দিল্লিতে কংগ্রেসের গদি উল্টে দেওয়ার ডাক দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সারদা-কাণ্ডকে সামনে রেখে মহাকরণের গদি থেকে তাঁর অবসর দাবি করেছে কংগ্রেস। একই দিনে আলাদা আলাদা সভায়।
পয়লা বৈশাখের আগে পর্যন্ত রাজ্যে লগ্নি সংস্থাগুলির কাজকর্ম নিয়ে তিনি কিছু জানতেন না বলে দাবি করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সেই মন্তব্যের জের টেনেই এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর ইস্তফার দাবি তুলেছেন কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী দীপা দাশমুন্সি। শনিবার শ্যামবাজারে কংগ্রেসের এক সভায় দীপা বলেছেন, “যদি চিট ফান্ডের রমরমার খবর মুখ্যমন্ত্রী হয়ে আপনার জানা না থাকে, তা হলে আপনি অবসর নিন। এই ধরনের চিট ফান্ডের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত, তাঁদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে শাস্তি দিতে না পারলে মুখ্যমন্ত্রীর পদে আর থাকার অধিকার নেই আপনার। অবসর নিন আপনি।” ওই সভায় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যও বলেন, “এই সরকার আর নেই দরকার এই বার্তা নিয়ে মানুষের কাছে যেতে হবে কংগ্রেস কর্মীদের।” |
সারদা-কাণ্ডের সিবিআই তদন্তের দাবিতে এ দিন ওয়েলিংটন থেকে শ্যামবাজার পর্যন্ত মিছিল করে কংগ্রেস। মিছিল শেষে সভায় দীপা অভিযোগ করেন, লগ্নি সংস্থাগুলির সঙ্গে যুক্ত প্রতারকদের গ্রেফতার না করে তাঁদের আড়ালের চেষ্টা করছেন মমতা। তৃণমূলের বেশ কিছু সাংসদ, মন্ত্রীর নাম সারদা-কাণ্ডে জড়িয়ে যাওয়ায় তাঁদের লুকোতেই মমতা সিবিআই তদন্তে রাজি হচ্ছেন না বলেও অভিযোগ করেন তিনি। পাশাপাশি, ঘুষ কেলেঙ্কারিতে রেলমন্ত্রী পবন বনশলের ভাগ্নের সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে এ দিন রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী বলেন, “এই ঘটনা থেকে প্রমাণ হল, সিবিআইকে সরকার নিয়ন্ত্রণ করে না। তা হলে এখানেই বা কেন সিবিআই তদন্ত হবে না?”
এ দিন মমতার বিরুদ্ধে ফের সরব হন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌতম দেব। তাঁর দাবি, “আমি তৃণমূলের গৃহশিক্ষক নই। আরও তিন বছর ওদের সরকার চালাতে হলে মমতাকে দিল্লি পাঠিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী করে দিয়ে অন্য মুখ্যমন্ত্রী খোঁজা উচিত।” এ দিন বারাসতে সিপিএমের জেলা কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে গৌতমবাবু আরও বলেন, “আমি জ্যোতিষীর মতো দিনক্ষণ বলতে পারব না, তবে তৃণমুল দলটা মমতার জন্যই উঠে যাবে। কারণ তিনি দলের যেমন সম্পদ, তেমনই বোঝাও।” তৃণমূলে ভাঙন ধরছে বলে দাবি করে গৌতমবাবুর কটাক্ষ, “আমাদের রাজনৈতিক জীবনে অনেক দলের দাপট, শুয়ে পড়া, টুকরো-টুকরো হয়ে যাওয়া দেখেছি। তৃণমূল ভাঙা শুরু করেছে। তৃণমূলের কিছু কংগ্রেসে যাবে। কংগ্রেস বঁড়শি ফেলে বসে আছে। তৃণমূলের ছেলেরা বঁড়শিতে মুখ দিচ্ছে। কিছু বিজেপিতে আসবে। কিছু আমরাও নিয়ে নেব। আমরা ছেলেদের বলেছি, যারা আসছে ধরো।” |
তবে লগ্নি সংস্থা বিতর্কে সিপিএমকেই দায়ী করেছেন তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। এ দিন দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরের এক সভায় তিনি বলেন, “যারা লগ্নি সংস্থার তছরুপে জড়িত, তাদের শাস্তি হবে। সঞ্চয়িতা এবং ওভারল্যান্ড কারা করেছিল? সঞ্চয়িতার সঙ্গে যুক্তদের গ্রেফতার করতে সিপিএমের দু’বছর লেগেছিল। কিন্তু আমরা সুদীপ্ত সেনকে তিন দিনের মধ্যে গ্রেফতার করেছি। শ্যামল সেনের নেতৃত্বে কমিশন তৈরি করা হয়েছে। ৫০০ কোটির তহবিলও করা হয়েছে।”
কংগ্রেসের মতোই সারদা-কাণ্ডে রাজ্য বিজেপি সিবিআইয়ের দাবি করলেও দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি এস এস অহলুওয়ালিয়া এ দিন কলকাতায় কোল ইন্ডিয়ার দফতরের সামনে জনসভায় বলেন, “রাজ্য সরকার অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সেনের নেতৃত্বে একটি কমিশন গড়েছে। আশা করছি, কমিশনের রিপোর্ট ঠিকঠাক হবে।” অবশ্য দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ এ দিনও সিবিআই তদন্ত দাবি করেছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত আমানতকারীদের উদ্দেশে সিপিএম এবং তৃণমূলকে বাদ দিয়ে গণ কমিটি গড়ে আন্দোলন করার ডাক দিয়ে এসইউসির রাজ্য সম্পাদক সৌমেন বসু বলেন, “ক্ষতিগ্রস্ত আমানতকারীরা আত্মহত্যা করবেন না। বরং প্রাণ বাজি রেখে আন্দোলন করুন। তার জন্য নন্দীগ্রামের ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির মতো কমিটি গড়ে তুলুন।” |