মধ্য পঞ্চাশে মৃত মেয়ের কথা রাখতে এমএ পাশ
কালো ফাটা মেঝেতে পুরনো পালিশ ওঠা কাঠের চেয়ার। তার উপর বসে সুতির আটপৌরে কাপড় পরে বছর ৫৫ বয়সের মহিলা। পুরনো ক্যালেন্ডারের উঠে যাওায় সংখ্যার উপর চোখ বোলাতে বোলাতে চোখ মোছেন তপতী খান। সাত বছর আগে মৃত্যু হয়েছে বড় মেয়ে দিশার। তাঁরই অনুরোধে মা ৫৫ বছর বয়সে এমএ পাশ করলেন। নবম শ্রেণি পাশ করে বিয়ে হয়ে যায় তপতীদেবীর। তারপর পড়া বন্ধ। দুই কন্যা ও স্বামীর সংসার সামলে দশম শ্রেণির পড়া শুরু। ১৯৮৪ সালে মাধ্যমিক পাশ করেন। ১৯৮৬ সালে উচ্চমাধ্যমিক। ১৯৯০ সালে স্নাতক হন। প্রায় ২০ বছর পড়া বন্ধ ছিল। তারপর ২০১০ সালে আবার শুরু। এ বার ইতিহাসে। শেষ পর্যন্ত ২০১৩ সালে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দূর শিক্ষার মাধ্যমে পাশ করলেন তিনি।
তপতীদেবীর স্বামী দীপক নারায়ণ খান বেলডাঙা পুরসভার টানা ১২ বছর আরএসপি-র পুরপ্রধান ছিলেন। তিনি পেশায় আইনজীবী হলেও গত ৪ বছর অসুস্থতার কারণে পরিবারের দায়িত্ব নিতে হয় তপতীদেবীকে। বাড়ি থেকে ১২ কিলোমিটার দূরের একটি শিশু শিক্ষাকেন্দ্রের তিনি শিক্ষিকা। সাইকেল করে যাতায়াত করে সামান্য টাকায় তিনি সংসার চালান। তাঁর ছোট মেয়ে অনন্যা একটি বালিকা বিদ্যালয়ের পার্শ্ব শিক্ষিকা। দুই জনের আয়ে সংসার চলে।

তপতী খান।—নিজস্ব চিত্র।
তবে ২০ বছর পর হঠাৎ এই বয়সে কেন ওই প্রচেষ্টা? হাল্কা রঙ ওঠা সুতির কাপড়ে চোখ মুছতে মুছতে তপতীদেবী বলেন, “ব্রেন টিউমারে মারা যায় বড় মেয়ে। মৃত্যুর আগে আমার হাত ধরে বলে গিয়েছে, ‘মা সম্ভব হলে আরও পড়াশুনা কর। এম এ-টা শেষ কর!’ সেই কথা ফেলতে পারিনি।” চোখটা জলে ভরে ওঠে। আবার বলেন, “ছোট মেয়ে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূগোলে এমএ পড়ছে। তার আগে আমার পড়া শেষ হল। বড় মেয়ের কথা রাখা হল।”
দীপকবাবু বলেন, “ও বরাবরের লড়াক।” তপতীদেবী বলেন, “ও যখন পুরপ্রধান হল, বাড়িতে অনেক গন্যমান্য লোক আসত। আমি বেশি পড়াশুনা জানি না। বিষয়টা আমার খুব খারাপ লাগত। তখন থেকেই ইচ্ছা পড়া চালানোর। তারপর সুযোগ পেয়ে শুরু করে দিলাম। বড় মেয়ের ইচ্ছায় এম এ পাশ করলাম।” চাকরি করে, সংসার চালিয়ে কি ভাবে পড়াশুনা করেন? তিনি বলেন, “খুব সকালে উঠে রান্না করে স্কুলে যায়। ফিরে একটু বিশ্রাম নিয়েই রাতের রান্না সেরে ফেলি। তারপর পড়া। রাত পর্যন্ত পড়ালেখা। এ ভাবেই করে ফেলেছি। আর কি!” দীপকবাবু বলেন, “১৯৮১ সাল থেকে আমি পুরপ্রধান ছিলাম। বাড়িতে সময় দিতে পারতাম না। ও নিজেই নতুন করে পড়াশুনা শুরু করে। পুরসভা ও আইন ব্যবসা নিয়ে আর বাড়তি কোন সময় পেতাম না। ওই সময় ও পড়ত।”
তপতীদেবী বলেন, “বেলডাঙার নেতাজি পার্ক নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার আর্থিক সহায়তায় বয়স্ক শিক্ষার মাধ্যমে মাধ্যমিক পাশ না করলে আমার এই পর্যন্ত আসা হত না। স্বামী ও মেয়েদের সাহায্যও আমাকে এতদূর এগিয়ে আসতে সাহায্য করেছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.