জাতীয় স্বাস্থ্য প্রকল্পের টাকা প্রথমে গেল সরকারি কর্মচারী সংগঠনের নিজস্ব অ্যাকাউন্টে। সেখান থেকে সংগঠনের এক সদস্যের পকেটে! এমনটাই অভিযোগ উঠেছে কেন্দ্রের পাঠানো ওই টাকা ঘিরে।
রাজ্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ সমিতিতে কেন্দ্রের পাঠানো ওই বাজেট-বহির্ভূত টাকা খরচ করার কথা যক্ষ্মা, ম্যালেরিয়া, কালাজ্বর, কুষ্ঠ এবং মা ও শিশুর রুটিন টিকাকরণের মতো বিভিন্ন জাতীয় প্রকল্পে। কিন্তু অভিযোগ, সমিতি থেকেই সেই টাকার একাংশ চেকে তৃণমূলপন্থী সরকারি কর্মচারী সংগঠনের স্বাস্থ্য ভবন শাখার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে চলে গিয়েছে। এমনকী, অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে সংগঠনের এক নেতা আবার ব্যক্তিগত কাজে খরচ করেছেন বলেও অভিযোগ।
এ নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্য-অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী। কর্মচারী সংগঠনের অ্যাকাউন্টে জমা পড়া স্বাস্থ্য দফতরের টাকা তুলে নিয়ে এক কর্মচারী ব্যবহার করে ফেলেছেন বলে যে অভিযোগ উঠেছে, তাতে বেশি উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য অধিকর্তা। কী করে এটা হল? কী ভাবে বিষয়টি চোখ এড়াল সমিতির কর্তাদের?
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, স্টেট ব্যাঙ্কের স্বাস্থ্য দফতর ব্রাঞ্চে সরকারি কর্মচারী সংগঠন ‘ইউনাইটেড স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ ফেডারেশন’ (ইউএসজিইএফ)-এর একটি নিজস্ব অ্যাকাউন্ট (নম্বর: ৩১১৭৬৯৯৭৫৬৯) রয়েছে। গত ১৫ নভেম্বর স্বাস্থ্য সমিতি থেকে ১৫ হাজার টাকার একটি চেক ওই অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে। তারও আগে ১৩ অক্টোবর তিন হাজার টাকার একটি চেক সমিতি থেকে ওই অ্যাকাউন্টে আসে। সব মিলিয়ে ১৮ হাজার টাকা। এই টাকা বিভিন্ন জাতীয় স্বাস্থ্য প্রকল্পে খরচ হওয়ার কথা। তা হলে কর্মচারী সংগঠনের অ্যাকাউন্টে সেই টাকা জমা পড়ে কী ভাবে?
প্রথমে স্বাস্থ্য সমিতির কর্তারা বিষয়টি অস্বীকার করেন। পরে স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র অসিত বিশ্বাস বলেন, “সংগঠন কল্যাণমূলক কাজ করলে টাকা দিয়ে থাকে।” এটা কী কল্যাণমূলক কাজ? ওই কর্তা বলেন, “কর্মচারীরা বিজয়া সম্মিলনী করেন। তাতে ওই টাকা দেওয়া হয়েছে।” পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা হলেও ভিতরে-ভিতরে স্বাস্থ্যকর্তারা অশনি-সঙ্কেত দেখছেন। তাঁরা স্বীকার করছেন, ১৮ হাজার বড় অঙ্ক নয়, কিন্তু নয়ছয়ের ধরন আর প্রবণতাটা মারাত্মক। এ ভাবে যে কয়েক লক্ষ টাকা গায়েব হবে না, সেই নিশ্চয়তা কোথায়?
তথ্যপ্রমাণ বলছে, ইউএসজিইএফ-এর এক সদস্য তথা স্বাস্থ্য দফতরের কর্মী গৌতম সরকার গত ১৪ ডিসেম্বর ব্যাঙ্কে মুচলেকা দিয়ে সংগঠনের অ্যাকাউন্টে জমা ১৮ হাজারের মধ্যে ১৫ হাজার টাকা তুলে নেন। মুচলেকায় তিনি জানিয়েছিলেন, নিজের ‘জরুরি প্রয়োজনে’ তিনি ওই টাকা তুলছেন। ১৫ জানুয়ারির মধ্যে ফেরত দেবেন। জানুয়ারি পেরিয়ে এখন মে মাস। টাকা ফেরত আসেনি। এর পরে সংগঠনের অন্দরেই গোলমাল শুরু হয়। অন্য কয়েক জন সদস্য ব্যাঙ্কে অভিযোগ জানিয়ে ওই অ্যাকাউন্টে আর্থিক লেনদেন বন্ধ করেন। গৌতমবাবুকে জিজ্ঞাসা করা হয়, কেন এবং কী ভাবে জাতীয় স্বাস্থ্য প্রকল্পের টাকা কোনও কর্মচারী সংগঠনের অ্যাকাউন্টে জমা হতে পারে? কী ভাবেই বা তিনি সেই টাকা ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেন? তাঁর উত্তর, “ওই টাকা স্বাস্থ্য সমিতি আমাদের ডোনেশন দিয়েছিল। আর আমি টাকা তুলেছি সেটা আমার ব্যাপার। ক’দিনের মধ্যেই মিটিয়ে দেব। আপনাদের ভাবতে হবে না।” |