|
|
|
|
দুষ্কৃতীরাজ নিয়ে রাজ্যকে চিঠি রাজ্যপালের |
জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় • হলদিয়া |
হলদিয়ায় দুষ্কৃতী তাণ্ডব নিয়ে উদ্বিগ্ন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনও। এই বন্দর শহরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাজ্য সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছে, রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিবের কাছে তা জানতে চাইল রাজভবনের সচিবালয়।
গত কয়েক মাসে বিরোধীরা রাজ্যপালের কাছে একাধিক বার অভিযোগ জানিয়েছেন হলদিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে। তাঁদের অভিযোগ, হলদিয়ায় তৃণমূলের বাধায় তাঁরা কোনও কর্মসূচিই নিতে পারছেন না। এমনকী হলদিয়ায় পুরভোটে জেতার পরেও বামেদের পুরবোর্ড কাজ করতে পারছে না বলে সিপিএমের তরফে বার বার অভিযোগ করা হয়েছে রাজ্যপালের কাছে। সিপিএমের বেশ কয়েক জন কাউন্সিলরের বাড়িতে দুষ্কৃতীরা হামলা করেছে। এক প্রাক্তন বিধায়কও আক্রান্ত হয়েছেন। রাজ্যপালের কাছে সিপিএমের নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, তাঁদের উপরে প্রতিটি হামলার ক্ষেত্রেই পুলিশ ছিল দর্শকের ভূমিকায়।
বিরোধীদের তরফে করা একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতেই স্বরাষ্ট্রসচিবকে চিঠি পাঠানো হয়েছে রাজ্যপালের সচিবালয়ের তরফে। হলদিয়ার আইনশৃঙ্খলা প্রশ্নে প্রশাসনের ভূমিকায় তিনি যে ক্ষুব্ধ, তার ইঙ্গিতও রয়েছে ওই চিঠিতে। গত ২ এপ্রিল রাজ্যপালের সচিবালয় স্বরাষ্ট্রসচিবকে যে চিঠি পাঠিয়েছে, তার বক্তব্য, পর পর অভিযোগ এবং বিভিন্ন সূত্রে জানা যাচ্ছে, হলদিয়ায় এলাকা দখলের জন্য এক ভয়ের পরিবেশ তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। শাসক দলের মদতেই এক শ্রেণির দুষ্কৃতী এই কাজ চালাচ্ছে বলেও চিঠিতে মন্তব্য করা হয়েছে। রাজভবনের বক্তব্য, বন্দর শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এর জেরে বিঘ্নিত হচ্ছে। সরকারের উচিত এ নিয়ে কঠোর মনোভাব দেখানো। সরকারি সূত্রে খবর, স্বরাষ্ট্র দফতরে পাঠানো চিঠির সঙ্গে একগুচ্ছ অভিযোগের প্রতিলিপিও জুড়ে দিয়েছে রাজভবনের সচিবালয়।
ওই চিঠি পাওয়ার পরে কী ব্যবস্থা নিয়েছে রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতর? দফতর সূত্রে খবর, এপ্রিলের গোড়ায় চিঠিটি এলেও মাত্র গত সপ্তাহে তা নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। রাজ্য পুলিশের ডিজি-র কাছে হলদিয়ার সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে চেয়ে রিপোর্ট তলব করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা বলেন, “পুলিশকে সেখানকার পরিস্থিতি জানাতে বলা হয়েছে। রিপোর্ট এলে তা রাজভবনে পাঠানো হবে।”
হলদিয়ার তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী অবশ্য রাজ্যপালের এই উদ্বেগের কোনও কারণ দেখছেন না। সোমবার শুভেন্দুবাবু বলেন, “একেবারেই ভিত্তিহীন অভিযোগ। হলদিয়ায় শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক পরিবেশ রয়েছে বলেই গত পুরসভা ভোটে সিপিএম জিতেছে। লক্ষণ শেঠের আমলে বিরোধী দলকে সব আসনে প্রার্থী দিতে দেওয়া হত না। তৃণমূল হলদিয়া পুর বোর্ডের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছে বলেই সিপিএম রাজভবনে গিয়ে মিথ্যা অভিযোগ করেছে।”
হলদিয়ার তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক শিউলি সাহা আবার বলেন, “আমার বিচারে হলদিয়ার পরিস্থিতি স্বাভাবিক। তবে মহামান্য রাজ্যপাল যখন উদ্বিগ্ন, তখন বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নিতে হবে।” হলদিয়া পুরসভার চেয়ারপার্সন তথা সিপিএম নেত্রী তমালিকা পন্ডা শেঠ বলেন, “নির্বাচনে জেতা একটি পুরর্বোডকে কাজ করতে দিচ্ছে না তৃণমূলের গুন্ডারা। কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচিও নেওয়া যাচ্ছে না। এমন ভয়ের পরিবেশ তৈরি করেই হলদিয়ায় ভোট হয়েছিল। তার পরেও আমরা জিতেছি। রাজ্য প্রশাসনের কাছে বার বার আবেদন জানিয়েও কোনও কাজ হয়নি। বাধ্য হয়েই আমরা রাজ্যপালের দ্বারস্থ হয়েছিলাম।” সেই সঙ্গেই তিনি বলেন “রাজ্যপালের পরামর্শ মেনে সরকার হলদিয়ায় শান্তি ফেরালে ভাল। কিন্তু পুলিশ-প্রশাসনের আচরণে এর কোনও প্রতিফলন দেখছি না।”
গত সেপ্টেম্বর মাসে এবিজি-র বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময় থেকেই হলদিয়ার পরিস্থিতি উত্তপ্ত। যে ভাবে এবিজি-কে হলদিয়া থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল, তাতে যে তিনি অখুশি, তা রাজ্যপাল সেই সময় নানা ভাবে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। এবিজি-কে কেন হলদিয়া ছেড়ে চলে যেতে হল এবং স্থানীয় তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর অবস্থান সম্পর্কে মহাকরণের কাছে রিপোর্টও চেয়েছিলেন তিনি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যে সব কারণে বিঘ্নিত হচ্ছে, তা মোকাবিলায় সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে কি না, তা-ও জানতে চেয়েছিলেন রাজ্যপাল। রাজ্য সরকার সে সময় রাজভবনকে জানায়, এবিজি-কাণ্ড হলদিয়া বন্দরের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সে ব্যাপারে রাজ্য সরকারের কিছু করার নেই। তবে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত সমস্যা মেটাতে সরকার যে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে, তা সে সময় রাজ্যপালকে জানানো হয়। |
|
|
|
|
|