রাষ্ট্রীয়করণের পরে ৩৮ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম বার কোনও আর্থিক বছরে নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রারও বেশি কয়লা তুলল ইসিএল। তা-ও মেয়াদ শেষ হওয়ার সপ্তাহখানেক আগেই।
ইসিএল কর্তৃপক্ষের দাবি, এই ‘সাফল্য’র দৌলতে আগামী ছ’মাসের মধ্যেই সংস্থাটি বিআইএফআর থেকে বেরিয়ে আসবে। তবে তা সত্ত্বেও জমির সমস্যায় ‘আষাঢ়ে মেঘ’ দেখতে শুরু করেছেন কর্তৃপক্ষ। বর্ধমান জেলা প্রশাসনের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনাও শুরু করেছেন তাঁরা।
আসানসোল-রানিগঞ্জ খনি অঞ্চলের অর্থনীতিতে ইসিএল বড় ভূমিকা পালন করে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তা লাভজনক হতে পারেনি। বহু বছর আগেই বিআইএফআরে চলে গিয়েছে সংস্থাটি। সংস্থা সূত্রের খবর, গত চার আর্থিক বছরে তারা গড়ে ৩০ মিলিয়ন টন করে কয়লা তুলেছে। কিন্তু বিআইএফআর থেকে বেরিয়ে আসার জন্য এই পরিমাণ উত্তোলন পর্যাপ্ত নয়।
ইসিএলের সিএমডি রাকেশ সিংহ জানান, সদ্য শেষ হওয়া আর্থিক বছরে প্রায় ৩৪ মিলিয়ন টন কয়লা উত্তোলন হয়েছে। যা এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি। তাঁর দাবি, এই সাফল্যের জোরেই ছ’মাসের মধ্যে লাভজনক রাস্ট্রায়ত্ত সংস্থা হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে ইসিএল। তাঁর আরও দাবি, ইসিএল এ বার ৩৫ মিলিয়ন টনেরও বেশি কয়লা সরবরাহ করেছে। ফলে কয়লা-নির্ভর শিল্প ও তাপবিদ্যুত্ কেন্দ্রগুলি জ্বালানির সমস্যায় পড়েনি। কোল ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষও জানিয়েছেন, বিগত বছরগুলির তুলনায় এ বার ইসিএলের উত্পাদন বেড়েছে প্রায় সাড়ে ১২ শতাংশ। কয়লা সরবরাহের পরিমাণও বেড়েছে প্রায় ১৭ শতাংশ।
কী ভাবে বাড়ল উত্পাদন? ইসিএলের সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায়ের দাবি, শ্রমিক-কর্মীদের কর্মদক্ষতা আগের তুলনায় বেড়েছে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে খনন চলছে। ফলে উত্পাদন ব্যয়ও কমেছে। কয়লা তুললে লাভজনক না-ও হতে পারে, এ রকম একাধিক খোলামুখ খনিতে বেসরকারি ঠিকা সংস্থাকে দিয়ে কয়লা তোলানো হচ্ছে। কিন্তু ভূগর্ভে আরও প্রচুর সঞ্চিত কয়লা আছে, যা তুলতে না পারলে সংস্থাকে লাভজনক ভাবে টিকিয়ে রাখা যাবে না। কিন্তু খনির জন্য জমি অধিগ্রহণ নিয়ে সমস্যা চলছে।
নীলাদ্রিবাবু জানান, কালিপাহাড়ি এলাকায় চিহ্নিত আঠারো হেক্টর জমির নীচে প্রায় চার লক্ষ টন কয়লা মজুত রয়েছে। নাকাকোঁদা এক্সটেনশন এলাকায় ২৩ হেক্টর জমির নীচে সাড়ে পাঁচ লক্ষ টন, নারায়ণকুড়ি বিস্তারীকরণ অঞ্চলে ৪৭ হেক্টর জমির তলায় ১৫ লক্ষটন, নতুন বনবহাল এলাকায় ২০ হেক্টর জমির তলায় পাঁচলক্ষ টন, সংগ্রামগড় অঞ্চলে ২০ হেক্টর জমির তলায় দু’লক্ষ টন, মোহনপুর এলাকায় ১৬ হেক্টর জমির তলায় ১৫ লক্ষ টন কয়লা মজুত রয়েছে। নীলাদ্রীবাবু বলেন, “ওই সব জমি অধিগ্রহণের জন্য আমরা বছর দুয়েক আগে জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছি। তার জন্য প্রায় ১৫ কোটি টাকা জমাও করেছি। কিন্তু এখনও অনুমতি না মেলায় কাজ এগোয়নি।”
বর্ধমানের জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা অবশ্য বলেন, “এ বিষয়ে কোনও কথা বলতে চাই না। যা বলার ইসিএল কর্তৃপক্ষকে বলে দিয়েছি।” জেলা প্রশাসনের এক কর্তার দাবি, জমি অধিগ্রহণ করতে হলে ওই এলাকায় বসবাসকারীদের যে পুনর্বাসন প্রকল্প ঘোষণা করতে হয়, ইসিএল তা করে উঠতে পারেনি। তাই তাঁরাও অধিগ্রহণের অনুমতি দেননি। নীলাদ্রিবাবু অবশ্য আশ্বাস দেন, অধিগ্রহণের অনুমতি হাতে এলেই কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়মনীতি মেনে যাতে জমিদাতারা ক্ষতিপূরণ পান, ইসিএল সেই ব্যবস্থা করবে। |