একই জমির অধিকার চাইছে দু’টি পক্ষ। এক দিকে একটি বেসরকারি সংস্থা, অন্য দিকে বিধাননগর পুরসভা। দু’পক্ষেরই দাবি, নগরোন্নয়ন দফতর তাদের জমি বরাদ্দ করেছে। আজ, রবিবার সেই জমিতেই একটি সুইমিং পুল প্রকল্পের শিলান্যাস হতে চলেছে। এই নিয়ে জোর বিতর্ক। যদিও বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর।
সম্প্রতি পুরসভার চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তী জানান, সি জে ব্লকের (চেয়ারপার্সনের ওয়ার্ডে) একটি প্লটে ওই সুইমিং পুল হবে। পুরসভা সূত্রে খবর, আবেদনের ভিত্তিতে নগরোন্নয়ন দফতর ওই জমিটি সুইমিং পুল তৈরির জন্য বিধাননগর পুরসভাকে দেয়।
নগরোন্নয়ন দফতরের সূত্রের খবর, জমিটি আটের দশকে একটি বেসরকারি সংস্থাকে দেওয়া হয়েছিল। দীর্ঘদিন জমিটি অব্যবহৃত অবস্থায় ছিল। এ ভাবে পড়ে থাকা জমির লিজ বাতিল হতে পারে বলে জানায় নগরোন্নয়ন দফতর। কিছু ক্ষেত্রে জমি-মালিকদের নোটিসও পাঠানো হয়। এই জমির ক্ষেত্রেও তেমন ঘটেছিল। পরে চলতি বছরে ফেব্রুয়ারি মাসে সেই জমি পুরসভাকে দিয়ে দেওয়া হয়।
সেই জমিতেই রবিবার সন্ধ্যায় প্রকল্পের শিলান্যাস। আমন্ত্রণপত্রও বিলি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ইতিমধ্যেই সেই বেসরকারি সংস্থা নগরোন্নয়ন দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। সূত্রের খবর, সংস্থার এক কর্ণধার দফতরকে অভিযোগ জানান যে, জমি বরাদ্দের পর থেকে সরকারের প্রাপ্য তাঁরা মিটিয়ে দিয়েছেন। এমনকী, চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত লাগাতার জমির রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদনও করেছেন। কিন্তু নগরোন্নয়ন দফতর সাড়া দেয়নি। সেই অবস্থায় তাঁদের না জানিয়ে কী ভাবে জমি অন্যকে দেওয়া হল, প্রশ্ন ওই সংস্থার। ওই বেসরকারি সংস্থার কর্ণধার অমিত বসুকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “বিষয়টি আদালতের বিচার্য। মন্তব্য করব না।” সূত্রের খবর, জমির মালিকানা সংক্রান্ত তথ্য ওই সংস্থা নগরোন্নয়ন দফতরকে দিয়েছে।
এর জেরেই বিতর্ক দানা বেঁধেছে। কারণ ওই বেসরকারি সংস্থার কর্তারা যে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন, সে কথা নগরোন্নয়ন দফতরও জানে বলে স্বীকার করেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেন, “জমিটি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে ছিল বলে শুনেছি। এখন সেই জমির লিজ বাতিল হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে বলেছি।”
খোদ পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সব্যসাচী দত্ত বলেন, “ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে বিষয়টি নিয়ে আমি পুরোপুরি অন্ধকারে।” তাঁর দাবি, কবে এবং কী ভাবে পুরসভা জমিটি পেল, চেয়ারম্যান পারিষদ ও কাউন্সিলরদের বৈঠকে এমন কোনও প্রকল্পের সিদ্ধান্ত তাঁর জানা নেই। পাশাপাশি, এই সুইমিং পুল তৈরির জন্য পুর-বাজেটে কোনও ব্যয় বরাদ্দও করা হয়নি।
তার পরেও কী ভাবে বিতর্কিত জমিতে প্রকল্পের শিলান্যাস হবে? আমন্ত্রণপত্রে রয়েছে পুরমন্ত্রীর নামও। পুরমন্ত্রী বলেন, “বিষয়টি আদালতে গড়িয়েছে। এ অবস্থায় শিলান্যাস করা ঠিক নয়।” শনিবার রাতে এ বিষয়ে পুরমন্ত্রী জানান, তাঁর বারণ সত্ত্বেও কেন অনুষ্ঠানটি হচ্ছে, তা তিনি জানেন না। তবে নিজে ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন না বলে জানান তিনি।
শনিবার রাত পর্যন্ত বিধাননগর পুরসভার তরফে অনুষ্ঠান বন্ধের কথা জানানো হয়নি। বরং সল্টলেক মহকুমা প্রশাসনের দাবি, ওই প্রকল্পটি সাংসদ তহবিলের অর্থে হবে। প্রায় ৮০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে এই প্রকল্পে। |