লালবাজার যেমন কলকাতা পুলিশের সদর দফতর, তেমনই রাজ্য পুলিশের সদর দফতর হতে চলেছে ভবানী ভবন।
দৈনন্দিন কাজের সঙ্গে যুক্ত রাজ্য পুলিশের বিভিন্ন বিভাগকে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা বাম আমলেই হয়েছিল। রাজ্য পুলিশও এই দাবি করে আসছিল। কারণ অন্য রাজ্যে পুলিশ ডাইরেক্টরেটের জন্য আলাদা বাড়ি থাকলেও এ রাজ্যে তার অবস্থান মহাকরণে। রাজ্য পুলিশের নিজস্ব ভবন তৈরির জন্য প্রথমে বিদ্যাসাগর সেতুর ও পারে হাওড়ার দিকে একটি জমি চিহ্নিত করা হয়। বাড়ির নকশাও তৈরি হয়েছিল। কিন্তু জমিটির মালিক সেনাবাহিনীর অনুমতি না মেলায় সেই পরিকল্পনা বাতিল করতে হয়।
স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা জানান, রাজ্য পুলিশের সদর দফতর তৈরির জন্য কলকাতা বা তার আশপাশে উপযুক্ত জায়গা পাওয়া যায়নি। তাই ভবানী ভবনকেই বেছে নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে এই বাড়িতে এডিজি (সিআইডি), রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের ডিজি, প্রেসিডেন্সি রেঞ্জের ডিআইজি-সহ পুলিশের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদের পুলিশ কর্তার অফিস রয়েছে। এ বার মহাকরণ থেকে রাজ্য পুলিশের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ ডাইরেক্টরেটও চলে যাবে ভবানী ভবনে। স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “রাজ্য পুলিশের ডিজি, ডিআইজি (আইনশৃঙ্খলা) এবং কন্ট্রোল রুম ছাড়া পুলিশের ডাইরেক্টরেট চলে যাবে ভবানী ভবনে। সেখানেও ডিজি-র অফিস থাকবে।” রাজ্য পুলিশের যে সব কর্তার অফিস মহাকরণে, তাঁদেরও চলে যেতে হবে নতুন কার্যালয়ে। মহাকরণের খবর, সেখান থেকে ডাইরেক্টরেট ও পুলিশ কর্তাদের অফিস তুলে নেওয়ার ব্যাপারে প্রশাসনেরই একটি অংশের আপত্তি ছিল। তাদের যুক্তি, মুখ্যমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিবরা বসেন মহাকরণে। যে কোনও প্রয়োজনে পুলিশ কর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে হয় তাঁদের। অনেক সময় কোনও সিদ্ধান্ত দ্রুত কার্যকর করতে ডাইরেক্টরেটের কিছু অফিসারকে প্রয়োজন হয়। এই অবস্থায় গোটা পুলিশি ব্যবস্থা ভবানী ভবনে চলে গেলে কাজের অসুবিধা হতে পারে। পাল্টা মত হল, সাধারণ ভাবে মুখ্যমন্ত্রী বা মুখ্যসচিব-স্বরাষ্ট্রসচিবদের তাৎক্ষণিক বৈঠকে ডিজি এবং ডিআইজি (আইনশৃঙ্খলা)-কে ডাকা হয়। সে কারণেই তাঁদের অফিস মহাকরণ থেকে সরানো হচ্ছে না।
ভবানী ভবনে পুলিশের কয়েকটি বিভাগ ছাড়াও রয়েছে রাজ্য মানবাধিকার কমিশন, তথ্য কমিশনের অফিস। রয়েছে পূর্ত দফতর, ক্রেতা সুরক্ষা, সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরের অফিস। ক্রেতা সুরক্ষা আদালতও বসে ভবানী ভবনে। এ ছাড়া সরকারের আরও কয়েকটি ছোট দফতরের অফিস রয়েছে ভবানী ভবনে। এদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করে ভবানী ভবন ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ পাঠাতে শুরু করেছেন স্বরাষ্ট্র সচিব।
২৯ এপ্রিল এমনই একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে রাজ্য মানবাধিকার কমিশনকে। ১৯৯৫ সাল থেকে এই বাড়ির প্রায় দশ হাজার বর্গফুট জায়গা নিয়ে চলছে কমিশনের অফিস। তাদের সল্টলেকে সংখ্যালঘু উন্নয়ন নিগমের অফিসে উঠে যেতে বলা হয়েছে। কমিশনের এক মুখপাত্র চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করে জানান, তাঁরা এই নিয়ে আলোচনা করে পরের সপ্তাহে উত্তর দেবেন। সরকার চাইলেও ভবানী ভবন থেকে সল্টেলেকে চলে যেতে কমিশন যে খুব আগ্রহী নয়, তেমনই ইঙ্গিত দেন ওই মুখপাত্র।
সরকারের এক মুখপাত্র জানান, রাজ্য পুলিশের সদর কার্যালয় হিসাবে ভবানী ভবনকে ঠিক করার কারণ এই বাড়িটি পুলিশি কাজকর্মের সঙ্গে দীর্ঘদিন জড়িত। মুখ্যমন্ত্রীও এ বিষয়ে সম্মত হয়েছেন। তবে রাজ্য পুলিশের আইবি, টেলি যোগাযোগের মতো বিভাগগুলি এখন যেখানে আছে, সেখানেই থাকবে বলে জানান তিনি। প্রশাসনের একটি অংশের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী চাইছেন মহাকরণে অর্থ, স্বরাষ্ট্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ দফতর রেখে বাকি বিভাগ অন্যত্র সরিয়ে ফেলতে। মহাকরণের হেরিটেজ অংশটিকে সংরক্ষিত রেখে বাকি অংশ নতুন করে সাজিয়ে তুলতে চান মুখ্যমন্ত্রী। |