সম্পাদকীয় ২...
যাহা চাই
ভারতে থাকাকালীন নিজ পদযুগলকে উন্মুক্ত রাখিবেন না বা খাটো ঝুলের পোশাক পরিধান করিবেন না, ইহাতে ভারতীয় আবেগে আঘাত লাগিতে পারে এবং আপনি যৌন হয়রানির শিকারও হইতে পারেন এমনই পরামর্শ এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক-এর। ম্যানিলা-কেন্দ্রিক এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি সম্প্রতি গ্রেটার নয়ডায় তাহার ছেচল্লিশতম বার্ষিক সম্মেলনের আয়োজন করিয়াছিল। এই উপলক্ষে সমবেত চার হাজারের অধিক বিদেশি অভ্যাগতদের উদ্দেশে এ ডি বি ওয়েবসাইটে এমন উপদেশ বর্ষিত হইয়াছে। বিদেশি অতিথিদের নিকট পুনরায় মুখ পুড়িল দিল্লি গণধর্ষণ-উত্তর ভারতের।
দীর্ঘ দিন যাবত্‌ পশ্চিম দুনিয়ার নিকট ভারতের পরিচয় ছিল ম্যালেরিয়া, সাপখোপ, ফকির আর ভানুমতীর খেল-এর দেশ হিসাবে। গত কয়েক দশকে সেই ধারণায় অনেকটাই পরিবর্তন আসিয়াছে। পুরাদস্তুর ‘আধুনিক’ না হইলেও আর্থিক সংস্কারের কল্যাণে দেশ ক্রমশই অগ্রগতির পথে। ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মিশ্রণে নির্মিত ভারতবর্ষের এই নব-রূপ শ্রদ্ধা আদায় করিতে আরম্ভ করিয়াছে বিদেশি রাষ্ট্রগুলির নিকট হইতে। কিন্তু ভারত সম্পূর্ণ সংস্কারমুক্ত এবং উদারমনা একটি দেশ এমন শংসাপত্র এখনও দুর্লভ। বরং ভারতীয় সমাজে মহিলাদের স্থান লইয়া সন্দেহ ও সমালোচনা কখনও সম্পূর্ণ ঘুচে নাই। সুতরাং সন্দেহের বারুদ মজুত ছিলই। তাহাতে মোক্ষম স্ফুলিঙ্গ যোগ করিয়াছে একের পর এক ধর্ষণ এবং শ্লীলতাহানির অভিযোগ।
এবং তাহার সহিত যুক্ত হইয়াছে পোশাক-বিভ্রাট। ভারত নাকি এমন এক দেশ যেখানে মহিলাদের সম্মান নির্ভরশীল তাঁহাদের পোশাকের বহরের উপর। বিদেশিদের দোষ নাই, স্বদেশের মানুষজনের এক বড় অংশই ধর্ষণের পশ্চাতে নারীদের ‘অশ্লীল’ পোশাককে দায়ী করিতে অভ্যস্ত। এই চিন্তাধারার মৌলিক অন্যায্যতা বহু-আলোচিত, তাহার পুনরাবৃত্তির প্রয়োজন নাই। কিন্তু যদি মেয়েদের উন্মুক্ত পোশাককে পুরুষের ‘উত্তেজনা’র কারণ বলিয়া স্বীকারও করা হয়, তাহা হইলেও ধর্ষণ বা লাঞ্ছনার দায় মেয়েদের উপর বর্তাইবে কোন যুক্তিতে? দোষ তো সেই সকল পুরুষের প্রাপ্য, যাহারা ‘আত্মনিয়ন্ত্রণ’ নামক শব্দটি সম্পূর্ণ বিস্মৃত হইয়াছে। সমাজে কিছু ন্যূনতম আচরণবিধি থাকে। মন যাহাই চাহিল, তত্‌ক্ষণাত্‌ সেই কার্য সম্পন্ন করিবার অধিকার সভ্য সমাজে স্বতঃসিদ্ধ হইতে পারে না। প্রয়োজন স্ব-নিয়ন্ত্রণের। নচেত্‌ লোভ হইলেই দোকান লুঠ করার অধিকার মানিতে হয়, ক্রোধ হইলেই খুনজখম করিবার। নারীশরীরের কোনও অংশ উন্মুক্ত দেখিয়া বা পর্নোগ্রাফি উপভোগ করিয়া যদি কোনও পুরুষের যৌনক্ষুধা লাফাইয়া লাফাইয়া বাড়িতে থাকে, তাহা হইলে সে সমস্যা সেই পুরুষের নিজস্ব। এরূপ বেয়াড়া আবদারকে নিবৃত্ত করিবার দায় তো কোনও মতেই নারীর নহে। অথচ যৌনহয়রানির পশ্চাতে পুরুষদের আত্মসংবরণের বিষয়টি তুলিয়া ধরিবার প্রয়াস নগণ্য। অপরের পোশাক ঠিক কী হওয়া উচিত, তাহা লইয়া কালক্ষেপ করা অনধিকার চর্চা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.