ভাসার আশঙ্কা
বেহাল স্বর্ণময়ী
দুই দফতরের টানাপোড়েন। অভিযোগ, তাই দীর্ঘ দিন সারানো হয়নি লকগেট। অবাধে ঢুকছে জোয়ারের জল। জমছে পলি। ক্রমেই বুজে যাচ্ছে হাওড়ার স্বর্ণময়ী খাল। ফলে আগামী বর্ষায় এলাকা ভাসবে বলে আশঙ্কা স্থানীয় বাসিন্দাদের।
প্রায় ২ কিলোমিটার দীর্ঘ স্বর্ণময়ী খালটি আন্দুল রোড থেকে শুরু হয়ে কলেজ রোড, বেসু ও স্বর্ণময়ী রোড হয়ে গঙ্গা পর্যন্ত বিস্তৃত। এটি হাওড়া পুরসভার ৩৮, ৩৯ ও ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্য দিয়ে গিয়েছে। এর আশপাশে প্রায় পঞ্চাশ হাজার মানুষ বসবাস করেন। এই অঞ্চলের নিকাশির প্রধান ভরসা এই খাল।
ফরশোর রোডের কাছে খালটি গঙ্গায় মিশেছে। এখানেই রয়েছে লকগেট। লকগেটটি দীর্ঘ দিন ধরে খারাপ।
তাই অবাধে খালে জল ঢুকছে। জমছে পলিও। পুরসভার মেয়র পারিষদ (নিকাশি) দেবাশিস ঘোষের কথায়: “এই লকগেটটি খারাপ হয়ে গিয়েছে। তাই গঙ্গার জল ঢুকছে। দীর্ঘ দিন এ ভাবে চলার ফলেই পলি জমে ক্রমশ মজে গিয়েছে খালটি।” পুরসভা সূত্রে খবর, লকগেটটির দু’পাশে তিনটি করে ফ্ল্যাপ ও ড্রপশাটার আছে। জোয়ারের সময় ফ্ল্যাপশাটারগুলিকে নামিয়ে জোয়ারের জল আটকানো হয়। সে সময় ড্রপশাটার খোলা থাকে। ভাটার সময়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ জল বেরিয়ে যাওয়ার পরে ড্রপশাটার নামিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এই লকগেটটির চারটি শাটার নামানো রয়েছে। আর একটি সর্বদাই খোলা। ফলে জোয়ারের জল অবাধে ঢুকে পড়ে।
অভিযোগ, পলি জমে খাল মজে যাওয়ায় নস্করপাড়া, রামকৃষ্ণপুর বালিকা বিদ্যালয় ও বেসু এলাকায় বর্ষার জল ঢুকে যায়। বেসু-র রেজিস্ট্রার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বর্ষার সময় স্বর্ণময়ী খাল উপচে ক্যাম্পাসের মধ্যেই জল ঢুকে পড়ে। মেয়রের কাছে অভিযোগ করেছিলাম। তিনি সেচ দফতর, এইচআইটি, কেএমডিএ, হাওড়া পুরসভা এবং আমাদের সঙ্গে বৈঠকও করেন। তার পরে কিছু হয়নি।”
৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সিপিএমের সুজিত মুখোপাধ্যায়ের কথায়: “বর্ষা আসার আগে লকগেটটি সারানো না হলে এই ওয়ার্ডের কলেজ রোড ও বেসু চত্বর ভাসবে।” বাসিন্দাদের অভিযোগ, আন্দুল রোডের লক্ষ্মীনারায়ণতলা মোড়ের কাছে খালটি আগাছায় ভরে উঠেছে। কিছুটা এগিয়েই সেতুতে ওঠার মুখে খালটি সম্পূর্ণ বুজে গিয়েছে। কলেজ রোডে খাল আবর্জনায় ভরে উঠেছে। খালের জল সরু হয়ে বয়ে যাচ্ছে। যদিও মাঝেমধ্যে আবর্জনা পরিষ্কার করা হয় বলে দাবি পুরসভার।
পুরসভা সূত্রে খবর, খালটি সেচ দফতরের হলেও লকগেটটি দেখাশোনা করে কেএমডিএ। পুরসভার মেয়র মমতা জয়সোয়াল বলেন, “খাল সংস্কারের দায়িত্ব সেচ দফতরের। আর লকগেটটির দেখাশোনা করে কেএমডিএ। ফলে আমাদের কিছু করণীয় নেই।”
নাজিরগঞ্জের এসডিও (সেচ) রানা চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘স্বর্ণময়ী খালের সংস্কার ও লকগেট সারাইয়ের অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। কিন্তু কেএমডিএ লকগেটটির অধিকার সেচ দফতরকে না দেওয়া পর্যন্ত কিছু করা যাবে না।” যদিও কেএমডিএ-র এক কর্তা বলেন, “১৯৯৩-এ লকগেটটি কেএমডিএ তৈরি করেছিল। কিন্তু লকগেটটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব আমাদের নয়।” রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “লকগেটটি যার দায়িত্বেই থাকুক সাধারণ মানুষের কথা ভেবে দ্রুত সংস্কার করা হবে। দফতরের সঙ্গে কথা বলেছি। আলোচনা করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.