সারদা-সহ তিনটি অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রুজু করতে আড়াই বছর আগেই সিকিওরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়া (সেবি)-র সাহায্য চেয়েছিল কলকাতা পুলিশ। কিন্তু সেবির তরফে তখন সাড়া মেলেনি বলে অভিযোগ কলকাতা পুলিশের।
এক বার নয়, পর পর দু’বার কলকাতা পুলিশের তৎকালীন যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) দময়ন্তী সেন মুম্বইয়ে সেবির চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছিলেন। ওই দু’টি চিঠিতে সারদা ছাড়াও আরও দু’টি অর্থলগ্নি সংস্থার বিষয়ে সেবির কাছে সবিস্তার তথ্য চেয়েছিল লালবাজার। দু’টি
চিঠিই পাঠানো হয়েছিল ২০১০-এর নভেম্বরে।
গোয়েন্দাদের বক্তব্য, একটি চিঠিরও উত্তর দেয়নি সেবি।
সেই সময়ে তদন্তকারীরা ওই তিনটি সংস্থা সম্পর্কে কী তথ্য পেয়েছিলেন, সেবি-ই বা কলকাতা পুলিশের দেওয়া চিঠির ভিত্তিতে কী পদক্ষেপ করেছিল, এখন সে সব খতিয়ে দেখছে বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)। ইতিমধ্যে তাঁদের সঙ্গে এ নিয়ে এক প্রস্থ কথাও হয়েছে।
সেবির পূর্বাঞ্চলীয় অফিসের এক কর্তার বক্তব্য, “ওই সংস্থাগুলির কাছে আমরা প্রয়োজনীয় নথি চেয়ে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু তারা সঠিক তথ্য না দিয়ে কিছু বাজে কাগজপত্র পাঠিয়েছিল। গোটা বিষয়টির আইনগত দিক এবং আমাদের এক্তিয়ারের সীমাও খতিয়ে দেখা দরকার ছিল। এ সব করতে কিছুটা দেরি হয়েছে। তড়িঘড়ি কিছু করা সম্ভব ছিল না।”
শেষ পর্যন্ত গত ২৩ এপ্রিল সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেনকে যাবতীয় কাজকর্ম বন্ধ করতে বলে নির্দেশ জারি করে সেবি। ওই দিনই কাশ্মীরে ধরা পড়েন তিনি।
তবে সারদার বিরুদ্ধে সেবির জারি করা নির্দেশে লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের কোনও চিঠির উল্লেখ নেই। রাজ্যের ডাইরেক্টর ইকনমিক অফেন্সেস ইনভেস্টিগেশন সেল (ইওআইসি) ২০১০-এর এপ্রিলে সেবিকে সারদার ব্যাপারে সতর্ক করে চিঠি দিয়েছিল। সেবির ১২ পাতার নির্দেশের শুরুতে কেবল ওই চিঠির উল্লেখ রয়েছে।
কিন্তু সারদা ছাড়া অন্য দুই সংস্থা নিয়ে কিছু বলা নেই।
বস্তুত, বামফ্রন্ট আমলের শেষ দিকে রাজ্য অর্থ দফতরের নির্দেশেই ওই তিনটি সংস্থার বিষয়ে খোঁজখবর শুরু করেছিল কলকাতা পুলিশ। লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের স্পেশ্যাল সেল (জেনারেল সেকশন) ওই অনুসন্ধান করেছিল।
লালবাজার সূত্রের খবর, প্রথম চিঠি পাঠানো হয় ২০১০-এর নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে। তাতে আর্জি জানানো হয়, ওই তিনটি সংস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে সেবি যেন কলকাতা পুলিশকে প্রয়োজনীয় তথ্য দেয়।
ওই মাসেরই শেষ সপ্তাহে সেবিকে দ্বিতীয় চিঠি পাঠায় লালবাজার। সেখানে স্পষ্ট বলা হয়, তিনটি সংস্থাই বিভিন্ন প্রকল্পের নাম করে লগ্নিকারীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা তুলছে। তখনকার এক তদন্তকারীর কথায়, “আমরা বুঝতে পারি, তিনটি সংস্থাই সেবির কালেক্টিভ ইনভেস্টমেন্ট স্কিম রেগুলেশনস ভেঙে টাকা তুলছে। তাই দ্বিতীয় চিঠিতে তারা কত টাকা তুলে জমা করেছে, তাদের আর্থিক দায় কত, সম্পত্তির পরিমাণই বা কত, এ সব সবিস্তার জানতে চাওয়া হয়েছিল সেবির কাছে।” তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতেই যাতে ওই সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রুজু করা যায়, সেই আর্জিও জানানো হয়েছিল সেবিকে।”
কিন্তু কলকাতা পুলিশ নিজে ব্যবস্থা নিল না কেন?
লালবাজারের এক তদন্তকারীর কথায়, “জালিয়াতি বা প্রতারণার কোনও অভিযোগ সেই সময়ে কেউ দায়ের করেননি। তাই, আমাদের কিছু করার ছিল না।”
লালবাজার সূত্রের খবর, তাদের পাঠানো চিঠি পেয়ে একটি অর্থলগ্নি সংস্থাকে (সারদা নয়) সমস্ত কাজকর্ম বন্ধ রাখতে বলেছিল সেবি। কিন্তু তারা আদালতে চলে যায়। লালবাজারের এক কর্তা বলেন, “বিষয়টি আদালতে গড়ানোয় খুব বেশি এগোনো যায়নি। আমরা কোনও ফৌজদারি মামলাও রুজু করতে পারিনি। ধীরে ধীরে বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়। আর রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পর এত দিন এই বিষয়টি নিয়ে কেউ মাথা ঘামায়নি।” |