|
|
|
|
১০ বছর ধরে উঠোনে শিকল বন্দি রবিন |
আনন্দ মণ্ডল • তমলুক |
জন্ম থেকেই রুগণ্ ছেলেটি ঠিক মতো কথা বলতে পারত না। যত বড় হয়েছে মানসিক জড়ত্ব ততই বেড়েছে। মাঝে-মধ্যে নজর এড়িয়ে পালিয়ে যেত আশপাশের গ্রামে। খোঁজাখুঁজি করে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে আসতে কালঘাম ছুটত বাড়ির লোকজনের। বাগে রাখতে তাই বছর দশেক আগে পায়ে শিকল পরিয়েছিলেন বাড়ির লোকেরা। তারপর থেকেই বাড়ির উঠোনে শিকল বন্দি ৩১ বছরের রবিন ডোগরা। পূর্ব মেদিনীপুরের মেচেদার শান্তিপুর গ্রামে হলদিয়াগামী রাজ্য সড়কের ধারে তাঁর বাড়ি।
রবিনের বাবা অচ্যুতানন্দন ডোগরা রেলে চাকরি করতেন। বছর ষোলো আগে তিনি মারা যান। বৃদ্ধা মা কমলা ডোগরা জানান, পাঁচ মেয়ে ও দুই ছেলের মধ্যে বড় অখিল মারা গিয়েছেন। বড় বৌমা, দুই নাতনি ও ছোট ছেলে রবিনকে নিয়ে পাঁচ জনের পরিবার। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বড় ছেলের মৃত্যুর পর বৌমা রেলে চাকরি পেয়েছেন। আর আছে বলতে স্বামীর সামান্য পেনশন।
বাড়ির সামনে একটি উঁচু বেদীর উপর শিকল পায়ে নির্লিপ্ত ভাবে বসে ছিলেন রবিন। মাঝে-মধ্যে ইশারায় কিছু বলার চেষ্টা করছেন মা-কে। ছেলের পায়ে শিকল বাঁধলেন কেন? কমলাদেবী বলেন, “পালিয়ে যেত যে। বহুবার ওকে খুঁজতে গিয়ে হয়রানির শিকার হয়েছি। কখনও আবার অচেনা গ্রামের লোকজন চোর-ডাকাত ভেবে ওকে আটকে রেখেছে। বহু কষ্টে বুঝিয়ে উদ্ধার করে এনেছি। বাধ্য হয়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছি। রাতে খুলে দিই। আমার কাছেই শোয়।”
|
|
এভাবেই কাটছে দিন। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস। |
১৪ বছর আগে ৬৫ শতাংশ মানসিক জড়তা সম্পন্ন হিসেবে শংসাপত্র দেওয়া হয়েছিল রবিনকে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অলক পাত্রের মতে, ৬৫ শতাংশ মানসিক প্রতিবন্ধকতায় পায়ে শিকল পরানোর দরকার পড়ে না। তিনি বলেন, “এ ক্ষেত্রে মানসিক জড়ত্ব থাকবে। কিন্তু চিকিৎসার পাশাপাশি এদের হাতের কাজ শেখালে উপকার পাওয়া যায়। ছোটখাটো কাজে ব্যস্ত থাকলে পালানোর প্রবণতাও বন্ধ হয়ে যায়।”
পরিবারের লোকেরা অবশ্য জানিয়েছেন, সাধ্য মতো চিকিৎসা করিয়েও লাভ হয়নি। কমলাদেবী বলেন, “ছেলের পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখতে আমারও খারাপ লাগে। কিন্তু ও পালিয়ে গিয়ে নিজেও বিপদে পড়বে, আমাদেরও বিপদ ডেকে আনবে। বাধ্য হয়েই এই ব্যবস্থা। সরকারি ভাবে প্রতিবন্ধী কার্ড পেলেও সুযোগ-সুবিধা মেলেনি। পঞ্চায়েতে গিয়েছিলাম। ওরা সাহায্য করেনি।”
শান্তিপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধান পঞ্চানন দাস অবশ্য বলেন, “এই বিষয়ে আমার জানা ছিল না। আপনাদের কাছেই প্রথম জানলাম। খোঁজ নিয়ে দেখব। যদি সাহায্যের প্রয়োজন হয় অবশ্যই সাহায্য করা হবে।” স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য অমৃত মণ্ডলের বক্তব্য, “রবিনের মানসিক প্রতিবন্ধকতার কথা জানি। ওর চিকিৎসা চলছিল। মানসিক অবস্থা আগের চেয়ে আরও খারাপ হয়েছে। কিন্তু ওকে শেকল দিয়ে বেঁধে রাখার কথা আমার জানা নেই।” জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তপনকুমার দাসও “কিছু জানা নেই” বলে দায় সেরেছেন। |
|
|
|
|
|