|
|
|
|
শনিবারের নিবন্ধ ১... |
কফি হাউসটাই আজ আর নেই |
যদি নিখিলেশ ফিরে আসতেন প্যারিস থেকে, ঢাকা থেকে মইদুল!
কী দেখতেন ওঁরা? মান্না দে’র
জন্মদিনের তিন দিন পর, তাঁর বহুশ্রুত
গানের সূত্র ধরে আড্ডার আঁতুড় ঘরে পা রাখলেন সুবোধ সরকার। |
কিন্তু আছে। সাত বছর আগে ঢাক ঢোল পিটিয়ে কলোনিয়াল জামা ছেড়ে পোস্ট-কলোনিয়াল জামা গলিয়ে কফি হাউস উঠে দাঁড়াল। একটু ফর্সা হয়ে, একটু চকচকে হয়ে কফি হাউস এখন রেস্টুরেন্ট। তার লাইফ লাইন হল কলকাতার সব চেয়ে সস্তা কফি-কাটলেট, আর যত ক্ষণ পারো টেবিল আঁকড়ে বসে থাকো। কিন্তু কফি হাউস যখন চকচকে ছিল না, তার আসল লাইফ লাইন ছিল আড্ডা। তার ইন্টেলেকচুয়াল অ্যামবিয়েন্স ছিল এক অবিনাশী টিআরপি। দু’টো উদাহরণ দিই ‘পথের পাঁচালী’র স্ক্রিপ্ট পড়ছেন কমল কুমার মজুমদার, ভুবন ভোলানো সিনেমার চিত্রনাট্য কিচ্ছু হয়নি বলে প্রিয় বন্ধু ঢ্যাঙাকে বকছেন। দুই, একটু পিছোতে হবে। পরাধীন ভারতের কফি হাউসে ঢুকলে দেখতে পাব একটা ছেলে বসে আছে। তার চোখে স্বপ্ন। কবজিতে ব্রিটিশ তাড়ানোর বজ্র, টেবিলে বসে ইনফিউশনে চুমুক দিয়ে সে তার সহ-বিপ্লবীদের বোঝাচ্ছে কী ভাবে সশস্ত্র পথেই গ্লানিমুক্ত হতে হবে। ছেলেটির নাম সুভাষ চন্দ্র বসু। কলেজ স্ট্রিট কফি হাউসের ইতিহাস আসলে বাঙালির ১৮৭৬ পরবর্তী ইতিহাস। আড্ডার ইতিহাস। পতন, পরিতাপ ও উঠে দাঁড়ানোর ইতিহাস।
সেই আড্ডা আর নেই। বাঙালির প্রিয় গায়ক মান্না দে’র এক মাত্র সেমি-ইনটেলেকচুয়াল গানটির শুরুতেই বলা হয়েছিল, কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই, গানটি আজও পাড়ায়-পাড়ায়, বাড়িতে-বাড়িতে গুনগুন করে গাওয়া হয়। আড্ডাটা নেই, কিন্তু ঐতিহাসিক সিঁড়িগুলো আছে, সিঁড়ির দু’পাশে বন্দিমুক্তির দাবি আছে, তরুণ কবির অহংকার আছে, মাওবাদী পোস্টার আছে, পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণের নিন্দা আছে, ইন্দোনেশিয়ার ম্যাপের মতো পানের পিক আছে। আড্ডা কি একেবারে উঠে গিয়েছে? সে দিন কফি হাউস গিয়ে আমি সরেজমিনে শুনে এলাম প্রেসিডেন্সি আর যাদবপুরের কথোপকথন: |
|
বাবলি: কী রে কটায় লাগালি? (লাগালি মানে ‘ফরেনে অ্যাপ্লাই’ করা)
বৈবস্বত: কাল আমাকে আঙ্কল ফোন করেছিল। বলল, কলম্বিয়াতে হয়ে যাবে।
বাবলি: তোর অনেক গলতাই আছে। তোর হয়ে যাবে। আমার কী হবে বল তো? এখানে তো কোনও চাকরি নেই। (গলতাই মানে মামা-কাকা)
