আগের পাঁচ বারের থেকে এ বারের আইপিএলের সবচেয়ে বড় পার্থক্যক্রিকেট হারিয়ে দিচ্ছে বিনোদনকে। বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বিনোদনের টুর্নামেন্টে আসল বিনোদন হয়ে দাঁড়িয়েছে ক্রিকেটই!
ক্রিস গেইলের ওই অবিশ্বাস্য ১৭৫! অমিত মিশ্রর একই ওভারে চার-চারটে উইকেট! শেন ওয়াটসনের ধুন্ধুমার সেঞ্চুরি। পোলার্ডের পরপর তিন বলে তিনটে ক্যাচ ফেলা! আর সোমবার রাতে কোনও এক ডেভিড মিলারের বিপক্ষের ১৯০ তাড়া করে ৩৮ বলে সেঞ্চুরির সাইক্লোনে কিংস ইলেভেনকে ১২ বল বাকি থাকতেই ছ’উইকেটে অভাবিত জেতানো! তাও কিনা কিংস যখন ১৩তম ওভারেও খুঁড়িয়ে-খুঁড়িয়ে ৫ রান তুলে সাকূল্যে ৯৫-৪সেই নিশ্চিত পরাজয়ের জায়গা থেকে! শেষ ৫ ওভারে মিলার-সতীশ ৯৯ রান তোলে। যার মধ্যে মিলার একাই ৭৩! ১৪ থেকে ১৮ নম্বর ওভারে ওঠা রানগুলো এ রকম: ১৭, ২৬, ১৬, ১৮ এবং ২২। বোলারদের নামগুলো নেহাত ফেলনা নয়। বিনয় কুমার, রবি রামপল, আরপি সিংহ, আর কিংবদন্তি গেইল। |
কিন্তু কিংবদন্তি এ দিন অখ্যাতের কাছে ধুয়েমুছে সাফ। গেইলকেই ছক্কা মেরে ‘কিলার’ মিলারের (৮X৪), ৭X৬) সেঞ্চুরি আর ওর দলের চিরস্মরণীয় জয়। গেইল এ দিনও ব্যাট হাতে জ্বলে উঠেছিল (৩৩ বলে ৬১)। কিন্তু মিলার এ দিন তুলনায় এসে পড়ছে গেইলের সেই ১৭৫ রানের ইনিংসের সঙ্গে। গেইলের ইনিংসটাকে এগিয়ে রেখেও বলব, চাপ কিন্তু বেশি ছিল মিলারের। গেইল তো আগে ব্যাট করেছিল। পুণের বোলিংও বেঙ্গালুরুর চেয়ে দুর্বল। এই অবস্থায় যখন আস্কিং রেট চোদ্দোর কাছে পৌঁছে গিয়েছে। চারটে উইকেট পড়ে গিয়েছে, তখন একটা টিমের পাঁচ নম্বর ব্যাটসম্যানের এ ভাবে ম্যাচ বার করার উদাহরণ মনে পড়ছে না। আর সেই ব্যাটসম্যান কে? ডারবানের বছর চব্বিশের মিলার দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে তিন বছর হল ওয়ান ডে, টি-টোয়েন্টি খেললেও নিয়মিত নয়। মোহালিতে ম্যাচ শেষ হওয়ার পর ইন্টারনেটে দেখছিলাম, টি-টোয়েন্টিতে মিলারের স্ট্রাইক রেট ১২৯-এর মতো। মোটেও আহামরি নয়। ব্যাটিং গড় মাত্র ২৭। কিন্তু আইপিএল যত পুরনো হচ্ছে, ততই নতুন নতুন শট আবিষ্কৃত হচ্ছে। আবার ব্যাটসম্যানদের গোলাগুলি থামাতে বোলিংয়েও তো উদ্ভাবনী ডেলিভারি বেরিয়েছে। ক্যারম বল! নাকল বল! সেই বিচারে বলতেই হবে, মিলারের কৃতিত্বের কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। |
বিরাট কোহলি টিভিতে বলছিল, “টি-টোয়েন্টির ইতিহাসে অন্যতম সেরা ইনিংস।” ভারতের ভবিষ্যৎ অধিনায়ক এ দিন মিলারকে ৪২ রানে ফেলেছে। যাকে বলা হচ্ছে, ‘ড্রপিং দ্য ম্যাচ’। ইন্টারনেটেই দেখছিলাম, ডেভিড মিলারের বাবা নাকি ছেলেকে ছোটবেলায় একটা কথা খুব বলতেন“ইফ ইট’স ইন দ্য ভি, ইট’স ইন দ্য ট্রি। অ্যান্ড ইফ ইট’স ইন দ্য আর্ক, ইট’স আউট অব দ্য পার্ক।” সোমবার রাতে মোহালিতে যেটা হুবহু ঘটেছে। তবে আমার খুব জানতে ইচ্ছে করছে, মাঠের ভেতর দাঁড়িয়ে গেইলের কেমন লাগছিল মিলারের ঠ্যাঙানি দেখতে? রিসিভিং এন্ডে দাঁড়ানোর জ্বালা এ দিন গেইল বুঝল। তবে ওর ১৭৫ দেখেই মিলারদের আত্মবিশ্বাস বেড়েছেআমরাও পারি।
এটাও আগের পাঁচটার থেকে পেপসি আইপিএলের পার্থক্য। এক মরসুমে চারটে সেঞ্চুরিও তো এর আগে আইপিএল কখনও দেখেনি! |
আইপিএল সিক্সে মিলার
ম্যাচ ৭ রান ৩৫২ সর্বোচ্চ ১০১* গড় ১১৭.৩৩ স্ট্রাইক রেট ১৭৩.৩৯ |
এ ভাবেই মিলারের একশোটা সেলিব্রেট করা হল। আমি কেকের একটা টুকরো চেয়েছিলাম। কিন্তু যা হল!!! বাঁচাও!!!!
প্রীতি জিন্টা |
|