আদালতের এজলাসের লক-আপের দরজা বন্ধ হতেই অভিযুক্তের পকেট থেকে বেরিয়ে এল চামচ। গলায় সেটি ঠেকিয়ে প্রথমে হুমকি দিল, “কেউ ধরতে এলেই আত্মহত্যা করব।” এই বলেই চামচ দিয়ে গলায় আঘাত করে। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওই চামচ দিয়েই বাঁ হাতে খোঁচাতে শুরু করে। কেটে ফালাফালা হয়ে যায় হাত।
শ্রীরামপুর আদালতের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট রতন দাসের এজলাসে সোমবার এই ঘটনা ঘটে। বিচারক সে সময় নিজের চেম্বারে ছিলেন। তিনি বেরিয়ে এসে সঞ্জীব পাত্র নামে ওই বিচারাধীন বন্দিকে নিরস্ত হতে বলেন। সঞ্জীবের বাড়ি শ্রীরামপুরেই। বর্তমানে সে দমদম সেন্ট্রাল জেলে রয়েছে। খুনের চেষ্টার অভিযোগের একটি মামলায় এ দিন তাকে শ্রীরামপুর আদালতে তোলা হয়। শ্রীরামপুর কোর্ট লক-আপে অন্য বন্দিদের অত্যাচার এবং পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার প্রতিবাদেই সে এমনটা ঘটিয়েছে বলে পরে আদালতে জানায় সঞ্জীব।
বিচারকের কাছে সঞ্জীব দাবি করে, কোর্ট লক-আপে তার উপরে নিয়মিত অত্যাচার হয়। কর্তব্যরত পুলিশকর্মীদের সামনেই কুখ্যাত দুষ্কৃতী রমেশ মাহাতোর গোষ্ঠীর আসামীরা তাকে মারধর করে। লক-আপে পুলিশের সহায়তায় আকছার মদ-মাংস আসে বলেও সে অভিযোগ করে। বিচারক গোটা ঘটনা শুনে আসামীকে বলেন, তিনি বিষয়টি দেখবেন। অভিযোগ প্রসঙ্গে কোর্ট লক-আপের দায়িত্বপ্রাপ্ত এএসআই দীনবন্ধু মেটেকে লিখিত রিপোর্ট দিতে বলেন। বিচারকের আশ্বাসে শান্ত হয় সঞ্জীব। |
রক্তাক্ত সঞ্জীব। ছবি: প্রকাশ পাল। |
শ্রীরামপুর থানার আইসি তথাগত পাণ্ডে কোর্ট ইনস্পেক্টরেরও দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। তিনি বিচারকের কাছে ঘটনার বিভাগীয় তদন্ত করার অনুমতি চান। বিচারক তাঁকে বলেন, “সংশ্লিষ্ট পুলিশকর্মীর কাছে তিনি লিখিত বক্তব্য চেয়েছেন। বিষয়টি তিনি দেখবেন।” সংবাদমাধ্যমের সামনে সঞ্জীব দাবি করে, রমেশের সাগরেদ নেপু গিরি, চিকুয়া-সহ আরও কয়েক জন তাকে মারধর করেছে। পুলিশকর্মীদের একাংশ পরে সংবাদমাধ্যমের কাছে পাল্টা দাবি করে জানায়, সঞ্জীবের অভিযোগ সত্যি নয়। কোর্টের লক-আপে সিসিটিভি-র ফুটেজ দেখলেই তা পরিস্কার হবে।
ঘটনা যাই হোক, বিচারকের নির্দেশে জখম সঞ্জীবকে চিকিৎসার জন্য ওয়ালশ হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। সেখান থেকে ফের বিচারকের সামনে হাজির করা হয়। পরে তাকে আর কোর্ট লক-আপে নিয়ে যাওয়া হয়নি। আদালত চত্বরেই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শিল্পাঞ্চল) অফিসের সামনে পুলিশের প্রিজন ভ্যানে বসিয়ে রাখা হয় সঞ্জীবকে।
জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, সঞ্জীবের বিরুদ্ধে খুন-সহ বেশ কয়েকটি অভিযোগ রয়েছে। হাবরায় কংগ্রেস নেতা বাপি চৌধুরী খুনের মামলাতেও তার নাম জড়িয়েছিল। সঞ্জীবের দাদাও সুরজিৎ পাত্র ওরফে বাচ্চাও দুষ্কর্মে জড়িত ছিল। বছর খানেক আগে সে খুন হয়ে যায়। রমেশের দলবলের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ ওঠে। সঞ্জীবের মা-ও এক বার তোলাবাজির অভিযোগে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিল।
আদালতে নজরদারি প্রসঙ্গে পুলিশ মহলের বক্তব্য, কোর্ট লক-আপে পুলিশকর্মী প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই কম। প্রতিদিন গড়ে ৪০ জন পুরুষ এবং জনা চারেক মহিলা বন্দিকে আদালতে হাজির করানো হয়। লক আপ থেকে এজলাসে তাঁদের নিয়ে যাওয়া-নিয়ে আসার কাজ করতে হয় দুই এএসআই এবং গুটি কয়েক কনস্টেবলকে। এর মধ্যে রমেশ মাহাতো, নেপু গিরু, চিকুয়ার মতো কুখ্যাত আসামীদেরও নিয়মিত আনা হয়। এই ধরনের সমাজবিরোধীদের সামলাতে আরও বেশি সংখ্যক পুলিশকর্মী প্রয়োজন। প্রায়ই কোর্ট লক-আপের বেহাল দশায় অনেক দাগি আসামী চেঁচামেচি জুড়ে দেয়। সেখানে জলের ব্যবস্থা নেই। শৌচাগারও কার্যত ব্যবহার করার অনুপযোগী। |