বৈবস্বত: চাপ আছে, আমার আঙ্কল খুব একটা কমপ্যাটিবল নয়, এই কফি হাউসে বসেই এক দিন কপচাত, যেন কার্ল মার্কসের নাতি, পুটলু সোনা, এখন আমেরিকাতে বসে দুলু কামাচ্ছেন। (দুলু মানে ডলার)
ঐতিহ্য নিজেই নিজের শত্রু তৈরি করে নেয়। এটা বোঝার জন্য উমবের্তো একোর সদ্য প্রকাশিত বই ‘ইনভেন্টিং দ্য এনিমি’ না পড়লেও চলবে। হাতের চেটোতেই চমকাচ্ছে অজস্র উদাহরণ। টেস্ট ক্রিকেট থেকে আইপিএল। চণ্ডীমণ্ডপ থেকে ফেসবুক। বই থেকে ই-বই। ব্যাঙ্ক থেকে চিট ফান্ড। হাতে লেখা চিঠি থেকে এসএমএস। এবং কফি হাউস থেকে কফি শপ।
রবিবারের দুপুরে একসঙ্গে নাটক দেখে আমি এক বার জোর করে সুনীলদা-স্বাতীদি সমেত একটা কবি লেখকের দলকে লেকভিউ রোডের সিসিডিতে নিয়ে গিয়েছিলাম। জমিয়ে আড্ডা দিলাম। কবিতা পড়া হল। কলকাতায় কেন আন্তর্জাতিক কবি সম্মেলন হয় না, করা কি সম্ভব, বাঙালি কি কূপমণ্ডুক হয়ে যাচ্ছে এই সব নিয়ে তুমুল তর্ক হল। ফেরার পথে আমি বললাম, কী রকম লাগল আপনার? সুনীলদা বললেন, ভালই তো, বিদেশে এ রকম কফি শপ প্রচুর। আমি বললাম, কার মুখে কী শুনছি? শেষ পর্যন্ত আপনিও? যে আপনি, আপনারা সুনীল-শক্তি-সন্দীপন-শরৎ কফি হাউসের দরজা বন্ধ না হওয়া অবধি টেবিলে-টেবিলে তর্ক করতেন, বাইরে বেরিয়ে ঝাড়পিট করতেন, তার পর তরল আগুনের ঠেক থেকে গলা জড়াজড়ি করে বাড়ির পথে কলকাতা শাসন করতেন, সেই আপনি সিসিডিকে ভাল বলছেন? সুনীলদা একটু ভাবলেন। একটু বিমর্ষ দেখাল। তার পর নস্ট্যালজিয়ার কচুরিপানা সরিয়ে বললেন, ‘সময়টা দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে। নতুন ছেলেমেয়ে এসে গেল, তাদেরকে ডেকে নিতে হবে।’ সুনীলদা ভারী কথা বলতেন না, সে দিন আসলে তিনি গ্লোবালাইজেশনের কথা বলতে চেয়েছিলেন। এ ধরনের কফি শপগুলো তার একটা আইকন।
সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের পিছনে একটা ছোট্ট সিসিডি আছে, সেখানে আমি ছেলেদের চাইতে মেয়েদের বেশি সিগারেট খেতে দেখেছি। যাদবপুর সহ এলিট ক্যাম্পাসগুলোতে মেয়েরাই এখন বেশি খায়। খাবে না কেন, আলবাত খাবে। হাতে ব্ল্যাকবেরি, পায়ে ইটালিয়ান চপ্পল, মুখে চোস্ত ইংরেজি। একটি মেয়েকে বিড়ি ধরাতে দেখেছিলাম বালিগঞ্জের সিসিডিতে। পিঠে গিটার লাগানো ছেলেটির কাঁধে মাথা রেখে একটি মেয়ে ফোনে ইন্টারনেট করছে বারিস্তায়, বাবা-মাকে বলি ভুলেও ভাববেন না এটা কোনও সারস্বত প্রেমের দৃশ্য। এটা ইয়ে, মানে ইয়ে, বন্ধুত্ব।
বাগবাজারে বাড়ি, শান্তিনিকেতনের ছাত্রী ঋতশ্রী সেনগুপ্তকে জিজ্ঞাসা করলাম, তুমি উত্তর ছেড়ে দক্ষিণে আড্ডা দিতে আসো কেন?
