চিটফান্ড কেলেঙ্কারির পর বাংলার ফুটবলের নাভিশ্বাস উঠেছে। প্রবল ধাক্কায় পরের মরসুমে দল গড়তে নাজেহাল আই লিগের তিন ক্লাবের কর্তারা।
সারদা কেলেঙ্কারির অনেক আগেই অবশ্য চিটফান্ড পথে বসিয়েছিল আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হতে চলা গোয়ার চার্চিল ব্রাদার্সকে। ফুটবল-পাগল গোয়ার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী চার্চিল আলেমাও নিজের জমি-বাড়ি বিক্রি করে অবস্থা সামাল দিয়েছেন। এ বার তিনি ভাবছেন, ওই কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করবেন।
মোহনবাগান, ভবানীপুর, আই এফ এ, ফেডারেশন এবং আই পি এলের টিম পঞ্জাব কিংস ইলেভেনের সঙ্গে যুক্ত একটি চিটফান্ড সংস্থা ছয় কোটির চুক্তি করেছিল চার্চিলের সঙ্গেও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এক কোটি টাকা দিয়েই পালিয়ে যায় লগ্নি সংস্থাটি। মরসুমের মাঝপথে চরম বিপদে পড়ে যায় আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হতে যাওয়া গোয়ার দলটি। ফুটবলারদের মাইনে বন্ধ হয়ে যায়। খাওয়ার খরচও দিতেও তখন সমস্যায় চার্চিল কর্তারা। শেষ পর্যন্ত নিজের সম্পত্তি বেঁচে দেন দলের প্রধান কর্তা চার্চিল আলেমাও। নিজের বাড়িতে বসে দোর্দণ্ডপ্রতাপ ওই কংগ্রেস নেতা সোমবার দুপুরে বলছিলেন, “টিম করতে গিয়ে কত জমি-বাড়ি যে বিক্রি করেছি হিসেব নেই। পরের বারও টিম করব। বাজেট কমাচ্ছি না।” গোয়ার দুই শিল্পপতির ক্লাব ডেম্পো এবং সালগাওকর তাঁকে অনুরোধ করেছিল, নতুন মরসুমে অন্তত বাজেট কুড়ি শতাংশ কমানোর জন্য। চার্চিল প্রধান বলে দিয়েছেন, “পুরো টিম ধরে রাখতে চাই। তাতে যা খরচ হয় হোক।” ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন কয়েক বছর আগে। নতুন বিজেপি সরকার তাঁর প্রধান ব্যবসা মাইনিং-এ সমস্যা তৈরি করছে। তাতে কী, কুছ পরোয়া নেহি। ভাল টিম তিনি গড়বেনই।
কীসের জন্য এই ‘পাগলামি’? যেখানে টিম আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হলেও একজন বিদেশি ফুটবলারের টাকা প্রইজ মানি থেকে আসে না, সেখানে কীসের টানে এই খরচ? উত্তর একটাই--প্যাশন। ফুটবল প্যাশন। ফুটবলের প্রতি টান এতটাই যে, গভীর রাত পর্যন্ত জেগে বিশ্বের যে কোনও প্রান্তের ফুটবল ম্যাচ দেখেন চার্চিল আলেমাও। দলের খেলা থাকলে রাজনীতি-ব্যবসা সব ছেড়ে-ছুড়ে চলে যান কলকাতা, মুম্বই, দিল্লি, পুণে, সিঙ্গাপুর। সবই নিজের খরচে। যেখানে কলকাতার ক্লাবের বড় কর্তারা ক্লাবের খরচে বিদেশে গেলেও, কল্যাণী বা সল্টলেকে ম্যাচ থাকলে বেশির ভাগই যান না। কলকাতা বা মুম্বইয়ের ক্লাবগুলি যা করতে পারেননি চার্চিলরা সেটা করে ফেলেছেন দু’বছর আগে। তৈরি করেছেন আসাধারণ একটি আধুনিক মানের ফুটবল হাউস। যেখানে দলের ৫০ ফুটবলারের অধিকাংশই থাকেন। নিজস্ব মাঠ তৈরি করেছেন। সঙ্গে একাংশে গ্যালারি। মনে রাখতে হবে সবই ব্যক্তিগত পকেটের পয়সায়।
সেই পারিবারিক টিম আজ চ্যাম্পিয়ন হতে চলেছে আই লিগ। এ বার নিয়ে দ্বিতীয় বার। তিন বার রানার্স। একটা ঘর ভর্তি শুধু ট্রফিতে। জমি-বাড়ি বেঁচে ট্রফি। কেমন লাগে? ট্রফির ঘরের দিকে মুখ করে চার্চিল আলেমাও বলে দেন, “আবার আই লিগ আসছে। আবার ট্রফি। ওগুলো দেখলে সব চিন্তা দূর হয়ে যায়। আবার টিম করতে ঝাঁপিয়ে পড়ি।” |