কম খরচে লাভ বেশি হওয়ায় বিকল্প চাষে উৎসাহী হচ্ছেন রাজ্যের চাষিরা। চলতি মরসুমে অনেকেই জল ও শ্রমিকের অভাবে বোরো ধান চাষ করতে পারেননি। তাঁদের অনেকেই বিকল্প চাষে মন দিয়েছেন। আর কম জলে এবং অপর্যাপ্ত শ্রমিক পেলেও চাষ ভালই হয়েছে। লাভের আশায় তাই দিন গুনছেন চাষিরা। সাদা তিল, কালো তিল, বাদাম, ভুট্টার চাষ বেড়েছে রাজ্যে, জানান রাজ্য কৃষি অধিকর্তা পরিতোষ ভট্টাচার্য।
কৃষি দফতর সূত্রের খবর, সেচের জলের অপ্রতুলতার জন্য রাজ্যে চলতি বছরে প্রায় ২ লক্ষ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হচ্ছে না। আর এই ঘাটতি পূরণে গ্রীষ্মকালীন মুগ, ভুট্টা, বাদাম ও তিল চাষের উপরে জোর দিয়েছে রাজ্য কৃষি দফতর। রাজ্যে সাধারণত ১৪ লক্ষ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়ে থাকে। চলতি বছরে প্রায় ১৫ লক্ষ হেক্টর জমিতে বোর চাষ হয়েছিল। কিন্তু গত খরিফ মরসুমে স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা কম বৃষ্টি হওয়ায় বিভিন্ন জলাধারে ধরে রাখা জল ব্যবহার করা হয়। যার পরিণতিতে চলতি বোরো মরসুমে চাহিদার তুলনায় জলধারগুলি থেকে কম জল পাওয়া গিয়েছে। অনেক জলাধার থেকে কার্যত জল পাওয়া যায়নি। স্বাভাবিক ভাবেই এ বারে বোরো চাষের এলাকা ২ লক্ষ হেক্টর কমে দাঁড়িয়েছে ১২ লক্ষ ১০ হাজার হেক্টর।
পরিতোষ ভট্টাচার্য বলেন, “এই ঘাটতি পূরণের জন্য ডাল, তৈলবীজ ও ভুট্টা চাষের এলাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেই তৈলবীজের অন্যতম হচ্ছে সাদা তিলের চাষ।” |
এ ছাড়া চলতি মরসুমে এখনও পর্যন্ত ১ লক্ষ ৬০ হাজার হেক্টর এলাকায় তিলের চাষ হয়েছে। তিল চাষের জমির পরিমাণ অনেকটাই বেড়ে যাবে রাজ্যে। বেশিরভাগ তিল চাষের জমি দখল করেছে সাদা তিল। কালো তিলের থেকে ৪৫ শতাংশ তেল পাওয়া যায়। সেই তেলের গুণমানও খুব উৎকৃষ্ট হয় না। কিন্তু সাদা তিলের থেকে ৫৫ শতাংশ তেল পাওয়া যায়। সেই তেলের মান যথেষ্ঠ ভাল। খাওয়ার জন্য সেই তেল ব্যবহার করা যায়। এ ছাড়া কালো তিলের বাজার দরের চেয়ে সাদা তিলের বাজার দর বেশ ভাল। তাই চাষিরা সাদা তিল চাষে উৎসাহ পাচ্ছেন বলে কৃষি দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন। গত বছর ১ লক্ষ ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে তিলের চাষ হয়েছিল। চাষের পরিমাণ অনেকটা বাড়বে বলে কৃষি কর্তাদের আশা। বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, হুগলি ও নদিয়া জেলায় তিল চাষ ভাল হয়। এই চারটি জেলাতেই তিল চাষে জোর দিচ্ছে কৃষি দফতর। চাষিদের বীজ সরবরাহও করা হবে ।
শুধু তিলই নয়, বাদাম চাষেও লাভের মুখ দেখছেন চাষিরা। পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর ও হুগলিতে চাষ করা হচ্ছে। কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, তিনটি মরসুমে বাদাম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৭ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে এখনও পর্যন্ত রাজ্যে ৩৩ হাজার হেক্টর এলাকায় বাদাম চাষ করা হয়েছে। এ ছাড়া ৩৩ হাজার হেক্টর জমিতে মুগ চাষ করা হয়েছে।
হুগলির পোলবা-দাদপুর ব্লকের গোস্বামী মালপাড়া গ্রামের চাষি কাশীনাথ ঘোষ প্রায় সাত বিঘা জমিতে তিল চাষ করেছেন। তার মধ্যে প্রায় চার বিঘা জমিতে রয়েছে সাদা তিল। তাঁর কথায়, “জল কম লাগে। সাদা তিলের তেল বেশি হয়। তাই লাভ বেশি।” নদিয়ার কালীগঞ্জ থানার পাঁচখেলা গ্রামের চাষি আরমান শেখও তিল চাষ করেন। তিনি বলেন, “তিল চাষ করলে জল ও খেতমজুর কম লাগে। লাভ বেশি হয়।” |