সমাবেশের নামে রবিবার বাংলাদেশের রাজধানী শহর ঢাকাকে কার্যত চুরমার করে দিল হেফাজতে ইসলাম নামে একটি মৌলবাদী সংগঠন।
ফুটপাতের দোকান থেকে বহুতল মল, পুলিশের সদর দফতর থেকে ব্যাঙ্ক, আওয়ামি লিগ ও কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় দফতরেও বেপরোয়া ভাঙচুর করে আগুন লাগানো হল। পুলিশ ও র্যাবের সামনেই ‘নারায়ে তকবির’ স্লোগান দিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র ও লোহার রড হাতে মহানগরের সব প্রধান রাস্তা দাপিয়ে বেড়াল দুষ্কৃতীরা। কোথাও কোথাও পুলিশের ওপরেও তারা হামলা চালায়। পুলিশ ও মৌলবাদীদের সংঘর্ষে অন্তত ৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন কয়েকশো মানুষ। অন্তত ১১ জন কর্তব্যরত সাংবাদিক মৌলবাদীদের হাতে বেদম মার খেয়ে রক্তাক্ত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৫ জন আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। |
তাণ্ডব: জ্বলছে ঢাকা। রবিবার দুষ্কৃতীদের হটাতে রবার বুলেট ছুড়ছে পুলিশ। ছবি: এএফপি |
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগির জানিয়েছেন, হোফাজতে ইসলামের নামে জামাতে ইসলামি ও তাদের সংগঠন ছাত্র শিবিরের দুষ্কৃতীরাই এই তাণ্ডব চালিয়েছে।
মহিলাদের কর্মক্ষেত্রে যাওয়া, প্রকাশ্যে বেরোনোর ওপরে নিষেধাজ্ঞা জারি-সহ সরকারের কাছে ১৩ দফা দাবি জানাতে আজ ঢাকা অবরোধের ডাক দিয়েছিল হেফাজতে ইসলাম। গোটা দেশ থেকে আসা তাদের হাজার হাজার কর্মী-সমর্থক সকাল থেকেই ঢাকার প্রধান ৬টি সড়কে অবস্থান শুরু করে।
কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। মৌলবাদী বিভিন্ন নেতা উস্কানিমূলক বক্তৃতা দিয়ে তাদের উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দেয়। প্রথমেই তাদের সহজ নিশানা হয়ে পড়েন বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের কর্তব্যরত সাংবাদিকরা। একের পর এক সাংবাদিককে ঘিরে ধরে লোহার রড ও লাঠি দিয়ে মারধর করা হতে থাকে। তার পরে ভাঙচুর করে আগুন দেওয়া হতে থাকে বিভিন্ন অফিসের সামনে দাঁড় করানো গাড়িকে। পুলিশ বাধা দিলে ঢাকা জুড়ে কার্যত দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশের প্লাস্টিক
বুলেট, কাঁদানে গ্যাসের জবাবে গুলি ও বোমা ছুড়তে থাকে মৌলবাদীরা। পুরনো পল্টনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় অফিস ভাঙচুর করে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। আওয়ামি লিগের সদর দফতরও আক্রান্ত হয়। সে সময়ে পুলিশের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও মৌলবাদী দুষ্কৃতীদের প্রতিরোধে এগিয়ে আসেন। আগুন লাগানো হয় মতিঝিল এলাকার কয়েকটি অফিসে। পুলিশের সদর দফতরেও ঢুকে পড়ে তাণ্ডব চালায় দুষ্কৃতীরা।
সন্ধ্যায় মৌলবাদীরা জানায়, দাবি না মানা পর্যন্ত অনির্দিষ্ট কাল তাদের অবরোধ চলবে। সরকারের তরফ থেকে অবশ্য হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়েছে, আজই ঢাকা না ছাড়লে তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ পদক্ষেপ করা হবে। বিরোধী দল বিএনপি অবশ্য অভিযোগ করেছে, ‘অতিথি’দের ওপরে হামলা করে পুলিশই অন্যায় করেছে। বাইরে থেকে আসা ‘ধর্মপ্রাণ’ লোকেদের মারধর করেছে আওয়ামি লিগ ও তাদের দুষ্কৃতীরা। |