হুগলি নদী থেকে পলি তোলার জন্য ভর্তুকি বন্ধের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় জাহাজ মন্ত্রক চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানায়নি বলে দাবি করলেন কলকাতা বন্দরের চেয়ারম্যান রাজপাল সিং কাহালো। সোমবার বণিকসভা মার্চেন্ট চেম্বার অফ কমার্স আয়োজিত এক আলোচনাসভায় তিনি জানান, ভর্তুকি তুলে দেওয়ার বিষয়টি এখনও যোজনা কমিশনের বিবেচনাধীন। তবে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। লিখিত নির্দেশ এখনও আসেনি।
নাব্যতার সমস্যায় যে কলকাতা ও হলদিয়া বন্দরে পণ্য ওঠানো-নামানোর কাজ ভবিষ্যতে কমিয়ে ফেলতে হবে, তা এ দিন কার্যত মেনে নিয়েছেন কাহালো। তিনি বলেন, “২০২০ সালের মধ্যে কলকাতা বন্দরের পণ্য পরিবহণের ক্ষমতা ন’কোটি ৬০ লক্ষ টনে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। ওই সময় কলকাতা ও হলদিয়া বন্দরের পণ্য পরিবহণের ক্ষমতা তিন কোটি টনে নামিয়ে নিয়ে আসা হবে। বাকি ছ’কোটি ৬০ লক্ষ টন ডায়মন্ড হারবার, শালুকখালি এবং গভীর সমুদ্রবন্দরের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হবে।”
বণিকসভার সভাপতি দীপক জালান বক্তৃতা দিতে গিয়ে ভর্তুকি তুলে দেওয়ার কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের প্রসঙ্গটি তোলেন। তিনি বলেন, “খবর পাচ্ছি, নদী থেকে পলি মাটি তোলার জন্য কেন্দ্র যে-ভর্তুকি দেয়, ধাপে ধাপে তা বন্ধ করা হবে। চলতি আর্থিক বছর (২০১৩-’১৪) থেকেই এই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে বলে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক জানিয়েছে।” এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে হলদিয়া বন্দর বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন জালান। কারণ কেন্দ্র টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিলে হলদিয়া বন্দরের পলিমাটি তোলার কাজই বন্ধ হয়ে যাবে।
পরে এই বিষয়ে কাহালোঁকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “ভর্তুকি তুলে দেওয়ার প্রসঙ্গটি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছে। তবে আমাদের বলা হয়েছে, আয় বাড়ানোর জন্য পরিকাঠামো সম্প্রসারণ করতে হবে। আমরা সেই অনুসারে বিভিন্ন প্রকল্পের পরিকল্পনা করছি।”
হলদিয়া বন্দরের নাব্যতা বজায় রাখার জন্য কেন্দ্র বছরে ৪০০-৫০০ কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়। কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা ড্রেজিং কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া হলদিয়া বন্দরের নাব্যতা ধরে রাখতে নদী থেকে পলিমাটি তোলার কাজ করে। কিন্তু এই কাজে বিপুল টাকা খরচ হলেও নাব্যতার সমস্যায় বছরের অধিকাংশ সময়ই হলদিয়া বন্দরে বড় জাহাজ ঢুকতে পারে না। ফলে ব্যবসা মার খায়। কাজের মান নিয়েও অভিযোগ রয়েছে ড্রেজিং কর্পোরেশনের উপরে। হলদিয়া বন্দর থেকে একটু দূরে শালুকখালিতে (হলদিয়া ডক-টু) যে-দ্বিতীয় বন্দর গড়ার পরিকল্পনা রয়েছে, তা নিয়ে কোনও সংস্থাই আগ্রহ দেখাচ্ছে না। বন্দর-কর্তৃপক্ষকে দরপত্র চাওয়ার সময়সীমা বাড়াতে হচ্ছে। জমি-সমস্যায় ডায়মন্ড হারবারের নয়া জেটি প্রকল্পের কাজ ধীরে চলছে। আলোচনার স্তরে রয়েছে গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পের ঘোষণাও। এগুলোর কী হবে?
কাহালোঁ জানান, শালুকখালির যৌথ প্রকল্পের বিষয়ে তাঁরা যথেষ্ট আশাবাদী। কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রকের নিষেধাজ্ঞার জন্য হলদিয়ায় নতুন শিল্প আসতে পারছে না। বেসরকারি সংস্থাগুলি মনে করছে, নতুন আরও একটি বন্দর গড়লে তাদের ব্যবসা মার খাবে। ওই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছে। ডায়মন্ড হারবারের নতুন জেটি এবং গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্প নিয়েও কাজ এগোচ্ছে বলে কাহালোঁর দাবি। |