|
|
|
|
একশো দিনের কাজ গড়ে
তিরিশেই আটকে পশ্চিমে |
বরুণ দে • মেদিনীপুর |
একশো দিনের প্রকল্পে আশানুরূপ সাফল্য মিলছে না পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায়। ২০১১-’১২ আর্থিক বছরে একশো দিনের কাজ প্রকল্পে মানুষ গড়ে কাজ পেয়েছিলেন ২৮ দিন। পরের আর্থিক বছরে তা আটকে রইল ৩০ দিনেই।
প্রকল্পে গতি ফেরাতে এক সময় তৎপর হয়েছিল জেলা প্রশাসন। জেলাস্তরে বৈঠক হয়, বিডিওদের প্রয়োজনীয় নির্দেশও দেওয়া হয়। তাও প্রত্যাশিত লক্ষ্যে পৌঁছনো গেল না। অথচ, ২০১০-’১১ আর্থিক বছরে মানুষ গড়ে কাজ পেয়েছিলেন ৩৫ দিন। এ বার কেন তা হল না? জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক মানছেন, “আর একটু কাজের গতি বাড়ানো গেলে ভালো হত। আসলে কিছু সমস্যা রয়েছে। তা সমাধানের চেষ্টা চলছে।” সমস্যাগুলো কী? ওই আধিকারিকের কথায়, “রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক, দু’টোই। সকলকেই আরও উদ্যোগী হতে হবে। সময়ের কাজ সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে। চলতি আর্থিক বছরে যাতে এই প্রকল্পের কাজে আরও সাফল্য আসে, তার চেষ্টা চলছে।”
জেলা প্রশাসনের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যাচ্ছে, গত আর্থিক বছরে, অর্থাৎ ২০১২ সালের এপ্রিল থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত একশো দিনের প্রকল্পে জেলায় মোট ২২ হাজার ৮২টি প্রকল্পের কাজ হয়েছে। আরও ২০ হাজার ৬৯৩টি প্রকল্পের কাজ চলছে। পশ্চিম মেদিনীপুরে ১১ লক্ষ ৬৮ হাজার পরিবার রয়েছে। এর মধ্যে বিপিএল তালিকাভুক্ত ৫ লক্ষ ৯ হাজার (৪৪.৫৩ শতাংশ)। যাঁদের কাছে জব কার্ড রয়েছে, তাঁদের মধ্যে ৫৪ শতাংশ মানুষই কাজ চেয়ে আবেদন করেছিলেন। সেই মতো তাঁদের কাজ দেওয়া হয়। জেলার ৯ হাজার ২৬১টি পরিবারকে ১০০ দিন করেই কাজ দেওয়া সম্ভব হয়েছে। |
|
ডেবরার রাধামোহনপুরে চলছে কাজ। —নিজস্ব চিত্র। |
একশো দিনের কাজ প্রকল্প শুরু হয় ২০০৬-’০৭ আর্থিক বছরে। তখন মানুষ গড়ে কাজ পেয়েছিলেন ১৬ দিন। পরের দুই আর্থিক বছরে যথাক্রমে ২৪ এবং ২৭ দিন করে কাজ পেয়েছেন। অর্থাৎ, প্রকল্পে সাফল্য মিলছিল। ২০০৯-’১০ আর্থিক বছরে এ জেলা একশো দিনের প্রকল্পে ‘রেকর্ড’ করে। তখন মানুষ গড়ে কাজ পেয়েছিলেন ৫২ দিন। তার পরের দুই আর্থিক বছরে যথাক্রমে ৩৫ এবং ২৮ দিন করে কাজ পেলেন। রাজ্যে পালাবদলের পর অনান্য জেলার মতো এ জেলাও প্রকল্পের গতি একেবারে শ্লথ হয়ে পড়ে। কিছু গ্রাম পঞ্চায়েতে অচলাবস্থা দেখা দেয়। পরিস্থিতি দেখে জেলাস্তরে বৈঠক হয়। বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলোর কাজে সহযোগিতার অনুরোধ জানানো হয়। তারপর ফের ওই গ্রাম পঞ্চায়েতগুলোয় কাজ শুরু হয়।
বিগত আর্থিক বছরে জেলায় তেমন কোনও সমস্যা ছিল না। তাহলে কেন একশো দিনের প্রকল্পের কাজ ৩০ দিনেই আটকে থাকল? এ প্রশ্নেই তৃণমূল সরকারকে বিঁধতে শুরু করেছে বিরোধীরা। জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা সিপিএম নেত্রী অন্তরা ভট্টাচার্যের দাবি, একশো দিনের প্রকল্পে বামফ্রন্ট সরকারের আমলে জেলায় ভালো কাজ হয়েছিল। রাজ্যে পরিবর্তনের পরপরই কাজের গতি কমে। তাঁর কটাক্ষ, “আসলে এই সরকারের কাজের পরিকল্পনা নেই। শুধু মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। গত মার্চে মুখ্যমন্ত্রী বিনপুরে এসে বলে গেলেন, ‘জঙ্গলমহলে ১০০ দিনের কাজ ১০০ দিন হয়ে গিয়েছে’। পরিসংখ্যান কী তাই বলছে!” রাজনৈতিক মহল মনে করছে, সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। একশো দিনের প্রকল্পে যেহেতু গ্রামের একটা বড় অংশের মানুষ যুক্ত তাই প্রকল্পের ব্যর্থতা নিয়ে জনমত গড়ার চেষ্টা করছে সিপিএম। তবে পাল্টা বিঁধতে ছাড়ছে না তৃণমূলও। তাদের অভিযোগ, বামফ্রন্ট আমলেই প্রকল্পে দুর্নীতি হয়েছে, এখন সে পরিস্থিতি নেই। মেদিনীপুরের বিধায়ক তথা জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান মৃগেন মাইতির দাবি, এখন প্রকল্পে স্বচ্ছতা এসেছে। আগে বহু অস্বচ্ছতা, কারচুপি-দুর্নীতি হয়েছে। তাঁর কথায়, “ওদের মুখে সাফল্যের কথা মানায় না। কিছু সমস্যা রয়েছে, কিন্তু তার মধ্যেও একশো দিনের কাজ ভাল ভাবে এগোচ্ছে।” |
|
|
|
|
|