“কফি হাউসে আর যাই না, সেই আড্ডাটা আর নেই, সেই ইন্টেলেকচুয়াল পরিবেশটা আর নেই। গোলপার্ক কিংবা সাউথ সিটি মলে অনেক ফ্রিডম আছে। কে সিগারেট খেল, কে কী পোশাক পরল, তা নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না।” সোশিওলজির ছাত্র রূপক বসু কেন আর কফি হাউসে যেতে চায় না? তার সোজা-সাপ্টা উত্তর, “আমি মানি কফি হাউস একটা ঐতিহ্য। ওটাকে এখন মিউজিয়মে রেখে দিলেই ভাল হয়। আমরা চাকরি-বাকরি পাব না। ভাবছি কলেজ স্ট্রিটে একটা সিসিডি খুলব, কফি হাউস উঠে যাবে।” প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনী, বর্তমানে অধ্যাপিকা, ইংরেজি ভাষার কবি শর্মিলা রায় বললেন, “সম্প্রতি বান্ধবী বিপাশার চাপে কফি হাউসে গিয়েছিলাম। এখনও কাপগুলো আগের মতোই নোংরা, মিনারেল ওয়াটার চাইলাম। নেই। বেয়ারাকে দশ টাকা একস্ট্রা দিয়ে বোতল আনালাম। দশ টাকাটা বড় কথা নয়। অনেক টাকা বেশি দিয়ে আমরা বারিস্তা-সিসিডিতে যাই। এগুলো পরিষ্কার আর হাইজিনিক। এখানে মেয়েরা হাসিমুখে টয়লেটে যেতে পারে।” এলিটিস্ট শোনাল? শোনাতেই পারে, এখন মধ্যবিত্তরাই এলিটিস্ট।
সদ্য জাতীয় পুরস্কার পাওয়া পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় জানালেন, “কফি হাউস পর্যন্ত যাইনি। দক্ষিণের কফি শপগুলোতেই আড্ডা মারি। আমার ‘রং মিলান্তি’ ছবির পুরো কাস্টিংটা করেছিলাম, ডোভার লেনের বারিস্তায় বসে। আরেক তরুণ পরিচালক মৈনাক ভৌমিক অন্য একটি কফি শপের কথা বলছিলেন, যেটি উঠে গিয়েছে, “সেখানে তিন বান্ধবীকে নিয়ে আড্ডা দিতে দিতে ‘আমি আর আমার গার্লফ্রেন্ড’ ছবিটার পুরো আইডিয়াটা মাথায় এসেছিল।
নকশালদের সময়, জমজমাট কফি হাউস। আমি আর মল্লিকা কৃষ্ণনগর থেকে আসতাম। এক দিন মল্লিকাকে বসিয়ে নীচে গেলাম সিগারেট কিনতে। এসে দেখি, মল্লিকার জায়গায় আর একটা মেয়ে বসে আছে। সে বলল দু’টো ছেলে এসে জানাল, সুবোধকে শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে শিয়ালদার দিকে হাঁটতে দেখলাম। শুনেই মল্লিকা নেমে গেল। আমি সারা কলেজ স্ট্রিট তন্ন তন্ন করে ফেললাম। ফোন বলে তখন কোনও বস্তু ছিল না আমাদের জীবনে। শিয়ালদায় গিয়ে মল্লিকাকে দেখতে পেলাম এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে। মল্লিকা ট্রেনে বসে বলল, একেই বলে ম্যাজিক রিয়্যালিজম।
তিরাশির বিশ্বকাপ ফাইনাল, তবু কফি হাউসে এসেছিলাম কৃষ্ণনগর থেকে, রাতে ফেরার পথে ব্যারাকপুরে উইকেট পড়ল, নৈহাটিতে পড়ল, কল্যাণী এল। আবার উইকেট পড়ল, রানাঘাটেও পড়ল, আমি যখন কৃষ্ণনগরে এসে নামলাম, চার পাশে তখন বাজি ফাটছে।
