|
|
|
|
হলদিয়ায় ‘এটিএম’ সংস্থার তালাবন্ধ অফিসে ভাঙচুর-লুঠ |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
সারদা কেলেঙ্কারির পরে অন্য অর্থ লগ্নি সংস্থাগুলি থেকে টাকা তুলে নিতে মরিয়া আমানতকারীরা। কোথাও সংস্থার শাখা কার্যালয়ে ভাঙচুর চলছে তো কোথাও প্রতারণার অভিযোগ দায়ের হচ্ছে। শুক্রবার দুপুরে হলদিয়ার চৈতন্যপুরে ‘এটিএম গ্রুপ অফ কোম্পানিজ’ সংস্থাটির তালাবন্ধ অফিসে ঢুকে ভাঙচুর-লুঠপাট চালান আমানতকারী ও এজেন্টরা। ঝাড়গ্রাম শহরে আবার এক আমানতকারীর অভিযোগের ভিত্তিতে এটিএম গ্রুপের শাখা ম্যানেজার বিদ্যুৎ মাইতি-সহ চার জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃত বাকি তিন জন হলেন ওই শাখার কর্মী অর্ঘ্য নাগ, রঞ্জিত দাস ও শেখ দাউদ আলি। শুক্রবার ধৃতদের আদালতে তোলা হলে দশ দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠান বিচারক।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর দেড়েক আগে হলদিয়ার চৈতন্যপুর মোড়ে অফিস খুলেছিল ‘এটিএম গ্রুপ অফ কোম্পানিজ’। এলাকারই কিছু লোককে এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ করে আমানতকারীদের থেকে মাসে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা করে তুলত ওই সংস্থার হলদিয়া শাখা অফিস। এক বছর ধরে প্রতি মাসে ১ হাজার টাকা দিলে মেয়াদ শেষে ১৪ হাজার টাকা পাওয়া যাবে, ৫০ হাজার টাকা ৪ বছর ৭ মাস রাখলেই দ্বিগুণ হবে-সহ নানা প্রলোভনে ওই সংস্থায় অর্থ সঞ্চয় করছিলেন গ্রাহকেরা। সারদা কাণ্ডের পর আতঙ্কিত আমানতকারীরা টাকা ফেরতের দাবিতে সংস্থার অফিসে ভিড় জমাতে থাকেন। |
|
কম্পিউটার নিয়ে পালাচ্ছেন আমানতকারী। —নিজস্ব চিত্র। |
গ্রাহকদের অভিযোগ, নন্দন দাস নামে ওই সংস্থার ‘টিম লিডার’ কিছু আমানতকারীকে চেকে টাকা ফেরত দিলেও তাতে সই ছিল না। নন্দন দাসের বক্তব্য, “মঙ্গলবার গ্রাহকরা কিছু এজেন্টকে আটকে রাখলে বাধ্য হয়ে আমি নিজস্ব অ্যাকাউন্ট থেকে চেক দিয়েছিলাম। কয়েকটি চেকে সই হয়নি ঠিকই, আসলে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেও পাওয়া যাচ্ছে না।” এরপর কিছু আমানতকারীকে এ দিন আসতে বলেছিলেন ওই সংস্থার শাখা ম্যানেজার। এ দিন সকালে গ্রাহকেরা পৌঁছে দেখেন কার্যালয়ের গেটে তালা ঝুলছে। এর পরে ক্ষুব্ধ আমানতকারীরা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। বিক্ষোভরত এক আমানতকারী হাফিজুল খান বলেন, “কিছু বেশি পাওয়ার আশায় ওই সংস্থায় টাকা রেখেছিলাম। চারিদিকের ঘটনায় আর ভরসা রাখতে না পেরে নিজের টাকাটা ফেরত চাইতে অফিসে এসে দেখছি তালা ঝুলছে।” দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও কেউ না এলে গ্রাহক ও এজেন্টরা জমায়েত হয়ে ওই সংস্থার অফিসে ভাঙচুর চালান। বিক্ষুব্ধদের একাংশ অফিস থেকে কম্পিউটার, ফ্যান, টিভি, চেয়ার-সহ অন্যান্য সামগ্রী লুঠপাট করে নিয়ে যায়। সংস্থার এজেন্ট সাহানা বিবি বলেন, “কিছু গ্রাহক ও স্থানীয় লোকজন সংস্থার অফিসে আতঙ্কে ভাঙচুর করেছে। আমরা তাদের থামানোর চেষ্টা করলে ওরা আমাদের ওপর চড়াও হয়।” এ দিনের ঘটনার পরেও অবশ্য শাখা ম্যানেজার পিন্টু মাইতিকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
