রবীন্দ্রনাথ ও নদিয়া রাজবাড়ি |
গত ১৬ এপ্রিল নদিয়া মুর্শিদাবাদ পাতায় দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে নববর্ষের আড্ডা ও নদিয়ার রাজবাড়ি বিষয়ে। প্রতিবেদনের শুরুতেই নদিয়ার রাজবাড়িতে নববর্ষের আড্ডায় রবীন্দ্রনাথের উপস্থিতি ও সংগীত পরিবেশনের ঘটনা বিবৃত করেছেন যা আমাদের কাছে একেবারেই নতুন ও অজানা। যদিও নিবন্ধকার ওই ঘটনাটি নদিয়ার রাজপরিবারের বর্তমান কর্ত্রী অমৃতা রায়ের স্মৃতিচারণের সূত্রে বিবৃত করেছেন। তবু বলতেই হচ্ছে এমন কোনও ঘটনা রবীন্দ্রনাথের কোনও জীবনীকারই উল্লেখ করেননি। নিবন্ধটিতে লেখা হয়েছে ঘটনাটি আঠারো শতকের একেবারে শেষ পর্বে ঘটেছিল। তা যদি হয়, তাহলে ওই ঘটনাটির অকুস্থল কৃষ্ণনগর রাজবাড়িই হতে হয় কারণ, কলকাতার ব্রাইট স্ট্রিটের নদিয়া হাউস নদিয়ার রাজপরিবারের হাতে আসে ১৯২০-২১ সাল নাগাদ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে কলকাতার বাড়ি জমি ইত্যাদির দাম উর্ধ্বমুখি হওয়ার সময় প্রমথ চৌধুরী-ইন্দিরাদেবী চৌধুরানিদের ওই বাড়ি বিক্রি হয় বলে প্রমথবাবু জানিয়েছেন। অথচ রবীন্দ্রনাথ একবারই কৃষ্ণনগরে পদার্পন করেছিলেন বলে আমরা জানি। ১৮৮৬ সালের মে মাস নাগাদ রবীন্দ্রনাথ কৃষ্ণনগরে এসেছিলেন একটি বিবাহ প্রস্তাব নিয়ে। প্রমথ চৌধুরির অগ্রজ আশুতোষ চৌধুরির সঙ্গে নিজের অগ্রজ হেমেন্দ্রনাথের কন্যা প্রতিভার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে রবীন্দ্রনাথ কৃষ্ণনগরে এসেছিলেন। সঙ্গে ছিলেন ভাগ্নে সত্যপ্রসাদ এবং রবীন্দ্র অগ্রজ দ্বিজেন্দ্রনাথের জামাতা রমণীমোহন চট্টোপাধ্যায়, যিনি আবার ছিলেন সম্ভাব্য পাত্র আশুতোষের সহপাঠী ও বাল্যবন্ধু। রবীন্দ্রনাথের ওই দৌত্য সফল হয়েছিল। আশুতোষ ঠাকুরবাড়ির জামাই হয়েছিলেন। পরে অবশ্য আশুতোষের আরও তিন অনুজ মন্মথ, প্রমথ, ও সুহৃৎ ঠাকুরবাড়ির জামাই হয়েছিলন। যাই হোক, রবীন্দ্রনাথ ওই একবারই কৃষ্ণনগরে এসেছিলেন বলেই আমরা জানি। তিন-চার দিন তিনি ছিলেন কৃষ্ণনগরে। প্রমথ চৌধুরি সেই প্রথম দেখেন রবীন্দ্রনাথকে, আর দেখেই মুুগ্ধ হন। ওই মুগ্ধতার কথা প্রমথ চৌধুরি নিজেই লিখে গিয়েছেন তাঁর আত্মকথায়। যে ক’দিন রবীন্দ্রনাথ ছিলেন কৃষ্ণনগরে তার মধ্যে অন্যান্য আলাপ আলোচনা ও গল্পগুজবের সঙ্গে সংগীত ছিল আলোচনার একটা বড় অংশ। সেই সময়ে কৃষ্ণনগরে নামকরা সুগায়ক হিসাবে সত্যচরণ লাহিড়ির খুব সুনাম ছিল। তিনি অনেক রকম বাদ্যযন্ত্র বাজাতেও দক্ষ ছিলেন। চিকিৎসক সত্যচরণ ছিলেন রামতনু লাহিড়ির কনিষ্ঠতম ভ্রাতা কালীচরণ লাহিড়ির জ্যেষ্ঠপুত্র ও আশুতোষ চৌধুরির সহপাঠী বন্ধু। তাঁর ডিস্পেন্সারিতে প্রায়ই বসত সান্ধ্যকালীন গানবাজনার আসর। প্রমথ চৌধুরি সেই আসরে প্রায় নিয়মিত হাজির থাকতেন। সত্যডাক্তারের সেই গানের আসরে সম্ভবত আশুতোষ এক দিন নিয়ে গিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথকে। রবীন্দ্রনাথকে সেখানে গাইতে অনুরোধ করায় তিনি ‘বাঁশরী বাজাতে চাহি বাঁশরী বাজিল কই’ গানটি পরিবেশন করেন। কৃষ্ণনগরে তখন উচ্চাঙ্গ সংগীতের চলন। সত্যডাক্তারও উচ্চাঙ্গ সংগীতেই পারদর্শী ছিলেন। উচ্চাঙ্গ সংগীতের অনুরক্ত সেই সভার শ্রোতাদের কাছে রবীন্দ্রনাথের সরল বাংলা গান সমাদর পায়নি। শ্রোতদের কিছু বিদ্রুপ তাঁকে হজম করতে হয়েছিল। ইন্দিরাদেবী চৌধুরানি তাঁর রবীন্দ্রস্মৃতিতে লিখেছেন, ‘সেই সব উচ্চাঙ্গসঙ্গীতপ্রিয় শ্রোতাদের কাছ থেকে নাকি অনেক বাক্যবাণ তাঁর উপর বর্ষিত হয়েছিল, যেমন, হ্যাঁ, বাঁশরী অনেকে বাজাতে চায়, কিন্তু বাঁশরী বাজাতে চাইলেই কি বাঁশরী বাজে? বাঁশরী বাজাতে হলে শিক্ষা চাই ইত্যাদি। কারণ, সে সরল সুরের ভিতর তাঁদের অভ্যস্ত তান কর্তন তাঁরা খুঁজে পাননি।’ ইন্দিরাদেবী ওই ঘটনার কথা তাঁর পতির কাছে শুনেছেন বলে জানিয়েছেন। সুতরাং ওই প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণের পাশে আলোচ্য নিবন্ধে বর্ণিত বাঁশির ঘটনাটি এবং রামতনুপুত্র শরৎ লাহিড়ির মন্তব্য আমাদের ধাঁধায় ফেলে দেয়। প্রাজ্ঞজনেরা যদি ওই বিষয়ে কিঞ্চিৎ আলোকপাত করেন তা হলে কৃতজ্ঞ থাকব।
নির্মল সরকার, কৃষ্ণনগর
প্রতিবেদকের জবাব
নির্মলবাবু ঠিকই ধরেছেন, নববর্ষের প্রথম দিনে কৃষ্ণনগর রাজবাড়িতে রবীন্দ্রনাথের উপস্থিতির কথা ও গানের আসরের প্রসঙ্গ নদিয়ার রাজপরিবারের বর্তমান কর্ত্রী অমৃতা রায়ের কাছেই জানতে পেরেছি আমি। সে কথা ওই প্রতিবেদনে উল্লেখও করেছি। তবে, তা নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে সে ব্যাপারে আমিও পত্রলেখকের সঙ্গে সহমত। প্রাজ্ঞজনেরা এ ব্যাপারে আলোকপাত করুন।
|
কৃষ্ণনগর কালেক্টর মোড়ের পাশের রেজিস্ট্রি অফিসের দিকে ঢুকতে ডানহাতে সুপারিন্টেন্ড অফ পোস্ট অফিসের অফিস, যা কোর্ট পোস্ট অফিস নামে পরিচিত। তার আশেপাশে রয়েছে প্রশাসনিক ভবন-সহ বিভিন্ন সরকারি দফতর, স্কুল, কলেজ, ইত্যাদি। সরকারি-বেসরকারি প্রচুর চিঠি ওই পোস্ট অফিসের ডাকবাক্সে জমা পড়ে। প্রচুর চিঠি এখান থেকে রেজিস্ট্রি করা হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন হল খামের উপর পোস্টেজ স্ট্যাম্প লাগানোর জন্য এখানে কোনও আঠা নেই। ফলে পোস্ট অফিসের গ্রাহকরা খুবই অসুবিধায় পড়েন। আমার দোকান ওই পোস্ট অফিসের লাগোয়া হওয়ায় প্রতিদিনই প্রচুর মানুষ এসে করুণ মুখে জিজ্ঞাসা করেন, “দাদা একটু আঠা হবে?” খুব খারাপ লাগে যখন দেখি সরকারি অনুষ্ঠানে, উদ্বোধনে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ হচ্ছে অথচ সাধারণ মানুষের প্রয়োজনীয় সামান্য ৫ টাকার একটি আঠার টিউব পোস্ট অফিসে থাকে না। সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে কয়েকটি আঠার টিউব কি আমি পোস্ট অফিসে রেখে দেব?
নিরঞ্জন পাল, কৃষ্ণনগর
|