দিন দিন কিন্তু কফি হাউসের প্রতি টান কমতে শুরু করল। মন্ত্রী হওয়ার আগে নাট্যকার ব্রাত্য আর আমি কলেজ থেকে দুপুরে বেরিয়ে কফি হাউসে বসে দেখেছি, কফি হাউস আর আমাদের টানত না।
যে কফি হাউসের সিঁড়ি দিয়ে রবীন্দ্রনাথ উঠে এসে অ্যালবার্ট হলে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করেছেন, যে কফি হাউস বন্ধ হয়ে যেতে পারত ১৯৫৮ সালে, প্রেসিডেন্সি কলেজ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত অধ্যাপকেরা পিটিশন দাখিল করেছিলেন দিল্লিতে, যে কফি হাউস ছিল সোনার টুকরো ছাত্রদের নকশাল হয়ে যাওয়ার সূতিকা ঘর, যে কফি হাউস পাঁচ দশক ধরে দামাল কবি লেখক বুদ্ধিজীবী রাজনীতিকদের বিজ্ঞাপন, সেই কফি হাউস কী হয়ে গেল! অমর্ত্য সেন কথিত তর্কপ্রিয় বাঙালির তর্ক কই? ডিসকোর্স কই? আদর্শ কই? কামু-কাফকা-নেরুদার মতো আর কোনও দাদা এল না কফি হাউসে, ফুকো-দেরিদা একটু একটু করে মাথা তুলছিল। কিন্তু এখন কফি হাউস জুড়ে চিট ফান্ড নিয়ে আলোচনা, সুদীপ্ত-দেবযানীর সাম্রাজ্যবাদের কাহিনি ঘুরে বেড়াচ্ছে এক টেবিল থেকে আর এক টেবিলে। একটা কোনায় বসে থাকা বিই কলেজের ইঞ্জিনিয়ার দিব্যোন্মাদ কবি বিনয় মজুমদার গায়ত্রীকে (তখনও স্পিভাক হননি) নিয়ে লেখা নিজের কবিতা বিড়বিড় করে পড়ে চলেছেন, পৃথিবী সম্পর্কে কোনও হুঁশ নেই উৎসারিত এই দৃশ্য ফিরে আসবে না কফি হাউসে।
নস্টালজিয়া আর আধুনিকতার লড়াইয়ে ভবিষ্যতে কফি হাউস এবং কফি শপের হয়তো এক ধরনের মিশেল তৈরি হবে কলকাতায়। যেখানে ভবিষ্যতের বিনয় মজুমদার এবং কৌশিকরা পাশাপাশি কফি খেতে খেতে আড্ডা মারবে।
|
|
এক চুমুক স্মৃতি
|
সমরেশ মজুমদার
প্রথম বার গিয়েছিলাম ১৯৬০ সালে। তারিখটাও মনে আছে। ৩ জুলাই। আমাদের বন্ধু দুর্গাদাসের জন্মদিন। ও আমাদের কফি খাইয়ে ছিল। ’৬০ থেকে ’৬৮ প্রায়ই যেতাম। এক কাপ কফি তিন জনে ভাগ করে খেতাম। তাও বাকি পড়ত মাঝে মাঝে। বেয়ারা রামু ছিল আমাদের উদ্ধারকর্তা। ওর কাছে বাকি রেখে সে দিনের জন্য রেহাই। পর দিন পয়সা মেটানো। আমার বন্ধু শঙ্কর দে রাতদিন কফি হাউসেই কাটাত পকোড়া খেয়ে আর কবিতা লিখে। শক্তিদার পাঁড় ভক্ত। দেশ পত্রিকায় কবিতা বেরোত ওর। আমাকে বলত, “তুই প্রেমে পড়িসনি তো, তাই কবিতা লিখতে পারিস না।” প্রেমে ব্যর্থ হয়ে ও একবার লিখেছিল, ‘একশো আট পদ্মের মতো তোমার মুখ।’ শেষ বার কফি হাউসে গিয়েছি গত বছর। কলেজ স্ট্রিটে গিয়ে হঠাৎ মনে পড়ল, ইসমাইলের কথা। নীচতলার গেটে ঢুকেই ডান দিকের সেই সিগারেটওয়ালা। ও আমার কাছে দশ পয়সা পেত। সেটা ’৬৫ সাল। ইসমাইল কই? দেখলাম এক সুঠাম যুবক দোকানে। দশ টাকার একটা নোট এগিয়ে দিয়ে তাকে বললাম, “এটা ইসমাইলকে দিও।” যুবক বলল, “কেন?” বললাম। ও বলল,“বাবা আর নেই। ও টাকা আপনার কাছে রেখে দিন।” ওপরে গেলাম। খুব চিৎকার, চেঁচামেচি। আমাদের সময় এতটা হইহল্লা হত না। তা’ও বসে ছিলাম। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে এত লোকজন এসে পড়লেন, এত প্রশ্ন তাঁদের, কফি না খেয়েই উঠে এলাম। |
ব্রাত্য বসু
কফি হাউস নিয়ে আমার বাড়তি কোনও মায়াময়তা কোনও দিনই ছিল না। তাই তেমন নস্টালজিয়াও নেই। প্রেসিডেন্সিতে পড়ার সময় ক্যান্টিনটাই ছিল আমাদের আড্ডার জায়গা। কফি হাউস যেতাম কালেভদ্রে, লোকে যেমন হোটেলে খেতে যায় আয়োজন করে, অনেকটা তেমন। বরং কলেজে যখন পড়াই, আমি আর কবি সুবোধ সরকার প্রায়ই বসতাম ওখানে। শেষ বার গিয়েছি বিধানসভা ভোটের আগে। দেখলাম, আগের চেয়ে ঝকঝকে হয়েছে। কিন্তু কেন জানি না, মনে হল, পুরোনো সেই আভিজাত্য যেন আর নেই। আসলে কফি হাউস কতটা তকতকে, এ নিয়ে কোনও দিনই ভাবিনি আমি। শুধু ভেবেছি, এটা একটা উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া জায়গা। সন্দেহ নেই, শেষ বার গিয়ে একটা যেন ‘মিসিং লিংক’য়ের জায়গা টের পেলাম। |
নচিকেতা
এক বছর আগে মেয়েকে নিয়ে কফি হাউস গিয়েছিলাম। ওকে চেনাতে। ও এখন চোদ্দো। দেখলাম খুব একটা আগ্রহ পেল না। আমিও শুধু স্মৃতি হাতড়ে বেড়ালাম। পুরোনো মাধুর্যটা খুঁজে পেতে চাইলাম। পেলাম না কিছুতেই। সেই চিন্তাশীল মুখগুলোই বা কোথায় গেল! কিছু ক্লান্ত মুখের ভিড় শুধু। আমার কাছে কফি হাউস ছিল একটা থ্রিলিং ব্যাপার। সুনীলদা, শক্তিদা, কৃত্তিবাস ...। পরেও যখন যেতাম ভেবে নিতাম হয়তো’বা ওখানেই, ওই চেয়ারটাতে বসতেন ওঁরা। ভেতরে ভেতরে একটা উত্তেজনা হত। সেই উত্তাপটাই আর যেন ফিরে পাবার নয়। কী জানি, এই অনুভূতিগুলো হয়তো’বা একান্তই আমার। |
রাইমা সেন
আমি কফি হাউস গেছি তো বটেই। শ্যুটও করেছি ওখানে। অসম্ভব ‘ওল্ড ওয়ার্ল্ড চার্ম’ আছে ওখানে। আমার যদি উত্তর কলকাতার কোনও বয়ফ্রেন্ড হয় কোনও দিন, আমি কফি হাউসেই কফি খেতে যাব। সিসিডি-র থেকে যে কোনও দিন আমি কফি হাউসকে এগিয়ে রাখব। |
|
ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল |
|
|
|
|
|