প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে জমি ছাড়তে নারাজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল। বুদ্ধবাবুর সভার ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই আজ, মঙ্গলবার উত্তর ২৪ পরগনার শ্যামনগরে পাল্টা সমাবেশের আয়োজন করছে তৃণমূল। স্বয়ং মমতা সেই সভায় থাকবেন কি না, তা অবশ্য এখনও স্পষ্ট করে বলেননি তৃণমূল নেতৃত্ব। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় সোমবার জানিয়েছেন, আজ শ্যামনগরের সভায় দলের রাজ্য নেতৃত্ব উপস্থিত থাকবেন।
বস্তুত, সারদা-কাণ্ডকে সামনে রেখে শাসক ও বিরোধীদের মধ্যে সভা-পাল্টা সভার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। শ্যামনগরে আজ পার্থবাবুরা যখন বুদ্ধবাবুদের বিরুদ্ধে সভা করবেন, প্রায় একই সময়ে শ্যামবাজারে সমাবেশ করবেন গৌতম দেবরা। তবে পুলিশ-প্রশাসন প্রথমে সম্মতি দিলেও শ্যামবাজারে বামেদের সভার অনুমতি তারা বাতিল করেছে। পুলিশের অনুমতি না-পেলেও আজ শ্যামবাজারে তাদের সভা হবেই বলে জানিয়েছে সিপিএম। রাজ্যে আর্থিক দুর্নীতি ও আইনশৃঙ্খলার অবনতির প্রতিবাদ জানাতে শ্যামবাজারে সভার পাশাপাশি আজ থেকেই কলেজ স্কোয়ারে দু’দিন ধরে বামেদের ছাত্র-যুব-মহিলাদের অবস্থানের কমর্সূচি রয়েছে।
শ্যামনগর-শ্যামবাজারে আজকের লড়াইয়ের সূত্রপাত হয়েছিল পানিহাটিতে বুদ্ধবাবু-গৌতমবাবুদের সভা থেকেই। পানিহাটিতে মমতাদের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছিলেন বুদ্ধ-গৌতম। চুপ করে বসে থাকেননি মমতাও। পানিহাটিতে পাল্টা সভা তো হয়েছেই, তার আগে শ্যামবাজারে বিশাল সমাবেশও করেন মমতা। শ্যামবাজার ও পানিহাটিতে তিনি একাই বক্তব্য রেখেছিলেন। তাঁর বক্তব্যের জেরে শ্যামনগরে গিয়ে বুদ্ধবাবু বলেছেন, তৃণমূল নেত্রীর ভাষা শুনলে তাঁর শরীর খারাপ লাগে। রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর এমন মন্তব্যের অব্যবহিত পরেই কড়া জবাব দেন শাসক দলের মহাসচিব তথা রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থবাবু। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে এ দিনও তিনি বলেন, “আবার দেখছি বুদ্ধবাবু লম্ফঝম্ফ শুরু করেছেন! বিধানসভায় আমাদের লক্ষ করে বলেছিলেন, বাংলা থেকে নির্মূল করে ছাড়ব! কেমন নির্মূল হয়েছি দেখুন! এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তৃতা শুনে ওঁর নাকি শরীর খারাপ লাগছে! আমরা চাই, আপনি সুস্থ থাকুন। কারণ আপনার মুখ বাংলার মানুষ যত দেখবেন, তত আমাদের সমর্থন বাড়বে।”
শ্যামনগরের অন্নপূর্ণা মাঠে বুদ্ধবাবুদের সভাস্থলেই আজ পাল্টা সভার আয়োজন করছে তৃণমূল। কিন্তু শ্যামবাজারের সভা নিয়ে এ দিন রাত পর্যন্ত যথেষ্ট জটিলতা রয়েছে। কলকাতা পুরসভার তৃণমূল বোর্ডের তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানের জন্য শ্যামবাজারের তিনটি জায়গায় সামিয়ানা টাঙিয়ে প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। ওই অনুষ্ঠানের কারণ দেখিয়েই পুলিশ বামেদের অনুমতি দেয়নি। সিপিএমের সিদ্ধান্ত, প্রথমে মঞ্চ বাঁধার চেষ্টা হবে। পুলিশ বাধা দিলে সন্ধ্যায় ম্যাটাডোর-মঞ্চ থেকে সভা করার চেষ্টা হবে। তাতেও বাধা এলে? দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য গৌতমবাবুর বক্তব্য, “দেখা যাক না! আমরা তো ওখানে সশস্ত্র সংগ্রাম করতে যাচ্ছি না!” সভা ঘিরে অশান্তি হোক, চাইছেন না কলকাতা জেলা বাম নেতৃত্বও।
রাজ্য জুড়ে টাকা নয়ছয় এবং সমাজবিরোধীদের দাপট নিয়ে বুদ্ধবাবু শ্যামনগরে যে অভিযোগ করেছিলেন, তার জবাবে এ দিন তপসিয়ায় তৃণমূল ভবনে বসে পার্থবাবুর পাল্টা টিপ্পনী, “উনি তো সমাজবিরোধী ক্লাবের অধিনায়ক! আর রাজ্যে চিট ফান্ডের রমরমা নিয়ে বুদ্ধবাবুরা গল্প বলছেন। কিন্তু কেন্দ্রের কোম্পানি বিষয়ক মন্ত্রী সচিন পায়লট যে ৭৩টি চিট ফান্ডের তালিকা দিয়েছেন, তার মধ্যে ২৬টিই হয়েছে বুদ্ধবাবুর আমলে।” সারদা-কাণ্ডে বুদ্ধবাবুর সিবিআই তদন্তের দাবির জবাবে কয়লা-কাণ্ড টেনে পাল্টা কটাক্ষ করেছেন পার্থবাবু। তাঁর কথায়, “সিবিআইয়ের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এখন কংগ্রেসের সুরে সুর মিলিয়ে সিপিএম-ও সিবিআই চাই বলে দাবি করছে। তাই মনে হচ্ছে, কয়লা-কাণ্ডে সিপিএম হাত ময়লা করেনি তো!” |