আস্থা অর্জনে শুরু প্রচার
গ্রামেগঞ্জে সারদা-কাণ্ডে জেরবার মাইক্রোফিনান্স
সুন্দরবনের একটি গ্রামে ক্ষুদ্র ঋণের টাকা ফেরত নিচ্ছিলেন মাইক্রোফিনান্স সংস্থার এক কর্মী। আচমকাই মুরুব্বি গোছের কয়েক জন ঘিরে ধরলেন তাঁকে। শুরু হল জেরা। কোন সংস্থা, কী করে টাকা ধার দেয় গোছের প্রশ্ন। এমনকী, এটা কোনও অর্থলগ্নি সংস্থা কি না, তা-ও জানতে চাইলেন গ্রামের ওই লোকেরা।
একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের জীবন বিমা পলিসি বিক্রি করেন আর একটি মাইক্রোফিনান্স সংস্থার কর্মীরা। আগে এক কথাতেই বিক্রি হত বিমা পলিসি। এখন হাজার প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে জেরবার কর্মীরা। এমনকী, ওই পলিসি আদৌ এই ব্যাঙ্কের কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন গ্রামের মানুষজন।
এ দু’টি নিছকই উদাহরণ। আদতে সারদা কাণ্ডের পর থেকে এমনই হাজারো সমস্যায় জেরবার হচ্ছে মাইক্রোফিনান্স সংস্থা। যার কারণ, গ্রামেগঞ্জে গজিয়ে ওঠা লগ্নি সংস্থাগুলি, যার মধ্যে অনেকে ‘মাইক্রোফিনান্স’ নাম নিয়েও টাকা তুলেছেন বলে অভিযোগ। যদিও এ নিয়ে এখনও তাঁদের তরফে সরকারি ভাবে কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি বলে মাইক্রোফিনান্সের কর্তারা জানান।
কেন এই সমস্যা? মাইক্রোফিনান্স বিশেষজ্ঞদের মতে, গ্রামেগঞ্জে সাধারণ লগ্নি সংস্থার সঙ্গে মাইক্রোফিনান্সের পার্থক্যটাই অনেকে বোঝেন না। মাইক্রোফিনান্সের ব্যবসা মূলত গ্রামে ছোট ছোট ঋণ দেওয়া। যেখানে ব্যাঙ্ক পরিষেবা পৌঁছতে পারেনি বা ব্যাঙ্ক থেকে ক্ষুদ্র পরিমাণের ঋণ মেলে না, সেখানেই এই সব সংস্থা ব্যবসা করে। গ্রামীণ অর্থনীতিতে এর বড় প্রভাব রয়েছে। মাইক্রোফিনান্সের সঙ্গে যুক্ত এক কর্তার কথায়, “কোনও গরিব মানুষ বলদ কেনা বা মেয়ের বিয়ের জন্য এই সব সংস্থা থেকেই ঋণ নেন। এই ছোট ঋণ নিয়ে গ্রামের বহু মানুষ, বিশেষ করে মহিলারা, স্বনির্ভর হয়েছেন।” গ্রামবাসীকে মহাজনদের হাত থেকে বাঁচাতে এই সব সংস্থার গুরুত্ব রয়েছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদেরাও। মাইক্রোফিনান্স সংস্থাগুলির সর্বভারতীয় সংগঠন মাইক্রোফিনান্স ইনস্টিটিউট নেটওয়ার্ক (এমফিন)-এর সিইও অলোক প্রসাদ বলেন, “মাইক্রোফিনান্স ক্ষুদ্র ঋণ দেয়। কিন্তু মানুষের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করে না।” এ নিয়ে প্রচারেও নেমেছেন তাঁরা।
কী ভাবে ঋণ দেয় এই সংস্থাগুলি? মাইক্রোফিনান্সের সঙ্গে যুক্ত এক বিশেষজ্ঞ জানান, সাধারণত মাইক্রোফিনান্স ৫০ হাজার টাকার বেশি ঋণ দিতে পারে না। তবে এ ধরনের সংস্থা থেকে লোকে গড়ে ৯-১০ হাজার টাকা ঋণ-ই বেশি নেয়। এবং এই ঋণের টাকা বেশ কিছুটা চড়া সুদে ফেরত দিতে হয় ঋণগ্রহীতাকে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নিয়ম অনুযায়ী, কোনও মাইক্রোফিনান্স সংস্থা বার্ষিক ২৬%- এর বেশি সুদ নিতে পারবে না। রাজ্যের সংস্থাগুলি গড়ে বার্ষিক ২০-২২ % হারে সুদ নেয়।
এত বেশি সুদ নেওয়া হয় কেন? মাইক্রোফিনান্সের কর্তারা জানান, তাঁরা বিভিন্ন ব্যাঙ্কের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে তাঁদের গ্রাহকদের দেন। এর ফলে ওই ব্যাঙ্কের কাছে বার্ষিক ১৬-১৮% হারে ঋণ গুণতে হয় সংস্থাগুলির। এর পরে থাকে নিজেদের লাভের অংশ। তাই একটু বেশি হারেই সুদ নেওয়া হয় বলে ওই কর্তাদের দাবি। এই ধরনের সংস্থাগুলিতে কী ভাবে টাকা শোধ করতে হয়?
