আমার ক্রিকেট জীবনের রোলারকোস্টার চলছেই। শুক্রবার রাতে রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত একটা জয়ের পরে পুরো ফোকাসটাই সরে গিয়েছে ইংল্যান্ডে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির টিম থেকে আমার বাদ পড়ার উপর। হ্যাঁ, আমি হতাশ। কিন্তু বিরক্ত নই। হ্যাঁ, আমি ভেঙে পড়েছি। কিন্তু যুদ্ধ ছেড়ে পালাব না। আমি আমার যুদ্ধ চালিয়ে যাব, রান করব, কামব্যাকও করব। সিম্পল।
এমনিতেই কামব্যাক ব্যাপারটা আমার জীবনে নতুন নয়। আগেও করেছি, বিশ্বাস আছে যে আবার করতে পারব। এই ব্যাপারটা নিয়ে আমি নিশ্চিত। কারণ, মনে হয় আমি নিজের খেলাটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি। কিন্তু খচখচানিটা অন্য জায়গায়। অনেকেই মনে করছেন যে, নিজের আবেগের উপর আমার খুব একটা নিয়ন্ত্রণ নেই। যেটা সম্পূর্ণ ভুল। বেশির ভাগ সময়ই আমি যেটা করি, তার উল্টো মানে করা হয়।
শুক্রবারের ম্যাচটাকে উদাহরণ হিসেবে ধরুন। রাহুল দ্রাবিড়ের সঙ্গে আমার কোনও ঝামেলাই হয়নি। যেটা লোকে ভাবছে, সেটা ভুল। কিন্তু এই যে ধারণাটা তৈরি হয়ে গেল, সেটাই বোধহয় আমাকে স্বস্তিতে থাকতে দিচ্ছে না। কী হয়েছিল, শুনুন।
ঘটনাটা শুরু হয় যখন শেন ওয়াটসনের সঙ্গে আমার ওপেনিং পার্টনার মনবিন্দর বিসলার কথা কাটাকাটি বেধে যায়। ওয়াটসন কেন ও ভাবে রেগে গেল, সেটা বুঝতে পারি। একই ওভারে বিসলা ওকে পরম তাচ্ছিল্যে কয়েকটা বাউন্ডারি মেরে দেয়। দু’জনের মধ্যে কথা কাটাকাটি চলে। আর আমি স্রেফ আম্পায়ারকে বলতে গিয়েছিলাম যে, তাঁরা যেন ওয়াটসনকে ঠান্ডা হতে বলেন। রাহুলও সেই সময় ওখানে চলে আসে। কিন্তু ওর সঙ্গে আমার কোনও কথাই হয়নি। |
নাইটদের পার্টিতে সস্ত্রীক গম্ভীর। |
যত দূর জানি, রাহুলকে আমি বরাবরই শ্রদ্ধা করে এসেছি। টিমমেট হিসেবে তো বটেই, ক্রিকেটের এক জন গ্রেট হিসেবেও। আমাদের মধ্যে এক বারের জন্যও কোনও ঝামেলা হয়নি। মাঠে যা-ই হয়ে থাকুক, সেটা মাঠেই ফেলে আসা হয়েছিল। যে ঘটনাটা আদৌ ঘটেনি, সেটা কেন লোকে এত ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখাচ্ছে, বুঝতে পারছি না। মনে হয় ওঁরা খুব সাদামাঠা পরিস্থিতিতেও নাটকীয় মশলা যোগ করতে চান। আমার মহান বন্ধু শেন ওয়ার্ন এঁদেরই এক জন। ইডেন থেকে এত দূরে বসেও ও যে আমার কথা ভাবছিল, সেটা আমার সৌভাগ্য! তবে আমি খুব একটা আশ্চর্য হইনি, কারণ এটাই প্রথম বার নয়। অস্ট্রেলীয়রা বরাবরই একজোট হয়ে শিকারে বেরোয়। এটা থেকেই বোঝা যায় যে আমরা যা করছি, ঠিকই করছি। যেটা ওদের সহ্য হচ্ছে না। গুড লাক ওয়ার্নি!
আর এক দিন দেখলাম মিডিয়ার একাংশ বলছে যে, আমার সঙ্গে বালাজির তীব্র ঝামেলা হয়েছে। পরে আরও বলা হল, আমার আর কোচ ট্রেভর বেলিসের মধ্যেও ঝামেলা হয়েছে। অলীক গল্পের সেরা উদাহরণ! আমি শুধু বালাকে এটাই বলেছিলাম যে, যা প্ল্যান করেছি সেই মতো বল করো। সেটাকে কি ঝামেলা বলে? আমাকে হয়তো ব্যাপারটা চেঁচিয়ে বলতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু দর্শকদের চিৎকারের জন্যই আমাকে গলা তুলতে হয়েছিল। এর মধ্যে ওকে বকাবকি করার কোনও প্রশ্নই নেই। বেলিস আর আমি যুদ্ধ করতে পারি একমাত্র গল্ফ ঘিরে। ও এই খেলাটায় কিংবদন্তি। আর আমি? জঘন্য!
আমার মনে হয় ভারতীয় ক্রিকেটের পক্ষে ‘সেনসেশনাল’ মিডিয়ার চেয়ে সংবেদনশীল মিডিয়া বেশি জরুরি। যাক গে। আমার শ্বশুর-শাশুড়ি নিশ্চয়ই ভাবা শুরু করে দিয়েছেন যে জামাই হিসেবে আমি মোটেও উপযুক্ত নই!!!
সত্যি বলতে কী, আমি মনে করি শুক্রবার আমরা খুব ভাল ক্রিকেট খেলেছি। আর ইউসুফের অপরাজিত ইনিংস, কালিসের অবদান বা আমাদের দলগত বোলিংয়ের উপর থেকে ফোকাসটা যদি সরিয়ে নেওয়া হয়, তা হলে সেটা খুব লজ্জার ব্যাপার হবে। দেখা যাক আরও পাঁচ বার আমরা এই পারফরম্যান্সটা করে দেখাতে পারি কি না! |