পঁচিশে বৈশাখ রবীন্দ্রমূর্তিতে এ বার মালা দেবেন বামেরা
রিবতর্নের ছোঁয়া এ বার বামফ্রন্টেও। এই প্রথম ২৫ বৈশাখ বামফ্রন্টের রাজ্য নেতারা সমবেত ভাবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গলায় মালা দিয়ে তাঁর ১৫৩তম জন্মদিবস পালন করবেন। রবিবার কার্ল মার্ক্সের ১৯৬ তম জন্মদিবসে তাঁর মূর্তিতে মালা দেওয়ার পরে বাম নেতারা নিজেদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। তখনই ঠিক হয়, এ বার থেকে সমবেত ভাবে রবীন্দ্রনাথকেও মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হবে। আজ, মঙ্গলবার বামফ্রন্টের বৈঠকে এই সিদ্ধান্তে আনুষ্ঠানিক সিলমোহর পড়ার কথা।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে দল ও সরকারের সর্ব স্তরে রবীন্দ্রজয়ন্তী পালনের নির্দেশ দেন। শুরু হয় রাজপথে মঞ্চ বেঁধে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে রবীন্দ্রজয়ন্তী। শহরের ট্র্যাফিক সিগন্যালগুলিতে সারা বছর রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজানোর বন্দোবস্তও করে দিয়েছে মমতার সরকার। তৃণমূল শিবিরের ব্যাখ্যা, সে সব দেখেই বাম নেতারা এবার আনুষ্ঠানিকভাবে রবীন্দ্রনাথের গলায় মালা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যদিও বাম নেতারা তা মানতে নারাজ।
তবে রবীন্দ্র-অনুরাগী হিসেবে পরিচিত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেন, “কেন্দ্রীয় ভাবে বামফ্রন্ট হয়তো রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন করেনি। এ বার করলে খুবই ভাল হবে।” মহাকরণে তাঁর ঘরে রবীন্দ্রনাথের ছবি টাঙিয়ে রাখতেন বুদ্ধবাবু। তাঁর কথায়,“আমরা সরকারি ভাবে রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন করেছি। ২৫ বৈশাখ তাঁর প্রতিকৃতিতে আমি প্রতি বার মালাও দিয়েছি।”
কমিউনিস্টরা অবশ্য দীর্ঘ দিন রবীন্দ্রনাথকে ‘বুর্জোয়া’ কবি বলে সরিয়ে রেখেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের সহজ পাঠ- কে শিক্ষাক্রম থেকে বাদ দেওয়া নিয়ে ঝড় উঠেছিল জ্যোতি বসুর আমলে। পরে অবশ্য তারা ‘ভুল’ স্বীকার করে। ঠিক যেমন সুভাষচন্দ্র বসুকে ‘তোজোর কুকুর’ বলে সমালোচনা করে দীর্ঘ দিন ব্রাত্য করে রেখেছিলেন কমিউনিস্টরা। এ ব্যাপারেও পরে ‘ভুল’ স্বীকার করেছেন জ্যোতিবাবু। ফরওয়ার্ড ব্লক ১৯৭৭ সালে প্রথম বামফ্রন্ট সরকারের আমল থেকেই মন্ত্রিসভার শরিক। কিন্তু ২৩ জানুয়ারি নেতাজি-মূর্তিতে মাল্যদান করার জন্য জ্যোতি বসুকে পাশে পেতে দীর্ঘ দিন অপেক্ষা করতে হয়েছে ফব নেতাদের। একই ভাবে রবীন্দ্রজয়ন্তীতে রবীন্দ্র সদনে কবির মূর্তিতে বুদ্ধবাবু মালা দিলেও জ্যোতিবাবু তা দিয়েছিলেন কি না, সন্দেহ রয়েছে। শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার জানান, বুদ্ধবাবুর মালা দেওয়ার বিষয়টি তাঁর মনে থাকলেও জ্যোতিবাবুর কথা তিনি মনে করতে পারছেন না। জ্যোতিবাবুর আমলে রবীন্দ্রনাথের ১২৫তম জন্মদিবসে রবীন্দ্র রচনাবলি প্রকাশিত হয়েছিল। পবিত্রবাবুর মতে, “কাউকে শ্রদ্ধা জানানোর অন্যতম উপায় তাঁকে মাল্যদান করা। দেরি হলেও বামফ্রন্টের এই কাজকে স্বাগত জানাই।”
রবিবার কার্ল মার্ক্সের মূর্তিতে বামফ্রন্টের রাজ্য নেতারা মালা দেওয়ার পরে সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদক মঞ্জুকুমার মজুমদার সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুকে বলেন, “ক’দিন পরেই পঁচিশে বৈশাখ। আমরা কি এই ভাবে একসঙ্গে রবীন্দ্রনাথকে মালা দিতে পারি না?” মঞ্জুবাবুকে সমর্থন করেন আরএসপি-র রাজ্য সম্পাদক ক্ষিতি গোস্বামী। তিনি জানান, মন্ত্রী থাকার সময়ে প্রতি বার তিনি রবীন্দ্রজয়ন্তীতে রবি ঠাকুরের গলায় মালা দিতেন। তবে তা সরকারি অনুষ্ঠানে। বামফ্রন্টের নেতা হিসাবে নয়। দুই বর্ষীয়ান বাম নেতার ওই প্রস্তাব শুনে বিমানবাবু জানান, তাঁর এ ব্যাপারে কোনও আপত্তি নেই। তিনি রাজি। কিন্তু কোথায়, কখন রবীন্দ্রনাথের গলায় মালা দেওয়া হবে? ওঠে সেই প্রশ্ন। আজ বামফ্রন্টের বৈঠকে সেই বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। মঞ্জুবাবু, ক্ষিতিবাবু, এমনকী সিপিএম নেতা রবীন দেব (তিনি রবিবার বিমানবাবুর সঙ্গেই ছিলেন) প্রত্যেকেই জানিয়েছেন, তাঁরা ব্যক্তিগত ভাবে রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন করেন।
রাজ্য বামফ্রন্টের নেতারা সমবেত ভাবে বছরে পাঁচ বার মাল্যদান করেন। এক বার লেনিনের জন্মদিন ও নভেম্বর বিপ্লবের দিন। দু’ বারই ধর্মতলায় লেনিন-মূর্তিতে মাল্যদান করা হয়। মার্ক্স ও নেতাজির জন্মদিনে তাঁদের মূর্তিতে মালা দেওয়া হয়। ৩১ অগস্ট খাদ্য আন্দোলনের শহিদ দিবসে সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে শহিদ-স্মৃতিতে মালা দেওয়া হয়। এ বার থেকে তালিকায় যুক্ত হতে চলেছে পঁচিশে বৈশাখ।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.