অপমানে আত্মঘাতী
ঝাঁটা-চটি দিয়ে মার এজেন্টের বৃদ্ধ বাবাকে
বিদ্যুতের খুঁটিতে নাইলনের দড়ি দিয়ে বাঁধা হয়েছে ৬৫ বছরের বৃদ্ধকে। তাঁকে ঘিরে উত্তেজিত জনতা। বেশির ভাগই মহিলা। কারও হাতে চটি, কারও বা ঝাঁটা। উন্মত্তের মতো বৃদ্ধকে মেরে চলেছেন তাঁরা। হাতজোড় করে মাফ চাইবার চেষ্টা করছেন বৃদ্ধ। কিন্তু তাঁর অনুনয় চাপা পড়ে যাচ্ছে সমবেত গালাগালিতে।
বৃদ্ধের ‘অপরাধ’ তিনি একটি সদ্য বন্ধ হয়ে যাওয়া অর্থলগ্নি সংস্থার এজেন্টের বাবা! ছেলেকে না পেয়ে আমানতকারীরা পেয়েছেন বাবাকেই। রবিবার বিকেলে সোদপুরের নাটাগড়ের ঋষি বঙ্কিমগড়ে ঘণ্টা খানেক ধরে চলেছে হেনস্থার এই পর্ব। সোমবার সকালে বৃদ্ধ জগদীশ রায়ের গলায় ফাঁস লাগানো ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তদন্তকারীদের অনুমান, অপমান সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেন জগদীশবাবু। তাঁকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে সোমবার রাতে তিন মহিলা গ্রেফতার হয়েছেন। তিন জনই জগদীশবাবুর প্রতিবেশী বলে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন।
জগদীশবাবু এলাকারই একটি কটন মিলে কাজ করতেন। কিছু দিন আগে অবসর নিয়েছিলেন। ছেলে বিধান অ্যানেক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার নামের একটি অর্থলগ্নি সংস্থার বড় মাপের এজেন্ট। পুলিশ জানায়, সংস্থার এই এলাকার অফিসটির দায়িত্বে ছিলেন বিধান। প্রতিবেশী থেকে শুরু করে আশপাশের এলাকার বহু মানুষের থেকে আমানত সংগ্রহ করতেন তিনি। বেলঘরিয়ার এডিসি বিশ্বজিৎ ঘোষ জানান, ৩০ মার্চ সংস্থাটি লাটে ওঠে। গ্রেফতার হন সংস্থা-মালিক প্রসেনজিৎ মজুমদার। গ্রেফতার হন বিধানও। গত কালই জামিন পেয়েছেন তিনি।
অঙ্কন: সুমন চৌধুরী
এলাকার বাসিন্দারা জানান, গত কয়েক দিন ধরেই বহু আমানতকারী টাকা ফেরত চেয়ে বিধানদের বাড়িতে চড়াও হচ্ছিলেন। বিধান টাকা ফেরত না দিতে পারলে বাবা-মাকে বাড়ি-জমি-গয়না বিক্রি করে টাকার ব্যবস্থা করতে হবে বলে হুমকি দিচ্ছিলেন তাঁরা। জগদীশবাবুর ছোট ছেলে সুরেন বলেন, “মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে আমার মা শুক্রবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে খড়দহের বলরাম বসু স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। রবিবার বিকেল পাঁচটা নাগাদ মাকে রাতের খাবার পৌঁছে দিতে হাসপাতালে যাচ্ছিলেন বাবা। ওই সময়েই তাঁকে ঘিরে ধরেন আমানতকারীরা। বেশির ভাগই আমাদেরই পড়শি।” সুরেন জানান, জগদীশবাবু তাঁদের অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেন যে, বিধান কোথায় আছে তা তিনি জানেন না। কিন্তু কেউ সে কথায় কান দেয়নি। সুরেনের অভিযোগ, “আমাদের প্রতিবেশীদের কয়েক জন যে এমন আচরণ করবে, ভাবতেই পারিনি। ওরাই নাইলনের দড়ি এনে বাবাকে রাস্তার বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে ফেলে।” এর পরেই শুরু হয় মার। সুরেন বলেন, “বাঁধা অবস্থায় বাবা হাতজোড় করার চেষ্টা করছেন। দাদার হয়ে ক্ষমা চাইছেন আর বলছেন, আমার যা আছে, সব নিন। আর ওরা তত গালাগাল দিচ্ছে। ঝাঁটা আর চটি দিয়ে বাবাকে সমানে মারছে। মায়ের নামে নোংরা কথা বলছে। আমি, আমার স্ত্রী কেউ-ই ওদের মারের হাত থেকে রেহাই পাইনি।”
শোকার্ত। জগদীশ রায়ের ছোট ছেলে সুরেন। —নিজস্ব চিত্র
সুরেন জানিয়েছেন, বিকেল পাঁচটা থেকে ছ’টা পর্যন্ত এই হেনস্থা চলে। স্ত্রীর জন্য আর হাসপাতালে খাবার নিয়ে যেতে পারেননি জগদীশবাবু। সন্ধে বেলা একদল লোক ঢুকে পড়ে বাড়িতে। ভাঙচুর করে, আলমারি খুলে সর্বস্ব নিয়ে যায় তারা। এর পরেও হেনস্থা বন্ধ হয়নি। সুরেন জানান, রাতে আরও কিছু আমানতকারী বিধানের খোঁজে বাড়িতে চড়াও হন। তাঁরাও জগদীশবাবুকে হুমকি দেন, টাকা ফেরত না পেলে ‘গলায় ফাঁস লটকে’ মারা হবে।
পাড়া-প্রতিবেশীর হাতে এ ভাবে অপমানিত হতে হবে, ভাবতেই পারেননি জগদীশবাবু। সুরেনবাবু বলেন, “অনেক রাত পর্যন্ত জেগে ছিলাম। বাবা কোনও কথা বলেননি। চুপ করে বসে ছিলেন। রাতে কিছু খানওনি। ভোর বেলায় আমাদের চোখ একটু লেগে এসেছিল। ওই সময়ে বাবা চিলেকোঠার ঘরে গিয়ে গলায় দড়ি দেন। আমরাই পুলিশকে খবর দিই।”
সোমবার রাতে পুলিশ আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে বন্দনা ঘোষ, সোমা দত্ত এবং সুমিত্রা বিশ্বাস নামের তিন জনকে গ্রেফতার করেছে। প্রতিবেশী হয়েও তাঁরা কেন এমন হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে জগদীশবাবুর উপরে হামলা চালালেন, তা জানতে চাওয়া হলে বন্দনা বলেন, “আমরা টাকা চাইতে গিয়েছিলাম ঠিকই। কিন্তু আমি মারধর করিনি। এই ঘটনা ঘটবে কে জানত? আমার মায়ের ক্যানসার। দু’লক্ষ টাকা বিধানের কাছে জমা রেখেছিলাম। এখন মায়ের চিকিৎসার কী হবে!”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.