শিশুদের মধ্যে ক্রমশই বাড়ছে হাঁপানি। বিশ্ব হাঁপানি দিবস উপলক্ষে কলকাতায় একটি বেসরকারি হাসপাতালের উদ্যোগে চিকিৎসকদের একটি সম্মেলন হল সম্প্রতি। তাতে কথা বললেন ইন্স্টিটিউট অফ চাইল্ড হেল্থের অধিকর্তা চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষ, চিকিৎসক অরুণ মাঙ্গলিক, চিকিৎসক শুভাশিস রায় প্রমুখেরা।
ওই অনুষ্ঠানে শুভাশিসবাবু জানান, বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, ভাইরাল জ্বরের হাঁপানিতে আক্রান্ত হয়ে ডাক্তার দেখাতে আসেন সব চেয়ে বেশি রোগী। ২০০৫ সালের জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গেই হাঁপানিতে ভোগা শিশুর সংখ্যা সব চেয়ে বেশি। বিভিন্ন হাসপাতালের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যাচ্ছে, রাজ্যের শিশুদের পাঁচ শতাংশই হাঁপানির শিকার। কিন্তু বাস্তবে সেই সংখ্যাটা আরও বেশি বলেই মনে করছেন চিকিৎসকেরা। শুভাশিসবাবু জানান, সারা বিশ্বে ছ’ বছর বয়সের শিশুদের ৫০ শতাংশেরই এক বার না এক বার শ্বাসের সমস্যা হয়। অথচ বেশির ভাগ চিকিৎসকই জানেন না, এই ধরনের শ্বাস কষ্টের জন্য কী কী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। শহরে দূষণের মাত্রা ক্রমাগত বেড়ে চলছে বলেই এসব হচ্ছে, বলছেন চিকিৎসকেরা। |
কীভাবে বোঝা যাবে, শিশুর হাঁপানি হয়েছে? চিকিৎসকদের ব্যাখ্যা, রাতে ঘুমনোর সময়ে অস্বস্তি, বা ক্রমাগত কাশি (ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস) হাঁপানির বৈশিষ্ট্য। সমস্যা হল, বেশির ভাগ বাবা-মাই স্বীকার করতে চান না তাঁদের সন্তানের হাঁপানি হয়েছে। তাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বার বার কাশি, শ্বাসকষ্ট, নাক বন্ধ হয়ে আসা ইত্যাদি উপসর্গ দেখলে তারা সাধারণ সর্দি কাশির চিকিৎসা করান শিশুদের। ফলে প্রথম থেকেই ঠিক চিকিৎসা না হওয়ায় তা শেষ পর্যন্ত হাঁপানিতে গিয়ে দাঁড়ায়। চিকিৎসক তথা অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক অনির্বান মৈত্র জানান, রোগ নির্ণয়ে ভুল ও সেখান থেকে চিকিৎসায় ভ্রান্তি পরিস্থিতি আরও খারাপ করতে পারে।
চিকিৎসকেরা জানান, যে সব অভিভাবকেরা শিশুর হাঁপানির চিকিৎসা করাচ্ছেন, তাঁদের অনেকেই আবার না জেনে শিশুকে এক সঙ্গে ওষুধ এবং ইনহেলার দেন। কিন্তু তা বিপজ্জনক। অনেক সময়ে কোনও ওষুধ প্রয়োগ করায় শিশু ভাল হতে শুরু করলে বাড়ির লোক হয়তো চিকিৎসককে জিজ্ঞাসা না করেই সেই ওষুধ নির্দিষ্ট সময়ের বেশি দিন ধরে চালিয়ে যান, জানালেন চিকিৎসক অরুণ মাঙ্গলিক। অথচ এমনটা করা একেবারেই উচিত নয়। এতে আপাত ভাবে রোগীকে সুস্থ দেখালেও, দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে তার ফল হতে পারে ভয়ঙ্কর। চিকিৎসকদের তাই বক্তব্য, ক্রমাগত কাশি হলেই তা অবহেলা না করে শিশুকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া, শুধুমাত্র স্বস্তি পাওয়ার জন্য ইচ্ছেমতো ওষুধ বা ইনহেলার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন অভিভাবকেরা। |