সারদার নতুন সম্পত্তির হদিস মিলল হাসনাবাদে।
২০০৩ সাল নাগাদ হাসনাবাদের আমলানির পালপাড়ায় ১২ বিঘে জমি খুব অল্প দামে কিনেছিল ‘অগ্রদূত অ্যাগ্রো প্রাইভেট লিমিটেড’ নামে একটি সংস্থা। সে জন্য একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের হাতিবাগান শাখা থেকে ২ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা ঋণ নেয় তারা। পরে তা শোধ করতে পারেনি। ওই সম্পত্তি ক্রোক করে নিলামে তোলে ব্যাঙ্ক। যৌথ ভাবে তা কিনে নেয় ‘সারদা রিয়্যালিটি ইন্ডাস্ট্রিস’ ও ‘সারদা কনস্ট্রাকশনস প্রাইভেট লিমিটেড’ নামে দুই সংস্থা।
অগ্রদূত অ্যাগ্রো প্রাইভেট লিমিটেডের তরফে স্থানীয় মানুষকে সে সময়ে বোঝানো হয়েছিল, ওই কারখানায় ডাবের জল প্যাকেট-বন্দি করে বিক্রির ব্যবস্থা হবে। ২০০৩ সালের ১১ জুলাই ঘটা করে কারখানার উদ্বোধনও হয়। মাস চারেক ধরে সেখানে জ্যাম-জেলি-আচার বানানোর কাজ চলে। জনা তিরিশ কর্মী কাজ পেয়েছিলেন। চার মাস পরে ইউনিট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্থানীয় মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ছড়ায়। এলাকার অনেককে চাকরি দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ওই সংস্থাটি। পরের দফায় সাত-আট মাস বাদে ফের মাস দু’য়েকের জন্য কারখানা খুলেছিল। কিন্তু তারপরে পাকাপাকি ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যায়। প্রকল্পের ইট-কাঠ-দরজা-জানলা খুলে নিয়ে যাওয়া শুরু করেন গ্রামবাসীরা। তাঁদের দাবি, এক বার গাড়ি নিয়ে এসে কম্পিউটার-সহ কিছু জিনিস নিয়ে যেতে পেরেছিল সংস্থার লোকজন। কিন্তু বাকিটা সবই চুরি-ছিনতাই হয়ে গিয়েছে। আপাতত বিশাল প্রকল্প এলাকা খাঁ খাঁ করছে। কালীপদ ঘোষ নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা আচার তৈরির কাজ পেয়েছিলেন সংস্থায়। তিনি আপাতত ইটভাটার শ্রমিক। বললেন, “কারখানা নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলেন আমার মতো এলাকার অনেকে। কিন্তু সে সব কিছুই হল না।”
ঋণ না মেটানোয় পরে সংস্থার সম্পত্তি ক্রোক করে ব্যাঙ্ক। ২০১১ সালের নভেম্বর মাসে তা কিনে নেয় সারদা। নতুন সাইনবোর্ড লাগানো হয়। এলাকার লোকজনকে বলা হয়, ওই জমিতে নানা প্রকল্প গড়ে তোলা হবে। জনা ছ’য়েক নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দা অলোক মণ্ডল জানান, সারদা সে সময়ে নোটিশ টাঙিয়ে বলেছিল, জমি-সংক্রান্ত বিতর্ক থাকলে সংস্থার অফিসে গিয়ে যোগাযোগ করতে। কিছু দিন যাওয়ার পরেই মানুষ বুঝে যান, গোটাটাই ভাঁওতা। কোনও উৎপাদনই হবে না সেখান থেকে। সেই সদিচ্ছাই নেই নতুন সংস্থার। পাহারাদারেরাও কোনও বকেয়া পাননি।
টাকির পুরপ্রধান সোমনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমরা প্রশাসনকে বলেছি, সারদার এই সম্পত্তি অবিলম্বে নিলামে তোলা হোক। স্থানীয় মানুষের যদি কিছু বকেয়া থেকে থাকে, তবে তা-ও মেটানো হোক ওই টাকায়। আমানতকারীদেরও বকেয়া মেটানো যেতে পারে ওই টাকায়।”
সিবিআই তদন্তের দাবি। সারদা কাণ্ডে সিবিআই তদন্তে চেয়ে হুগলিতে প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দিল বিজেপি। সোমবার জেলার চারটি মহকুমায় বিক্ষোভ কর্মসূচি নিয়েছিল বিজেপি। বিক্ষোভের পরে স্মারকলিপি দেওয়া হয় সংশ্লিষ্ট মহকুমাশাসকদের। সিবিআইয়ের হাতে তদন্তভার তুলে দেওয়ার পাশাপাশি আন্দোলনকারীদের আরও দাবি, সাংসদ কুণাল ঘোষকে গ্রেফতার করতে হবে। আমানতকারীদের টাকা দ্রুত ফেরানোর ব্যবস্থা করতে হবে রাজ্য সরকারকে। বিজেপির হুগলি জেলা সাধারণ সম্পাদক স্বপন পাল বলেন, “টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণার পরে এ ব্যাপারে সরকারের সেই তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।” কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক রবীন চট্ট্যোপাধ্যায়। |