|
|
|
|
সনিয়াকে বিঁধে অসহযোগ বিজেপির, ফাঁপরে সংস্কার |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
সময়ে ভোট হলে ধাপে ধাপে বিরোধিতাকে তীব্র করে তোলার জন্য হাতে এখনও বছরখানেক সময়। বিজেপি এখন থেকেই কংগ্রেস ও কেন্দ্রের ইউপিএ সরকারের সঙ্গে পুরোপুরি অসহযোগ শুরু করে দিল। সরকারের সংস্কার প্রক্রিয়া এতে ধাক্কা খাবে বলেই আশঙ্কা তৈরি হয়েছে কংগ্রেস শিবিরে।
দুর্নীতির দায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে ইস্তফা দিতে হবে, এই দাবি তারা আগেই তুলেছে। প্রধান বিরোধী দলনেত্রী সুষমা স্বরাজ এ বার সরাসরি কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর বিরুদ্ধে দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধীরে ধীরে নষ্ট করে ফেলার অভিযোগ আনলেন। সংসদে বিরোধী দলের কন্ঠরোধের চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে সুষমা আজ ঘোষণা করে দিলেন, স্পিকার মীরা কুমার বা সংসদীয় মন্ত্রী কমল নাথের ডাকা কোনও বৈঠকে তাঁরা উপস্থিত থাকবেন না।
দলে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রপ্রার্থীদের দৌড়ে রয়েছেন সুষমা। অথচ তাঁর সঙ্গে সনিয়ার ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠতা নিয়ে দলে গুঞ্জন তৈরি হচ্ছে কিছু দিন ধরে। সনিয়াকে আক্রমণের মাধ্যমে কার্যত আজ সেই গুঞ্জনে জল ঢালার চেষ্টা করলেন সুষমা। কারণ তিনি বুঝতে পারছিলেন, প্রধানমন্ত্রী পদের দৌড়ে থাকতে গেলে সনিয়ার সঙ্গে প্রকাশ্যে দূরত্ব তৈরি করা প্রয়োজন। পাশাপাশি দলকেও তিনি বার্তা দিলেন, এই সরকারের শেষের শুরু হয়ে গিয়েছে। কাজেই কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আন্দোলনে নামতে হবে।
এতে সঙ্কট বাড়ল সরকারের। কারণ, প্রধান বিরোধী দল অসহযোগিতায় নামলে মনমোহন সিংহ সংস্কারের কাজ আর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন কি না সেই প্রশ্ন উঠছে এখন। কিছু দিন আগেই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম আমেরিকা ও কানাডায় গিয়ে বিনিয়োগকারীদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছেন, এই অধিবেশনেই বিমা ও জমি অধিগ্রহণ বিল পাশ করানো হবে। বিজেপি আজ লোকসভা থেকে ওয়াক-আউট করে বাজেট ও অর্থ বিল পাশ করাতে দিয়েছে। কিন্তু সুষমা এ দিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন, খাদ্য সুরক্ষার মতো
বিল পাশে তাঁরা কোনও রকম সহযোগিতা করবেন না। এই সব বিল পাশ করিয়ে আম আদমির কাছে সামাজিক নিরাপত্তা দেওয়ার দাবি করবে কংগ্রেস। এটা তাঁরা হতে দেবেন না। সুষমার কথায়, “আজকের পরে আর সরকারের সঙ্গে সহযোগিতার প্রশ্নই নেই।”
সাংবিধানিক সঙ্কট এড়াতেই বিজেপি ওয়াকআউট করে অর্থ বিল পাশ হতে দেবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ওই যুক্তি তাদের সংসদে পেশ করতে দিতে হবে এটাই ছিল সরকারের সঙ্গে রফার সূত্র। চিত্রনাট্য অনুযায়ী সুষমা আজ লোকভায় বলতে শুরু করতেই কংগ্রেসের মন্ত্রী ও সাংসদরা বাধা দিতে থাকেন। অগ্রণী ভূমিকা নেন কপিল সিব্বল, পবন বনশল। সুষমার অভিযোগ, “সনিয়ার উস্কানিতেই এটা হয়েছে। স্পিকারও আমাকে সমর্থন না করে উল্টে বসে পড়তে নির্দেশ দেন।” সুষমার অভিযোগ, ইউপিএ-র চেয়ারার্সন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিশ্বাস করেন না। এবং সে কারণেই বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছে সিএজি, পিএসি, জেপিসি-র মতো সংস্থা। প্রায় সুষমার ধাঁচেই রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা অরুণ জেটলিও আজ সিবিআইয়ের বিশ্বাসযোগতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
এই রাজনৈতিক লড়াইয়ে বিপাকে পড়তে চলেছে সংস্কারের প্রক্রিয়া। চিদম্বরম বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, সরকার জমি অধিগ্রহণ, বিমা বিল পাশ করাতে চাইছে। কিন্তু যে ভাবে আলোচনা ছাড়াই ভোটাভুটি করে বাজেট ও অর্থবিল পাশ করাতে হল, তার পরে ওই সব বিল পাশ করানো কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে বড় রকমের সংশয় থাকছে। উল্টে সরকারের তরফেই ইঙ্গিত মিলছে, নির্ধারিত সময়ের আগেই চলতি সপ্তাহের শেষে বাজেট অধিবেশনের ইতি ঘোষণা করা হবে। পরিস্থিতি অনুকূল হলে বাদল অধিবেশনের আগে কিছু দিনের জন্য সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হতে পারে। সে সময় গুরুত্বপূর্ণ বিলগুলি পাশ করানোর চেষ্টা হবে। |
|
|
|
|
|