এক ঝাঁক পুরুষ। পরনে তাঁদের প্রতিবাদের প্রতীক কালো পাজামা-পাঞ্জাবি। কপালে গোলাপি ফেট্টিতে লেখা ‘কালা আইন গো ব্যাক।’ তাঁদের যাবতীয় রাগ কেন্দ্রীয় সরকার প্রস্তাবিত বিবাহ আইন সংশোধন বিল নিয়ে। সরকার নাকি চিরকাল মেয়েদের প্রতি পক্ষপাতিত্ব চালিয়ে যাচ্ছে। তার উপর আবার এই নতুন বিল আইনে পরিণত হলে মেয়েরা ছেলেদের নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাবে। তাই মে মাসের দুর্দান্ত গরমের দুপুরে রোদে পুড়ে তাঁরা প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন প্রেস ক্লাবের মাঠে। স্লোগান দিচ্ছিলেন, “কালা আইন নিপাত যাক। পুরুষেরা পুরুষের পাশে এসে দাঁড়ান।” নিজেদের জোটের নাম তাঁরা দিয়েছেন ‘হৃদয়।’
বিক্ষুব্ধদের এই দলে ২৫ থেকে ৫৫ সব বয়সী পুরুষেরাই ছিলেন। মেয়েদের প্রতি তাঁরা খড়্গহস্ত, কারণ তাঁদের অভিযোগ, বউ-রা তাঁদের জীবন ছারখার করে দিয়েছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বউয়ের হাতে নাস্তানাবুদ হয়েও পুরুষকে আখেরে সাজা ভোগ করতে হয়। তার উপর নতুন আইন হলে আর রক্ষে থাকবে না।
কিন্তু কী বলা হয়েছে প্রস্তাবিত এই বিলে? বিল অনুযায়ী, স্ত্রী বিবাহবিচ্ছেদ চেয়ে মামলা করলে স্বামী তার বিরোধিতা করতে পারবেন না, কিন্তু স্বামী বিবাহবিচ্ছেদের মামলা করলে আর্থিক সমস্যার কারণ দেখিয়ে স্ত্রী তার বিরোধিতা করতে পারেন। বিচ্ছেদ হলে স্বামীর অর্থ-সম্পত্তির অর্ধেক স্ত্রী পাবেন। কিন্তু স্ত্রী সম্পত্তির অধিকারিণী হলে তাঁকে বিচ্ছেদের পরে স্বামীকে টাকা দিতে হবে না।
এই সংগঠনের প্রধান অমিত গুপ্ত উত্তেজিত হয়ে বলেন, “আইনের কেমন দ্বিচারিতা দেখুন! পাজি মেয়ে তো কম নেই। এই আইনের সাহায্য নিয়ে অনেক মেয়েই সম্পত্তি হাতানোর জন্য একের পর এক বিয়ে আর ডিভোর্স করবে।” আর এক সদস্য ডি এস রাওয়ের কথায়, “ধরা যাক ছেলেটির প্রচুর টাকা ফ্ল্যাট কিনে ঋণ আছে। বাড়িতে বাবা-মা অসুস্থ, বোনের বিয়ে দেওয়া বাকি। বিবাহবিচ্ছেদের জন্য তাঁকে যদি বউকে অর্ধেক সম্পত্তি লিখে দিতে হয়, চলবে কী করে?”
এই সংগঠনের সদস্য নিউ আলিপুরের এক বাসিন্দার অভিযোগ, বউ তাঁর উপর অ্যাসিড ছুড়েছেন। বেলেঘাটা-র বাসিন্দা আর এক সদস্যের দাবি, বউ মেরে-মেরে সব দাঁত ফেলে দিয়েছেন। হাঁ করে ভাঙা দাঁত দেখিয়ে বললেন, “মারের ভয়ে গত তিন বছর বাড়িছাড়া।” সব শুনে রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “এ থেকেই বোঝা যায়, আমাদের দেশে মেয়েদের জন্য কিছু করতে গেলে কত রকম বাধার মুখে পড়তে হয়।” |