এক দিকে, প্রশাসনিক জট। অন্য দিকে, প্রযুক্তিগত জট। তাই পিছিয়ে গেল বিবেকানন্দ রোড উড়ালপুল তৈরির কাজ। তবে কর্তৃপক্ষের দাবি, দ্রুত কাজ শেষ হবে।
আগের বাম সরকারের আমলেই বিবেকানন্দ রোড উড়ালপুল তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি-কে (কেএমডিএ) তা তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০০৯-এ জেএনএনইউআরএম-এর আওতায় নির্মাণকাজ শুরু হয়। ঠিক ছিল, ২০১৩-র সেপ্টেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হবে।
বিবেকানন্দ রোড, গিরিশ পার্ক এবং পোস্তা অঞ্চলের যানজট কমাতে উল্টোডাঙা মোড় থেকে হাওড়া ব্রিজ পর্যন্ত ৪.৬ কিলেমিটার দীর্ঘ উড়ালপুলের কথা ভাবা হয়েছিল। প্রকল্পটি দু’ভাগে ভাগ করা হয়। এক ভাগে গিরিশ পার্ক থেকে হাওড়া ব্রিজ পর্যন্ত কাজ হবে। অন্য ভাগে, উল্টোডাঙা মোড় থেকে গিরিশ পার্ক পর্যন্ত। এখন গিরিশ পার্ক থেকে হাওড়া ব্রিজ পর্যন্ত ২.২ কিলোমিটারের কাজ চলছে। এ জন্য বরাদ্দ হয়েছে ১৬৫ কোটি টাকা।
উড়ালপুলটি গিরিশ পার্ক থেকে পোস্তা হয়ে হাওড়া ব্রিজের সঙ্গে যুক্ত হবে। গিরিশ পার্কের মুখে উড়ালপুলে ওঠানামার জন্য দু’টি অ্যাপ্রোচ রোড থাকছে। অন্য একটি রাস্তা উড়ালপুল থেকে বেরিয়ে নিমতলা স্ট্রিটের দিকে যাবে। এই রাস্তাটি দু’লেনের। বাকি উড়ালপুল চার লেনের।
কেএমডিএ-র মুখ্য ভারপ্রাপ্ত কার্যনির্বাহী আধিকারিক অরূপ শা বলেন, “প্রশাসনিক ও প্রযুক্তিগত জটিলতা কিছু ছিলই। তবে মূল সমস্যা ঠিকাদারকে নিয়েই। ঠিকাদারি সংস্থা ঠিকমতো কাজ করেনি। তাই তাদের শো-কজ করা হয়েছে। যাতে তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করা যায় সে দিকেও নজর রাখা হয়েছে।” |
ঠিকাদারি সংস্থার এক উচ্চপদস্থ আধিকারিকের কথায়: “বড়বাজার শহরের অন্যতম প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র। দিনে অনেক গাড়ি পার্ক করা থাকে। পার্কিং সরিয়ে কাজ করা সমস্যার। রাতেই কয়েক ঘণ্টা ভাল ভাবে কাজ করা যায়। পুর-পরিষেবা সংক্রান্ত সমস্যা হলেই সেগুলি মেরামত করতে হয়। তখন কাজ বন্ধ থাকে। কোথাও কোথাও কাজ করতে গিয়ে সরকারের বিভিন্ন দফতরের অনুমতিও প্রয়োজন। ফলে প্রশাসনিক জট তৈরি হয়।”
কলকাতা পুরসভার মেয়র তথা কেএমডিএ-র ভাইস চেয়ারম্যান শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। সমস্যা কিছু ছিল। এই কাজ দ্রুত শেষ করতে উদ্যোগী হচ্ছি।” স্থানীয় বিধায়ক স্মিতা বক্সীর কথায়: “অনেক দিন এই উড়ালপুলের কাজ অসমাপ্ত হয়ে রয়েছে। কাজ শেষ না হওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। আমি রাজ্য সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি।”
সমস্যা কোথায়?
কেএমডিএ কর্তৃপক্ষ জানান, এই উড়ালপুল তৈরির জন্য বন্দর এলাকার জমির প্রয়োজন ছিল। এখানে বন্দর কর্তৃপক্ষের একটি অফিসও রয়েছে। যেখানে হাওড়া ব্রিজ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মালপত্র রাখা হয়। এই অংশ দিয়ে উড়ালপুল গেলে বন্দরের অসুবিধা হবে। তাই বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রথমে অনুমতি দেননি। পরে অনুমতি পাওয়া গিয়েছে। অন্য দিকে, বড়বাজারের পুরনো টাঁকশাল ‘হেরিটেজ’। এর সামনে নির্মাণে কেন্দ্রীয় সরকার আপত্তি তোলে। তাই পরিকল্পনার কিছু পরিবর্তন করতে হয়। এ ছাড়া পার্কিং নিয়েও কিছু সমস্যা রয়েছে বলেও কেএমডিএ কর্তৃপক্ষ জানান।
কলকাতা বন্দরের এক আধিকারিক জানান, হাওড়া সেতু মেরামতির জন্য যন্ত্রপাতি নিয়ে যাওয়ার রাস্তা দরকার। বিকল্প রাস্তা তৈরির ব্যাপারে কেএমডিএ কর্তৃপক্ষকে জানান হয়েছে। এই প্রকল্পের ভারপ্রাপ্ত কেএমডিএ-র মুখ্য বাস্তুকার প্রিয়তোষ ভট্টাচার্য বলেন, “কলকাতা বন্দরের অসুবিধার কথা ভেবে একটি বিকল্প রাস্তা তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে। দরপত্রও হয়ে গিয়েছে। পুরনো টাঁকশালের সামনে ছ’মিটার রাস্তা ছাড়া হয়েছে। সেখানে কাজও শুরু হয়েছে।” |