দিনভর সংঘর্ষে উত্তাল বাংলাদেশ, নিহত ৩২
ঢাকা জুড়ে গত কাল তাণ্ডব চালানোর পর আজও সারা দেশে মৌলবাদীদের সঙ্গে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষে নিহত হলেন অন্তত ৩২ জন। এর মধ্যে রয়েছেন দুই পুলিশ ও র্যাবের এক কর্মী। আহত শতাধিক। রবিবার রাত আড়াইটে নাগাদ পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি-র যৌথ বাহিনী রাজধানীর শাপলা চত্বরে জড়ো হওয়া প্রায় সত্তর হাজার হেফাজতে ইসলাম সমর্থকদের ওই এলাকা থেকে সরিয়ে দেয়। কিন্তু তার পর আজ বাংলাদেশের বাগেরহাট, কাচপুর, হাটহাজারী থেকে একের পর এক সংঘর্ষের খবর আসতে থাকে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সোমবার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত ঢাকা শহরে কোনও রাজনৈতিক সমাবেশ করা যাবে না বলে নির্দেশ জারি করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। মাঝরাতের সংঘর্ষে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ। হিংসায় মদত দেওয়ার অভিযোগে দক্ষিণপন্থী দু’টি টিভি চ্যানেলের সম্প্রচারও বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন।
হেফাজতে ইসলাম সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত পুলিশকর্মীরা। নারায়ণগঞ্জের কাচপুরে। ছবি: রয়টার্স
সোমবার সকালে নমাজের পরেই কাচপুরের ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় সড়কে অবরোধ শুরু করেন মৌলবাদীরা। পুলিশ অবরোধ তুলতে গেলে হেফাজতে ইসলামের কর্মী-সমর্থকদের ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়। নিহত হন পুলিশ ও বিজিবি-র তিন জন-সহ কম পক্ষে দশ জন। একাধিক গাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় হামলাকারীরা। তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি কাচপুর থানা, জাতীয় সড়কের পুলিশ ফাঁড়িও। গণ্ডগোলের জেরে ব্যাহত হয় ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ও সিলেটে যাওয়ার যান চলাচল।
এ দিন সকাল আটটা নাগাদ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বাগেরহাট এলাকা। বড় বড় গাছের গুঁড়ি ফেলে খুলনা থেকে মংলা যাওয়ার রাস্তা আটকে দেন হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা। নির্বিচারে গাড়ি ভাঙচুরও করেন তাঁরা। পুলিশ তাঁদের সরাতে গেলে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় গোটা এলাকা। লোহার রড, লাঠি নিয়ে পুলিশকে ঘিরে ধরেন মহিলারাও। পুলিশ ও সংবাদ মাধ্যমের প্রায় কুড়ি জন আহত হয়েছেন এই ঘটনায়। পরে আরও পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি গিয়ে এলাকার দখল নেয়।
বিকেল বেলা মৌলবাদীদের সঙ্গে পুলিশের নতুন করে সংঘর্ষ হয় হাটহাজারীতে। শূন্যে গুলি চালিয়ে, কাঁদানে গ্যাস ছুড়েও অবস্থা আয়ত্তে আনতে পারেনি বাংলাদেশ পুলিশ। এখনও পর্যন্ত সেখানে মারা গিয়েছেন পাঁচ জন। আহত অন্তত পনেরো।
গত কাল রাজধানী ঢাকায় ১৩-দফা দাবিতে সমাবেশের ডাক দেয় মৌলবাদী হেফাজতে ইসলাম সংগঠন। ঢাকায় ঢোকার সব পথ বন্ধ করে সারা দিন রাজধানী দাপিয়ে বেড়ায় তারা। পুরনো পল্টন, মতিঝিল এলাকার ছোট দোকান থেকে বড় শপিং মল, অফিস, আওয়ামি লিগ, কমিউনিস্ট পার্টির কার্যালয় থেকে পুলিশের সদর দফতর ভেঙে তছনছ করে দেয় সব কিছু। আজ সকালে দেখা যায় রাস্তার ধারে কোথাও পড়ে আছে ভাঙা ইটের স্তূপ, কোথাও আবার উপড়ে পড়েছে বিদ্যুতের খুঁটি, গাছপালা। দৃশ্যতই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে সারা এলাকা। পুলিশ সূত্রে খবর, কাল সংগঠনটির ৭০,০০০ কর্মী-সমর্থক জড়ো হন রাজধানীতে। সরকারের তরফে বার বার তাঁদের চলে যেতে বলা হলেও তাঁরা শোনেননি। শেষ পর্যন্ত রাতে বিশাল পুলিশ-বাহিনী প্লাস্টিক বুলেট, কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তবে সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে ভেঙে দেওয়া হয়েছে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ। গত ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে জামাত-মুক্ত বাংলাদেশের দাবিতে শাহবাগ চত্বরে আন্দোলন শুরু করেছিলেন বাংলাদেশের মানুষ।
সোমবার বিক্ষোভকারীদের পাশে দাঁড়ায় প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। দলের ভাইস চেয়ারম্যান অভিযোগ করেন, হেফাজতে ইসলামের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হামলা চালিয়ে তাদের হাজারেরও বেশি সমর্থককে হত্যা করেছে পুলিশ। তার পর লুকিয়ে রেখেছে সেই দেহ। আজ ঢাকায় বিএনপির জমায়েতের কথা থাকলেও সমাবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় বাতিল করা হয়েছে তা।
ঘটনার পিছনে যিনি ছিলেন সেই হেফাজতে-র প্রধান আহমেদ শফিকে আজ চট্টগ্রামে পাঠিয়ে দিয়েছে পুলিশ। তাঁর মতো নেতাদের উস্কানিমূলক মন্তব্যেই সংঘর্ষ এত ব্যাপক চেহারা নেয় বলে মনে করছে পুলিশ। হিংসা ও গুজব ছড়ানোর অভিযোগ এ দিন ‘দিগন্ত টিভি’ ও ‘ইসলামিক টিভি’ নামের দু’টি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হালানুল হক ইনু জানিয়েছেন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় তাঁরা বিশ্বাস করলেও ওই দুই চ্যানেলে যে গুজব ছড়ানো হচ্ছিল, তা থামাতেই এই পদক্ষেপ করা হয়েছে।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.