এলাকা ছিল কার্যত দলের এক গোষ্ঠীর দখলে। সেখানে জনসভা করে ওই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তোপ দাগল তৃণমূলেরই অন্য গোষ্ঠী। কেতুগ্রাম ১ ব্লকের কান্দরায় বৃহস্পতিবার বিকেলের এই ঘটনায় স্থানীয় বিধায়ক শেখ সাহানেওয়াজের গোষ্ঠী ও দলের ব্লক সভাপতি রত্নাকর দে-র গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদ আরও প্রকাশ্যে এসে পড়ল। বিধায়কের গোষ্ঠীর আয়োজন করা এই সভায় উপস্থিত নেতারা নাম না করে নানা অভিযোগে বিঁধলেন ব্লক সভাপতিকে।
তৃণমূলের একটি সূত্রে জানা যায়, কান্দরায় দলের ব্লক সদর দফতরে প্রবেশ কার্যত ‘নিষিদ্ধ’ বিধায়কের গোষ্ঠীর লোকজনের। বিধায়কের সঙ্গে ব্লক সভাপতির অনুগামীদের গোলমাল বেধেই থাকত। কান্দরায় আধিপত্য ছিল রত্নাকরবাবুদেরই। সম্প্রতি সেখানে দু’গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষও হয়। রত্নাকরবাবুর দুই অনুগামীকে নানুরের পাপুড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগও উঠেছিল বিধায়কের গোষ্ঠীর লোকজনের বিরুদ্ধে। তৃণমূল সূত্রেই জানা যায়, এই ঘটনার পর থেকে কান্দরা ‘দখলের’ পরিকল্পনা করেন বিধায়কের অনুগামীরা। সেই মতো বৃহস্পতিবার বিকেলে কান্দরা বাজারে জনসভা করেন বিধায়কের অনুগামীরা। স্থানীয় বিধায়ক শেখ সাহানেওয়াজ ছাড়াও সেখানে হাজির ছিলেন নানুর ও পূর্বস্থলীর দুই বিধায়ক যথাক্রমে গদাধর হাজরা ও তপন চট্টোপাধ্যায়। |
ব্লক সভাপতির অনুগামীদের নানা কাজকর্ম নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় এই সভায়। বিভিন্ন পঞ্চায়েত বা স্কুল উন্নয়নের টাকা থেকে কমিশন নেওয়া, ঠিকাদারদের থেকে তোলা আদায়, নারী নির্যাতনের ঘটনায় মীমাংসার নামে টাকা আদায় ইত্যাদির অভিযোগ তোলা হয় ব্লক সভাপতির গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। শেখ সাহানেওয়াজের দাবি, “উন্নয়নের টাকা আসছে আর তা থেকে কমিশন নেওয়া হচ্ছে। যাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তিনি গুণ্ডা, দুর্নীতিগ্রস্তদের নিয়ে চলতে চাইছেন। সাবধান হন।” নানুরের বিধায়ক গদাধরবাবু রত্নাকরবাবুর নাম না করে অভিযোগ করেন, “তৃণমূলের পতাকা নিয়ে বিরোধীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে দলের লোকজনকে খুনের চক্রান্ত করছেন। এ সব বরদাস্ত করা হবে না।” বিধায়ক তপনবাবুর দাবি, “কান্দরা থেকে কিছু তৃণমূল নেতা বিরোধীদের উস্কানি দিচ্ছেন। এই সব বিভীষণদের বিরুদ্ধে আগে ব্যবস্থা নিতে হবে।”
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এই সভার আগে কান্দরায় ঢুকতে পারতেন না বিধায়ক গোষ্ঠীর নেতা-কর্মীরা। কাটোয়া আসতে হলেও তাঁদের অন্য রাস্তা ধরতে হত। সভার পরে বিধায়ক গোষ্ঠীর নেতা বেরুগ্রামের সাহেদুল্লা বা কান্দরার জটাই মণ্ডলেরা বলেন, “সাধারণ মানুষ এ বার থেকে কান্দরায় শান্তিতে যাতায়াত করতে পারবেন। মানুষ দুর্নীতিগ্রস্তদের বর্জন করেছে।”
ব্লক সভাপতি রত্নাকরবাবুর অবশ্য পাল্টা বক্তব্য, “বন্দুকের নলের সামনে মানুষ মাথা নিচু করতে বাধ্য হয়েছেন। বিধায়কের সঙ্গে যাঁরা ঘোরেন তাঁদের নামে একাধিক ফৌজদারি মামলা রয়েছে। তাই মানুষ জানেন, কারা গুণ্ডা আর কারাই বা দুর্নীতিগ্রস্ত।” সিপিএমের ভাগীরথী-অজয় জোনাল কমিটির সদস্য ফারুক মির্জার প্রতিক্রিয়া, “ওই দুই গোষ্ঠীর মারামারিতে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।” |