যবসায়ী লাল অডি গাড়িটি কিনতে চাইছিলেন না। “একবালপুর এলাকার এক রাজনৈতিক নেতার চাপে গাড়িটি কিনতে বাধ্য হন ওই ব্যবসায়ী।” গাড়ি বিক্রির নগদ টাকা নিয়েছিলেন রাজা।
কোথায় যেতে পারেন পিয়ালি ও মধুমিতা? পুলিশ সূত্রের খবর, মাসখানেক আগে শেষ বার পিয়ালি নয়ডায় ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। তবে মধুমিতা সল্টলেক থেকে বেরিয়ে কোথায় গিয়েছিলেন তার বিন্দু-বিসর্গ কারও জানা নেই।
|