ঝাড়গ্রামে ধৃত এটিএম গ্রুপের শাখা ম্যানেজার বিদ্যুৎবাবুর বাড়ি ঘাটাল মহকুমার চন্দ্রকোনায়। তিনি আইনজীবীও বটে। তিনি ঝাড়গ্রাম মহকুমা আদালতের একটি বার অ্যাসোসিয়েশনেরও সদস্য। তবে বিদ্যুৎবাবু ঝাড়গ্রাম আদালতে আইন ব্যবসা করতেন না। অর্ঘ্যবাবু ও রঞ্জিতবাবু ঝাড়গ্রাম শহরের বাসিন্দা। দাউদ আলির বাড়ি ঝাড়গ্রাম থানার জুবনিকাটা গ্রামে। ধৃতদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, অর্থ আত্মসাৎ ও ষড়যন্ত্রের ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ। শুক্রবার ধৃতদের ঝাড়গ্রাম এসিজেএম আদালতে তোলা হয়। আদালতে অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবীরা দাবি করেন, “ধৃতেরা এটিএম গ্রুপের ঝাড়গ্রাম শাখার বেতনভূক কর্মী মাত্র। সংস্থার বিশ্বাসভঙ্গের দায় কোনও ভাবেই ধৃতদের উপর বর্তায় না।” সরকারি কৌঁসুলি কণিষ্ক বসু আদালতে পাল্টা দাবি করেন, “ওই সংস্থার লোক ঠকানো ও প্রতারণা ব্যবসায় ওই চার জনই সমান ভাবে যুক্ত ছিলেন। এ বিষয়ে ধৃতদের পুলিশ হেফাজতে রেখে উপযুক্ত তদন্ত করানো প্রয়োজন।” উভয় পক্ষের সওয়াল-জবাব শোনার পর ধৃতদের জামিনের আবেদন খারিজ করে দিয়ে বিদ্যুৎবাবু-সহ চার জনকেই দশ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক প্রিয়জিৎ চট্টোপাধ্যায়। |
|
ঝাড়গ্রাম আদালত চত্বরে বিদ্যুৎ মাইতি |
অভিযোগকারী আমানতকারী পার্থসারথি সাউ ঝাড়গ্রাম শহরেরই বাসিন্দা। পেশায় ব্যবসায়ী পার্থসারথিবাবু গত বছর এটিএম গ্রুপের ঝাড়গ্রাম শাখায় এক বছরের জন্য রেকারিং ডিপোজিট করেছিলেন। চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মাসে তিনি ওই সংস্থায় কুড়ি হাজার টাকা করে এক বছরে ২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা জমা দেন। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, গত ৩০ এপ্রিল তাঁর ফেরত পাওয়ার কথা ছিল ২ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। কিন্তু মেয়াদ উত্তীর্ণ টাকা দিতে অস্বীকার করে সংস্থাটি। এরপরই বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রাম থানায় অভিযোগ দায়ের করেন পার্থসারথিবাবু। মোট ৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন পার্থসারথিবাবু। বাকি চার অভিযুক্ত হলেন এটিএম গ্রুপের চিফ ম্যানেজিং ডিরেক্টর তৈমুর আলি গায়েন, ডিরেক্টর প্রদীপ দাস, দুই ডেভেলপার এনামুল হক ও জিয়াবুল হক। পুলিশ জানিয়েছে, ওই চার জনের খোঁজ করা হচ্ছে। ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলার সুপার ভারতী ঘোষের বক্তব্য, “অর্থ লগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলেই পুলিশের পক্ষ থেকে যথাযথ পদক্ষেপ করা হচ্ছে।”
এ দিকে, বৃহস্পতিবার থেকে এটিএম গ্রুপের মেদিনীপুর শহরে থাকা কেরানিতলা শাখা অফিসটি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। শুক্রবারও অফিস বন্ধ দেখে গ্রাহকদের মনে সন্দেহ জাগে। গ্রাহকদের পাশাপাশি দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ওই বাড়ির মালিকও। বাড়ি মালিক শেখ রহিম থানায় লিখিত ভাবে জানিয়েছেন, ২০১১ সালের ৫ জুলাই থেকে তিন বছরের জন্য ওই সংস্থাটিকে বাড়ি ভাড়া দিয়েছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার থেকে হঠাৎ অফিস বন্ধ। এই পরিস্থিতিতে গ্রাহকেরা তাঁর বাড়িতে হামলা করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। যাতে এই ধরনের ঘটনা না ঘটে সে জন্য কোতয়ালি থানায় ও মেদিনীপুরের মহকুমাশাসকের কাছে একটি আবেদন জানিয়েছেন শেখ রহিম। মেদিনীপুরের মহকুমাশাসক অমিতাভ দত্ত বলেন, “এ বিষয়ে পুলিশকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।”
সংস্থার প্রধান তৈমুর আলি গায়েনের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা যায়নি। |
|
|
|
|
|