|
|
|
|
সঙ্কটে শিশুশিক্ষা ও মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্র |
আড়াই মাসেও হয়নি নয়া প্রশাসনিক কমিটি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
সরকারি নির্দেশে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসেই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ভেঙে গিয়েছে শিশু-শিক্ষা কেন্দ্র ও মাধ্যমিক-শিক্ষা কেন্দ্রের প্রশাসনিক কমিটি। এরপর পেরিয়ে গিয়েছে আড়াই মাস। এখনও নতুন কমিটিই তৈরি করতে পারেনি প্রশাসন। ফলে কোথাও ভেঙে যাওয়া কমিটিই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে, আবার কোথাও কেবলমাত্র বৈধ সাক্ষরকারী বদল করে আর্থিক লেনদেন করা হচ্ছে।
এ নিয়ে ভবিষ্যতে জটিলতা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রধান সহায়িকা ও মুখ্য সম্প্রসারকরদের। তা নিয়ে প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েও কিছু হয়নি বলে অভিযোগ। সদ্য জেলায় যোগ দেওয়া অতিরিক্ত জেলাশাসক (পঞ্চায়েত) পাপিয়া ঘোষ রায়চৌধুরী বলেন, “বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব। যাতে দ্রুত কমিটি তৈরির কাজ করা যায়, সে ব্যাপারে পদক্ষেপ করা হবে।”
আগে শিশু-শিক্ষা কেন্দ্র (এসএসকে) হোক বা মাধ্যমিক-শিক্ষা কেন্দ্র (এমএসকে) দু’টি ক্ষেত্রেই ৯ জনের কমিটি ছিল। এর মধ্যে ৭ জন অভিভাবক প্রতিনিধি, বাকি দু’জনের মধ্যে একজন স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য ও একজন শিক্ষানুরাগী। শিক্ষানুরাগী সদস্য মনোনীত করতেন সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি। তাঁদের মধ্যে থেকে একজনকে সম্পাদক করা হত। এসএসকে-র ক্ষেত্রে সম্পাদক ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষা কেন্দ্রের প্রধান সহায়ক বা সহায়িকা আর এমএসকে-র ক্ষেত্রে সম্পাদকের সঙ্গে মুখ্য সম্প্রসারক বা সম্প্রসারিকার থাকত সই করার ক্ষমতা। চলতি বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি পঞ্চায়েত ও গ্রামীণ উন্নয়ন দফতরের এক নির্দেশ বলে সেই কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। কী ভাবে নতুন কমিটি তৈরি হবে সে কথাও বলা রয়েছে সেখানে। নির্দেশিকা অনুযায়ী, কমিটিতে ৫ জন সদস্য থাকবেন। তাঁরা হলেন, বিডিও বা বিডিও-র প্রতিনিধি, সংশ্লিষ্ট এলাকার বিধায়ক বা তাঁর প্রতিনিধি, স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য। যদি দু’জন পঞ্চায়েত সদস্য থাকেন তা হলে যিনি প্রবীণ তাঁকে নিতে হবে, একজন অভিভাবক প্রতিনিধি, তিনিও বিধায়কের মনোনীত হবেন। আর থাকবেন সংশ্লিষ্ট এসএসকে-র প্রধান সহায়ক/সহায়িকা বা এমএসকে-র মুখ্য সম্প্রসারক/সম্প্রসারিকা। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে যুগ্ম সাক্ষর থাকবে বিডিও বা তাঁর প্রতিনিধি ও শিক্ষাকেন্দ্রের সদস্যের।
পশ্চিম মেদিনীপুরে এমএসকের সংখ্যা ২৩২, এসএসকে রয়েছে ২৪৫৯টি। প্রশাসন সূত্রে খবর, এখন পর্যন্ত কোনও কেন্দ্রেই প্রশাসনিক কমিটি তৈরি হয়নি। হলেও জেলায় আসেনি। তা মানছেন নিখিলবঙ্গ মাধ্যমিক শিক্ষা সম্প্রসারক সমিতির পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক অঞ্জনকুমার দে। তিনি সাঁকরাইল ব্লকের বৈঁচা এমএসকে-র মুখ্য সম্প্রসারক। তাঁর কথায়, “আমরা পুরনো কমিটি দিয়েই কাজ করছি। নতুন কমিটি তৈরি না হলে আর কী করতে পারি।” কমিটির কাজ কী? মিড ডে মিলের হিসেবপত্র দেখে কমিটি। তারা হিসাব ঠিক জানানোর পরই সাক্ষরকারীরা টাকা তুলতে পারেন। কর্মীদের সাম্মানিকও ওঠে কমিটির দুই বৈধ সাক্ষরকারীর সইয়ে। এ ছাড়া শিক্ষা কেন্দ্রের উন্নয়ন পরিকল্পনা, নিময়িত তা চলছে কিনা তা দেখার দায়িত্বও কমিটির।
প্রশাসন সূত্রে খবর, কমিটি তৈরি না হওয়ার খবর পৌঁছেছে রাজ্য প্রশাসনের কাছেও। পঞ্চায়েত দফতর থেকে ৩ এপ্রিল চিঠি পাঠানো হয় জেলাগুলিতে। তাতে বলা হয়, শিক্ষা কেন্দ্রগুলি চালাতেই এই কমিটি গড়া। যদি কোনও কমিটি কাজ করতে না পারে তা হলে যেন বিডিও বা তাঁর প্রতিনিধি আহ্বায়ক সদস্যের ভূমিকা পালন করে শিক্ষা কেন্দ্র পরিচালনার ব্যবস্থা করেন। তারপরেও সম্পূর্ণ কমিটি তৈরি করা যায়নি কেন? বিডিওদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, তাঁরা নিজেদের প্রতিনিধি ঠিক করেছেন। কিন্তু বিধায়ক প্রতিনিধি বা বিধায়কের মনোনীত অভিভাবক প্রতিনিধি, পঞ্চায়েত সদস্য- এ সব ঠিক করার সময় কখন পাবেন? এক বিডিও-র কথায়, “সব কাজ বিডিও-র ঘাড়ে চাপিয়ে সবাই নিশ্চিন্ত হতে চাইছেন। বিডিও-রা কী এ বার এসএসকে, এমএমসকেও চালাবে।” তাই কোথাও সামান্য কিছু কাজ এগোলেও কমিটি হয়নি। যেমন চন্দ্রকোনা ৩ ব্লকের বিলা এসএসকের প্রশাসনিক কমিটি তৈরি না হলেও সাক্ষরকারী পরিবর্তন হয়েছে। পঞ্চায়েতের সচিব ও প্রধান সহায়িকাকে সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রধান সহায়িকা মৌসুমি মুখোপাধ্যায় বলেন, “সাক্ষরকারী পরিবর্তন হয়েছে ঠিকই, কিন্তু কমিটি না হওয়ায় চিন্তায় আছি। যাবতীয় হিসাব কমিটি মঞ্জুর করার পরেই টাকা তোলা হয়। এ ক্ষেত্রে তা হচ্ছে না। পরে নতুন কমিটি তো প্রশ্ন তুলতেই পারে। তখন কী জবাব দেব।”
কিন্তু, সরকারি নির্দেশ বলে তো পুরনো কমিটি অবৈধ। তা নিয়ে পরে প্রশ্ন উঠলে? সংগঠনের সম্পাদক অঞ্জনবাবুর কথায়, “সমস্যা হতে পারে বলেই তো প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়েছি। ফের জানাব। না হলে পরে আমাদেরই সমস্যায় পড়তে হবে।” |
|
|
|
|
|