জলপাইগুড়িতে বেপরোয়া বাইক রোখার দাবি |
দুর্ঘটনায় মৃত্যু, প্রতিবাদে ব্যবসা বনধ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • জলপাইগুড়ি |
বাইকের ধাক্কায় শহরের কামারপাড়ায় এক যুবককের মৃত্যুর ঘটনায় ধৃত চালক-সহ তিন বাইক আরোহীর জামিন নাকচ করেছে জলপাইগুড়ি জেলা আদালত। সোমবার জলপাইগুড়ি জেলা আদালতের মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট চৌধুরী হেফাজত করিম অভিযুক্তদের ১৪ দিনের জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। আদালত সূত্রের খবর, ধৃতদের মধ্যে একজন যুবতীও রয়েছেন। ধৃতদের সকলেরই বয়স ২০ থেকে ২৫ এর মধ্যে। রবিবার সন্ধ্যায় দুই যুবক এবং এক যুবতী বাইকে চেপে তীব্র গতিতে বেগুনটারি-উকিলপাড়া-সহ নানা এলাকায় ঘুরছিলেন বলে অভিযোগ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্যস্ত কামারপাড়া এলাকায় বাইকটি পথচারী যুবককে পিষে দিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই পথচারী যুবক ধীরাজ শর্মার (২০) মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়ায়। শহরে বেপরোয়াভাবে বাইক চালানোর ঘটনা ঘটলেও ট্রাফিক পুলিশ নিষ্ক্রিয়। এই অভিযোগ করে প্রায় শ’তিনেক বাসিন্দা রবিবার রাত ১১টা পর্যন্ত থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান। মৃত যুবক দোকান কর্মী হওয়ায় বিক্ষোভে সামিল হন ব্যবসায়ীরা। সোমবারও থানায় বিক্ষোভ দেখান বাসিন্দারা। প্রতিবাদে দিনবাজার, ডিবিসি রোড, কামারপাড়ায় ব্যবসায়ীরা এ দিন ব্যবসা বন্ধ পালন করেছেন। |
বাইকের ধাক্কায় যুবকের মৃত্যুর প্রতিবাদে জলপাইগুড়ির দিনবাজার, ডিবিসি রোড,
কামারপাড়ার ব্যবসায়ীরা সোমবার ব্যবসা বন্ধ পালন করেন। দিনবাজারে তোলা নিজস্ব চিত্র। |
ঘটনায় চালক-সহ তিন আরোহীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। চালকের বিরুদ্ধে বেপরোয়া বাইক চালানো এবং পিছনে বসা এক যুবক ও যুবতীর নামে চালককে জোরে বাইক চালাতে উৎসাহিত করার অভিযোগ দায়ের করেছে পুলিশ। সেই সঙ্গে সকলের বিরুদ্ধেই অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সরকারি আইনজীবী শান্তা চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বেপরোয়া বাইক চালানো, ট্রাফিক আইনভাঙা এবং অনিচ্ছাকৃত খুনের অভিযোগে ধৃত তিন জনের জামিন নাকচ করে তাঁদের জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।” এই পরিস্থিতিতে শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন বাসিন্দারা। অভিযোগ, বিকাল পাঁচটার পরেই পোস্ট অফিস মোড়, দিনবাজার, কদমতলা, রায়কতপাড়া, কামারপাড়া, বেগুনটারির মত ব্যস্ত এলাকার ট্রাফিক পোস্টে কোনও ট্রাফিক পুলিশ থাকেন না। ট্রাফিক সিগন্যালগুলিকে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় রেখে ট্রাফিক কর্মীরা চলে যান বলে অভিযোগ। সন্ধ্যার পর থেকে শহরের যান চলাচলের উপর কোনও পুলিশি নিয়ন্ত্রণই থাকে না। দিনের পর দিন বেপরোয়া বাইক চালানোয় দুর্ঘটনা ঘটলেও পুলিশের হুঁশ ফেরেনি।
গত বছর জুলাই মাসে শহরের কদমতলায় তীব্র গতিতে ছুটে আসা একটি বাইকের ধাক্কায় এক বৃদ্ধা আহত হন। স্থানীয় বাসিন্দারা বাইক চালককে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। তার মাস খানেক বাদে অগস্ট মাসে দুপুর বেলায় একটি বেপরোয়া বাইক শহরের বাবুপাড়ায় তিন বছরের একটি শিশুকে পিষে দেয়। আহত শিশুটি দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থাকার পরে সুস্থ হয়। গত নভেম্বর মাসে রেসকোর্স পাড়াতেই একটি বাইক ল্যাম্পপোস্টে ধাক্কা মারায় চালকের মৃত্যু হয়। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ডিবিসি রোডে এমনই তীব্র গতিতে যাওয়া বাইকের ধাক্কায় পথচারী জখম হন। পুরসভার চেয়ারম্যান মোহন বসু বলেন, ‘‘পুলিশ সক্রিয় হলে এমন হত না।”
রবিবারের ঘটনার পরে এ দিন পুলিশ অফিসারদের নিয়ে বৈঠক করেন জেলা পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি। তিনি রাত আটটা পর্যন্ত প্রতিটি সিগন্যালে নজরদারির নির্দেশ দেন। তিনি জানান, কয়েকটি দলে ভাগ করে পুলিশ অভিযান চালাবে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নিজে অভিযানের নেতৃত্ব দেবেন। কোনও গাফিলতি বরদাস্ত করা হবে না। |