একটি মাইক্রোফিনান্স সংস্থার কর্তা চন্দ্রশেখর ঘোষ বলেন, “ঋণ শোধের বিষয়টি গ্রহীতার পেশার উপরে নির্ভর করে। কোনও রিকশাচালকের ক্ষেত্রে শোধের সময়সীমা এক, আবার ছোট মাপের সব্জি বিক্রেতার ক্ষেত্রে তা আর এক রকম। তবে সাধারণত, বছর দু’-তিনেকের মধ্যেই পুরো টাকা শোধ করার ব্যবস্থা করা হয়। অনেক সময়ই ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে এজেন্টরা দৈনিক টাকা সংগ্রহ করে আনে।”
কী রকম? ধরা যাক কেউ বার্ষিক ২০% সুদে ৯০০০ টাকা ঋণ নিয়েছেন। শুধবেন দু’বছরে। সুদ-সহ ১০৮০০ টাকা ফেরাতে হবে। এ বার ১০৮০০ টাকাকে ২৪ মাস দিয়ে ভাগ করা হবে। তবে প্রতি মাসের ফেরতযোগ্য টাকার পরিমাণ বেরোবে (৪৫০ টাকা)। এ বার প্রতি মাসের টাকাকে ৩০ দিয়ে ভাগ করলে (এক মাস: ৩০ দিন ধরে) দেখা যাবে, প্রতিদিন ওই ব্যক্তিকে ১৫ টাকা দিতে হচ্ছে।
তবে বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, এই বেশি সুদের হারের ফলেই মাইক্রোফিনান্সের সঙ্গে লগ্নি সংস্থাকে গুলিয়েছেন মানুষ। রাজ্যে যার বেশি প্রভাব না পড়লেও বিহার-অসমে পড়ছে বলেই মাইক্রোফিনান্স সংস্থার কর্তারা জানান। চন্দ্রশেখরবাবু বলেন, “অসমের গোলাঘাটায় স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশে আমাদের আরও একটি অফিসে পুলিশ তালা ঝুলিয়েছে। বিহারেও সমস্যায় পড়তে হয়েছে। তবে মাইক্রোফিনান্সের সমস্যা কাটাতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক উদ্যোগী হয়েছে।” মাইক্রোফিনান্স সংস্থার কর্তারা জানান, ২০১০ থেকে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ওই ধরনের সংস্থাগুলিকে ‘নন ব্যাঙ্কিং ফিনান্সিয়াল কোম্পানি’-র আওতায় এনেছে। রাজ্যে ২৫টিরও বেশি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক স্বীকৃত মাইক্রোফিনান্স সংস্থা রয়েছে। এর বাইরে আরও কয়েকটি সংস্থা নিজেদের ‘মাইক্রোফিনান্স’ বলে দাবি করে ব্যবসা করছে। অভিযোগ, সরকার এত দিন সেগুলির স্বীকৃতি খতিয়ে দেখার প্রয়োজন বোধ করেনি। যোজনা কমিশনের সদস্য কপিল মণ্ডল বলছেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরেই এই ধরনের সংস্থার ব্যাপারে সরকারি হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.