মঙ্গলবারই বিধানসভায় অর্থলগ্নি সংস্থার দৌরাত্ম্য ঠেকাতে নতুন বিল পাশ হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ, রবিবার রাজ্যপাল বিদেশ সফর শেষে দিল্লির মাটিতে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গেই ওই বিলে তাঁর অনুমোদন নিয়ে নিতে হবে। সেই উদ্দেশ্যে আজ দিল্লি এসেছেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র এবং মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র। কাল সকালে আসবেন অর্থসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীও। রাজ্যপাল দিল্লি বিমানবন্দরে পৌঁছবেন রবিবার দুপুরে। সেখানেই ঘন্টা দুয়েক অপেক্ষার পর কলকাতার বিমান ধরার কথা তাঁর। ওই ফাঁকে বিমানবন্দরেই রাজ্যপালের সঙ্গে বৈঠক করে ওই বিলে অনুমোদন নেওয়া হবে। তার পর অর্থমন্ত্রী ওই বিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে পৌঁছে দেবেন।
বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার কাজকারবার বন্ধ করতে রাজ্য সরকার যে যথেষ্ট তৎপর, তা বোঝাতে আগেই মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, রাজ্য সরকার দ্রুত নতুন বিলটিকে আইনে পরিণত করার চেষ্টা করবে। তাঁর অভিযোগ, বাম আমলের বিলটি ত্রুটিপূর্ণ এবং অসম্পূর্ণ ছিল বলেই রাষ্ট্রপতির অনুমোদন মেলেনি। তা ছাড়া বামফ্রন্ট সরকার বিল তৈরি করলেও তা পাশ করাতে যথেষ্ট তৎপর হয়নি। এবং সেই কারণেই তড়িঘড়ি নতুন বিলে রাজ্যপাল এবং কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদন আদায় করতে চাইছেন তিনি। এম কে নারায়ণন কলকাতায় পৌঁছনো পর্যন্তও অপেক্ষা করতে চাইছেন না মমতা। সেই কারণেই আজ বিকেলে পানিহাটিতে দলনেত্রীর সভা থাকলেও সেখানে না গিয়ে দিল্লির বিমান ধরেন অমিতবাবু। সঙ্গে মুখ্যসচিব। |
ওই জনসভায় মমতা আজ এ প্রসঙ্গে বলেন, “অমিতদা এখানে আসার কথা বলেছিলেন। আমি অমিতদাকে বলেছি, আপনি কাজের মানুষ। কাজের মানুষকে লোকে কাজ করতে দেখতেই ভালবাসে। দিল্লি বিমানবন্দরেই রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে বিলে অনুমোদন নিয়ে নেবেন।”
মহাকরণ সূত্রের বক্তব্য, অর্থসচিব ও মুখ্যসচিবকেও দিল্লিতে পাঠানোর উদ্দেশ্য হল রাজ্যপাল, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ও অর্থ মন্ত্রক বিলের কোনও অংশ নিয়ে প্রশ্ন করলে তাঁরা তার ব্যাখ্যা দিতে পারেন। অমিতবাবু নিজে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে বিলটি পৌঁছে দিয়ে এর পক্ষে আগাম সওয়ালও সেরে রাখতে পারবেন। রাজনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, মমতা এখন ইউপিএ-তে নেই। কলকাতা থেকে রোজই কেন্দ্রকে আক্রমণ করছেন। এমনকী সিবিআইকে লেখা সুদীপ্ত সেনের চিঠিতে অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের স্ত্রী নলিনী চিদম্বরমের নাম উঠে আসায় তা নিয়েও কটাক্ষ করতে ছাড়েনি তৃণমূল। বিধানসভায় বিলটি পাশ করানোর সময় বামেদের শুধু নয়, কংগ্রেসের আনা সংশোধনীগুলির একটিও গৃহীত হয়নি। কাজেই বিল পাশ করাতে কেন্দ্রের সহযোগিতা নিয়ে তৃণমূল শিবিরে সংশয় রয়েছে। তবে কেন্দ্র নিজেও বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চাইছে। সে দিক দিয়ে দেখলে ইউপিএ সরকার বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি না করার নীতিও নিতে পারে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে বিলটি যাবে অর্থ মন্ত্রকে। সেই মন্ত্রক ছাড়পত্র দিলে বিলটি রাষ্ট্রপতির কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। অর্থ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গের বিলটি মন্ত্রকে এলে সেখানে কোনও অসঙ্গতি রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে। বিশেষত এই আইন আদালতে চ্যালেঞ্জ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কি না, সে দিকেও নজর দেওয়া হবে। মহারাষ্ট্র, অসম, তামিলনাড়ুর মতো রাজ্যে ইতিমধ্যেই এই ধরনের বিল পাশ হয়েছে। অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের বিলটি একেবারে যাতে অসামঞ্জস্যপূর্ণ না হয়, তা-ও দেখা দরকার। আগামী দু’দিন এই সব বিষয়েই কেন্দ্রের কাছে আগাম সওয়াল করে রাখতে চাইছেন অমিত মিত্র, সঞ্জয় মিত্ররা। |