মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ ছিল, আর বিলম্ব নয়। সে কথা শিরোধার্য করেই বিল হাতে দিল্লি এসে বসেছিলেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। কখন বিদেশ সফর সেরে বিমানবন্দরে নামবেন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন, আর তিনি সই করিয়ে নেবেন সেই বিলে। আজ দুপুর থেকে অমিতবাবু বিমানবন্দরে। কিছুটা দেরি হলেও কলকাতা যাওয়ার পথে ঘণ্টাখানেকের জন্য নেমেছিলেন রাজ্যপাল। সেই সুযোগে লাউঞ্জে দাঁড়িয়েই বিলে সই করিয়ে নিলেন অমিতবাবু। পরে জানালেন, যে কাজে এসেছিলেন, তাতে সফল। এ বার বিলটি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে যাবেন। অর্থ মন্ত্রক ও কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রক হয়ে সেই বিল যাবে রাষ্ট্রপতির কাছে।
শুধু অমিতবাবুকে নির্দেশ দিয়েই ক্ষান্ত হননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ কলকাতায় রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে এক অনুষ্ঠানে দেখা হয় তাঁর। গোটা ঘটনাক্রম তাঁকে জানিয়ে বিলটিতে যত দ্রুত সম্ভব অনুমোদন দিয়ে দেওয়ার আর্জি জানান মমতা। রাষ্ট্রপতি তাঁকে বলেন, বিলটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ঘুরে তবে তাঁর কাছে আসবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলার অনুরোধ জানালে মুখ্যমন্ত্রীকে আশ্বাস দেন প্রণববাবু।
বিলে সই করাতেই গত কাল দিল্লি এসেছেন অমিতবাবু। সঙ্গে মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র। আজ সকালে দিল্লি পৌঁছন রাজ্যের অর্থসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীও। রবিবার দুপুরে দিল্লি বিমানবন্দরে নামার পর ঘণ্টা দু’য়েক পরেই কলকাতার বিমান ধরার কথা ছিল রাজ্যপালের। ঠিক হয়, ওই ফাঁকেই বিমানবন্দরে রাজ্যপালের সঙ্গে বৈঠক করে অনুমোদন নেবেন অমিতবাবু। |
বিল যাতে দ্রুত পাশ হয়, তার জন্য রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ করলেন মুখ্যমন্ত্রী।
রবিবার কলকাতা হাইকোর্টের অনুষ্ঠানে। ছবি: উৎপল সরকার |
কিন্তু এ দিন বিকেল পাঁচটা নাগাদ যখন রাজ্যপালের বিমান দিল্লির মাটি ছোঁয়, তখন দেড় ঘণ্টা দেরি হয়ে গিয়েছে। দুপুর থেকেই তাঁর জন্য বিমানবন্দরে গিয়ে বসেছিলেন অমিত। রাজ্যপাল নামতেই লাউঞ্জে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন তিনি। বিষয়টি সংক্ষেপে বলে বিলটিতে অনুমোদন নিয়ে নেন। আগামিকাল-পরশুর মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তাঁর কাছে বিলটি পৌঁছে দেবেন তিনি। সেই বিল তার পর অর্থ, আইন ও কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রকে যাবে। সব শেষে বিলটিতে অনুমোদন দেবেন রাষ্ট্রপতি।
দিল্লির অনেকেই আজ বলেছেন, যে তৎপরতায় বিমানবন্দরের লাউঞ্জে ধর্না দিয়ে বসে থেকে রাজ্যপালর অনুমোদন নিলেন অমিতবাবু, আগে এমন ঘটনা ঘটেছে কি না সন্দেহ।
প্রশ্ন হচ্ছে, এত তাড়াহুড়ো কেন?
রাজনৈতিক সূত্রে বলা হচ্ছে, তিনি যে কোনও ভাবেই সময় নষ্ট করতে চান না, সেটাই দেখাতে চাইছেন মমতা। ঘনিষ্ঠ মহলেও তিনি এ কথা জানিয়েছেন। তাই আজ নিজের দায়িত্ব সেরে অমিতও খুশি। জানিয়েছেন, যে কাজে এসেছিলেন, হয়ে গিয়েছে। এ বারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে যাওয়ার পালা।
এর আগে বাম আমলে যে বিলটি এসেছিল, তা দ্বিতীয় বার রাষ্ট্রপতির সইয়ের জন্য পাঠানোর পরে দীর্ঘদিন পরে ছিল। সেই দেরি নিয়ে প্রশ্ন তুলে তৃণমূল নেতৃত্ব এখন বিঁধছেন বামেদের। নিজেদের বেলায় যাতে তেমন কিছু না হয়, সে দিকেই এখন নজর রাখছেন মমতা। তাই এক দিকে রাজ্যপালের অনুমোদন নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে পৌঁছে দেওয়া, অন্য দিকে তাড়াতাড়ি সইয়ের জন্য রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ জানানো দুই কাজই একসঙ্গে করছেন মমতা।
অনেকেই মনে করছেন, সারদা কাণ্ডের জেরে রাজ্যে বিপুল পরিমাণ মানুষ আর্থিক প্রতারণার সম্মুখীন হওয়ায় জনমানসে রাজ্য সরকারের ভাবমূর্তির যে ক্ষতি হয়েছে, দ্রুত বিলটি পাশ করিয়ে তা পূরণ করতে চাইছেন মমতা। বিলের রেট্রোস্পেকটিভ এফেক্ট নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তবু দ্রুত বিলটি পাশ করাতে পারলে মমতা অন্তত বলতে পারবেন, বামেদের থেকে অনেক বেশি তৎপর তিনি।
|