|
সংসারে টাকা দিতে
কাজ করে ছোটরা
জয়িতা সরকার • শিলিগুড়ি |
|
চা শ্রমিক বাবা-মার বয়স হয়েছে। তাই উত্পাদন বাড়াতে তাঁদের ঘরের শিশু-কিশোরদের বিনা মজুরিতে চা বাগান মালিক কাজে লাগাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা চা বাগানের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে সমীক্ষা করতে গিয়ে ওই তথ্য মিলেছে বলে দাবি করেছে। সংস্থার তরফে খসড়া রিপোর্ট তৈরি করে চা শ্রমিক সংগঠন সমূহের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেন। একাধিক চা শ্রমিক সংগঠনের তরফে ওই অভিযোগ মেনে নেওয়া হয়েছে।
শ্রমিক নেতাদের অনেকের যুক্তি, “চা শ্রমিকদের মজুরি মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে মানানসই নয়। উত্পাদন বাড়াতে জন্য শ্রমিকদের উপরে চাপ বাড়ছে। অনেক শ্রমিক তা পেরে উঠছেন না। ফলে, ঘরের শিশু-কিশোরদের সেই কাজে লাগিয়ে দিচ্ছেন তাঁরা। পাশাপাশি, অভাব মেটানোর জন্য অন্যত্র কাজ করতে যাচ্ছেন কিছু শ্রমিক। যে সময়টা তাঁরা বাগানে থাকছেন না, তাঁদের ঘরের নাবালক ছেলেমেয়েরা বাবা-মায়ের হয়ে চা পাতা তোলা সহ নানা কাজ করে দিচ্ছে।” শ্রমিক সংগঠনের প্রবীণ নেতা চিত্ত দে জানান, মজুরি বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, “মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে ভারসাম্য রেখে মজুরি বাড়াতে হবে। না হলে চা বাগানের শ্রমিকদের দারিদ্র ঘুচবে না। শিশু-কিশোরদের চা বাগানের কাজে বা বাইরে পাঠানোর প্রবণতাটাও কমানো যাবে না।”
যে সংস্থা সমীক্ষা করেছে, তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাগানে পাতা তোলার কাজে মা-কে সাহায্য করছে এমন শ্রমিকের বয়স ১১ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। সংস্থার খসড়া রিপোর্ট অনুযায়ী ভার্নাবাড়ি, পাহাড়গুমিয়া চা বাগানে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা বেশি। এই বাগানের ১২ বছরের অঞ্জনা গুরুং ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। চা পাতা তোলার সময়ে মা কে সাহায্য করতে বাগানে কাজ করে। কিন্তু কোনও মজুরি পায় না। একই অবস্থা পুষ্পা ও তার বোন প্রেমিকা ছেত্রীর। নিজেদের কাজের কোটা পূরণ করার জন্য প্রতিদিন বাবা-মায়ের সঙ্গে কাজ করে তাঁরা।
তবে শুধু বাগানের মধ্যে কাজ করা নয় সংসার চালাতে বাগানের বাইরে গিয়ে কাজ করছে বাগানের শিশু শ্রমিকেরা। নিজের পরিবারকে সাহায্য করতে বাগান সংলগ্ন শহর এলাকায় অন্যের বাড়িতে কাজ করতে যায় অনেক মেয়েরাই। পাহাড়গুমিয়ার আরতি নাইগেসিয়া চা বাগান ছেড়ে সিকিমে গিয়েছে কাজ করতে। এই সমীক্ষার মাধ্যমে উঠে এসেছে বিভিন্ন বাগানগুলির পারিবারিক গড় আয়। এই আয়ে পরিবারের অভিভাবকরা কতটা আয় করছেন? বাকি আয় কোথা থেকে আসছে? এই ব্যবধান থেকে যে তথ্য, তা থেকেই স্পষ্ট বাগানগুলিতে কাজ করছে শিশুশ্রমিক।
কাজে যেতে হওয়ায় স্কুলছুটের সংখ্যা বাড়ছে। ১১ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে স্কুলছুটের সংখ্যা বেশি। সমীক্ষার পর এই রিপোর্ট নিয়ে মঙ্গলবার বিভিন্ন বাগানের শ্রমিক, ইউনিয়ন নেতাদের নিয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করে পশ্চিমবঙ্গ চা বাগান শ্রমিক কমর্চারী ইউনিয়ন। ইউনিয়নের সভাপতি ভাস্কর নন্দী বলেন, “বাগানগুলির বাস্তব চিত্র তুলে সমস্যা সমাধানে আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছে। বাগানগুলির অবস্থা শ্রমিক ইউনিয়নগুলিকে জানিয়ে সমস্যা সমাধানের জন্য এই সমীক্ষা করা হয়েছে বলে জানান সেন্টার ফর ওয়াকার্স ম্যনেজমেন্টের দিঠি ভট্টাচার্য। সভায় ছিলেন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেতা সাংকৃত্যায়ন, অজিত রায়। উপস্থিত ছিলেন আদিবাসী মেতা তেজকুমার টপ্পো, কো-অর্ডিনেশন কসিটির নেতা চিত্ত দে। |