টাকা আসেনি, বলছে নাগেলের পরিবার
সাদামাটা দু’কামরার আবাসন। তারের জালে ঘেরা বাড়ির মধ্যে একচিলতে উঠোন। যাতায়াতের পথে এই বাড়িতে উঁকিঝুকি দিচ্ছে পাড়াপড়শি। কুকথা কেউ বলছে না বটে, তবে কৌতূহলের খামতি নেই। কোটি কোটি টাকার যে প্রতারণার অভিযোগ নিয়ে গত সপ্তাহ দুয়েক ধরে রাজ্য তোলপাড়, সেই ঘটনায় প্রথম ধৃত যে এই বাড়িরই ছেলে। বাড়ির হাল দেখে অবশ্য তা বোঝার জো নেই। উপার্জনের কোনও অংশ দেওয়া তো দূর, ছেলে তাঁদের সঙ্গে কোনও যোগাযোগই রাখতেন না, এমনই দাবি সারদা গোষ্ঠীর ডিরেক্টর মনোজকুমার নাগেলের মা-ভাইয়ের।
মনোজবাবুদের আদি বাড়ি বর্ধমানের রায়নায় কোঁয়ারা গ্রামে। তাঁর বাবা উপানন্দবাবু দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টের একটি সমবায় সংস্থার কর্মী ছিলেন। সেই সুবাদে পাওয়া দুর্গাপুর ইস্পাতের সেকেন্ডারি রোডের ওই আবাসনে থাকতেন সপরিবারে। পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালে মনোজবাবু সারদা গোষ্ঠীর ব্যাক অফিসের কর্মী হিসেবে যোগ দেন। তার পরের বছর বিয়ে করেন। আর তার পরপরই অন্যত্র বাড়ি ভাড়া নিয়ে সস্ত্রীক আলাদা থাকতে শুরু করেন। এর কিছু দিনের মধ্যে মৃত্যু হয় উপানন্দবাবুর। মনোজবাবুর ভাই বনজের দাবি, “বাবা তখনও চাকরি করতেন। দাদার বাড়ি থেকে আলাদা থাকাটা মন থেকে মানতে পারেননি। খুব দুঃখ করতেন।”
দুর্গাপুরে আবাসনের সামনে মনোজের ভাই বনজ। —নিজস্ব চিত্র।
তার পর থেকে দু’কামরার ওই আসবাবহীন ঘরে থাকেন শুধু বনজ ও মা সবিতাদেবী। দুর্গাপুর সরকারি মহাবিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের পড়ুয়া বনজ জানান, বাবার অর্ধেক পেনশন বাবদ মাসে হাজার খানেক টাকা পান তাঁর মা। আর গ্রামের বাড়ির সামান্য জমির ফসলের ভাগ মেলে। তাতেই কোনও রকমে চলছে সংসার। দাদা আর্থিক সাহায্য করতেন না? বনজের জবাব, “আমাদের সঙ্গে ও কোনও যোগাযোগ রাখেনি। সাহায্য তো দূরের কথা। আমরা জানতামও না কিছু। টিভিতে দেখেই সব জানতে পারি।”
সেকেন্ডারি রোডের ওই আবাসনটি এখনও রয়েছে উপানন্দবাবুর নামেই। তা আছে বলেই থাকার জায়গা নিয়ে দুশ্চিন্তা নেই। উঠোনের এক পাশে ছোট মন্দির। বাড়ির বারান্দা পলিথিনে ঢাকা। বাইরে থেকে কিছু দেখা যায় না। বনজ বলে চলেন, “দাদাকে নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন করছেন। মা খুব বিরক্ত। কারও সঙ্গে দেখা করতে চাইছে না।” প্রতিবেশীরাও বলছেন, যাই ঘটে থাকুক, মা হিসেবে মানসিক চাপ তো রয়েছেই। তাই পারতপক্ষে কারও সঙ্গে দেখা করছেন না সবিতাদেবী।
মনোজবাবু গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে রামকৃষ্ণ অ্যাভিনিউয়ে বাপের বাড়িতে রয়েছেন তাঁর স্ত্রী বিউটিদেবী। টেলিফোনে বিউটিদেবীর দাবি, তাঁর স্বামী যে সারদা গোষ্ঠীর এক জন ডিরেক্টর, তা তাঁর জানা ছিল না। তাঁর অভিযোগ, “সুদীপ্ত সেন প্রতারক। মনোজকে ফাঁসিয়ে দিল। আমার তিন বছরের মেয়ে পেটের রোগে ভুগছে। চিকিত্‌সা করানোর মতো টাকাও আমার কাছে নেই।” ডিরেক্টর হিসেবে নিশ্চয়ই মোটা টাকা বেতন পেতেন মনোজবাবু? বিউটিদেবীর দাবি “ব্যাক অফিসের কর্মীর যা বেতন, শেষ দিন পর্যন্ত তা-ই পেয়েছেন। কোনও অতিরিক্ত বেতন তাঁকে দেওয়া হয়নি।” ফোনে এর বেশি কিছু বলতে চাননি বিউটিদেবী। রাজি হননি দেখা করতেও।
মনোজবাবুর ভবিষ্যত কী, তা আইন বলবে। তবে তাঁর সারদা-সংযোগের বোঝা এখনই বইছে পরিবার।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.