অগ্নিকাণ্ড মোকাবিলায় শহরের ৪৬টি জায়গায় জলের উৎস তৈরি করল পুরসভা। কোথাও আগুন লাগার ঘটনা ঘটলে ওই সব জায়গা থেকে জল ভরতে পারবে দমকল। পরপর কয়েকটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় জলের জোগান কম থাকায় অস্বস্তিতে পড়তে হয় দমকল বিভাগকে। নতুন ভাবে গড়ে ওঠা জলের উৎস এ বার অগ্নি-নির্বাপণে অনেকটা সাহায্য করবে বলে মনে করছেন দমকলের কর্মীরা।
গত বছর হাতিবাগান বাজার পুড়ে যাওয়ার সময়ে জলের সমস্যাটা ভীষণ ভাবে টের পেয়েছিলেন দমকলের অফিসারেরা। কাছাকাছি জলের উৎস বলতে ছিল হেদুয়া পার্কের সুইমিং পুল। ওই পুলে জল কম থাকায় আগুন নেভানোর কাজে ব্যাঘাত ঘটে। সেই সময়ে দমকলের ডিজি দুর্গাপ্রসাদ তারানিয়া বলেছিলেন, “এমনিতেই শহরটা জতুগৃহ। তার উপরে আগুন নেভাতে পর্যাপ্ত জলের উৎস না থাকায় বিপাকে পড়তে হয় দমকলকর্মীদের।” অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জলের অপ্রতুলতার দায় দমকলকর্মীদের উপরে পড়ে বলে জানান ডিজি। এর জন্য নানা সময়ে তাঁদের হেনস্থাও হতে হয়।
মাস দুই আগে শিয়ালদহের সূর্য সেন মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ২১ জনের মৃত্যু হয়। সেই ঘটনাতেও জলের জোগান কম থাকায় ভুগতে হয় দমকলকে। যা শুনে ক্ষুব্ধ হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাজারের অগ্নি-নির্বাপণের ক্ষেত্রে পুরসভাকে সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দেন তিনি।
বর্তমানে শহরে আগুন নেভানোর কাজে টালা, সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার, অকল্যান্ড স্কোয়ার, পার্ক সার্কাস, মল্লিকঘাট পাম্পিং স্টেশন, কালীঘাট, রানিকুঠি ও বেহালা পাম্পিং স্টেশন থেকে জল নেওয়া হয়। শহরের ১৪১ ওয়ার্ড এলাকার তুলনায় যা খুবই কম। |
কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (বাজার) তারক সিংহ জানান, দমকলের কাজে জলের জোগান বাড়াতে শহরের ৮৩টি গভীর নলকূপকে দমকলের জলের উৎস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪৬টি তৈরি হয়ে গিয়েছে। দমকলের গাড়ি সরাসরি ঢোকার জন্য বড় রাস্তার উপরেই সেগুলি করা হয়েছে। গভীর নলকূপে দমকলের পাইপ ঢোকানোর জন্য টুইন সকেট লাগানো হয়েছে। ওই উৎস কেন্দ্রগুলি ঠিকঠাক হয়েছে কি না, তা দেখে এসেছেন দমকল দফতরের আধিকারিকেরাও।
তারকবাবু জানান, প্রথম দফায় পুরসভার ৬১, ৬২, ৬৬, ৬৭, ৬৮, ৮১, ৮২, ৮৩, ৮৮ এবং ৯১ নম্বর ওয়ার্ডের ৪৬টি জায়গায় গভীর নলকূপে ওই ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাজ্যের দমকলমন্ত্রী জাভেদ আহমেদ খান বলেন, “নতুন ওই ব্যবস্থায় দমকলের কাজের গতি বাড়বে। জলের জন্য অনেক ক্ষেত্রেই অসুবিধা হয়। এখানে মাত্র কয়েক মিনিটে দমকলের গাড়ি ভরা যাচ্ছে।” মধ্য কলকাতার একটি কেন্দ্রে তা পরীক্ষা করেও দেখেছেন দমকলমন্ত্রী।
পুরসভা সূত্রের খবর, তিলজলা ও তপসিয়া এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে রীতিমতো সমস্যায় পড়তে হয় দমকল বিভাগকে। এমনিতেই ওই এলাকা অত্যন্ত ঘিঞ্জি। প্রত্যন্ত জায়গায় আগুন লাগলে দমকলের গাড়ি ঢুকতেই অসুবিধা হয়। সেই কথা ভেবেই ওই এলাকার ১৪টি গভীর নলকূপকে চিহ্নিত করা হয়েছে। ৯২ নম্বর ওয়ার্ডের ৯টি জায়গায় তা তৈরি হয়ে গিয়েছে।
তারকবাবু বলেন, “কোথায় কোথায় ওই সব নলকূপ তৈরি হয়েছে, তার ম্যাপ দেওয়া হয়েছে দমকলকে। বিপদের সময়ে জলের উৎস খুঁজতে যাতে অসুবিধা না হয়, তাই শহরের প্রতিটি দমকল কেন্দ্রে ওই সব গভীর নলকূপের ছবি-সহ তালিকা দেওয়া হয়েছে।” তিনি জানান, শহরে প্রতিটি ওয়ার্ডকেই ওই পরিষেবার মধ্যে আনার চেষ্টা চলছে। বাকি নলকূপগুলিতেও শীঘ্রই সকেট বসবে। |