নিট মুনাফা ১৫% বাড়ার খবর হিন্দুস্তান ইউনিলিভার জানিয়েছিল সোমবারই। তারপরের দিনই মূল ব্রিটিশ-ডাচ সংস্থা ইউনিলিভার এই ভারতীয় সংস্থায় তার মালিকানা বাড়াতে ৫৪০ কোটি ডলার (২৯,৭০০ কোটি টাকা) লগ্নির প্রস্তাব দিল। সাম্প্রতিক কালে যা ভারতে সবচেয়ে মূল্যবান কর্পোরেট লেনদেনের প্রস্তাব বলে শেয়ার বাজার সূত্রের দাবি।
ভারতের বৃহত্তম ভোগ্যপণ্য সংস্থা হিন্দুস্তান ইউনিলিভার (এইচইউএল)-কে নিয়ে এই প্রস্তাবের জেরে সংস্থার শেয়ার দর মুম্বই বাজারে এক লাফে বেড়ে গিয়েছে ১৭.২৮%। সাধারণ ভাবে সেনসেক্সকেও তা টেনে তুলেছে গত ছ’সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ অঙ্কে। গত কাল সোমবার ১০১ পয়েন্ট বাড়ার পর মঙ্গলবার আরও ১১৭ পয়েন্ট বেড়ে তা ১৯,৫০০ পেরিয়েছে। অন্য দিকে, মূলত বিদেশি লগ্নি সংস্থার শেয়ার কেনার প্রভাবে ডলারে টাকার দামও বেড়েছে ৪৫ পয়সা। দিনের শেষে প্রতি ডলারের দাম দাঁড়ায় ৫৩.৮০ টাকা।
এই মুহূর্তে ভারতীয় সংস্থায় ইউনিলিভারের অর্ধেকের কিছুটা বেশি শেয়ার রয়েছে। তা আরও ২২.৫২% পর্যন্ত বাড়িয়ে প্রায় ৭৫% করাই মূল বহুজাতিক সংস্থাটির লক্ষ্য। প্রস্তাব অনুযায়ী, শেয়ার পিছু তারা দর দেবে ৬০০ টাকা, যা সোমবার মুম্বই বাজারের দামের চেয়ে ২০.৬% বেশি। ইউনিলিভারের চিফ এগ্জিকিউটিভ পল পোলম্যান তাঁর বিবৃতিতে বলেন, “সম্ভাবনাময় রাষ্ট্রগুলিতে লগ্নির ঝাঁপি নিয়ে হাজির হওয়ার নীতি মেনে চলছে সংস্থা। এর প্রভাবে হিন্দুস্তান ইউনিলিভারের শেয়ার দর বাড়লে উপকৃত হবেন সংস্থার বর্তমান শেয়ারহোল্ডাররা।”
শেয়ার বাজার বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদদের মতে:
• প্রথমত, এটা ভারতের দ্রুত বাড়তে থাকা ভোগ্যপণ্যের বাজারে ইউনিলিভারের আস্থারই ইঙ্গিত।
• দ্বিতীয়ত, পোলম্যানের সুরেই তাঁরা বলেন, ইউরোপ, আমেরিকায় যখন মন্দার মেঘ পুরো কাটার সম্ভাবনা ক্ষীণ, তখন দীর্ঘ মেয়াদে ভারতের মতো সম্ভাবনাময় বাজারেই গুরুত্ব দিতে চাইছে ইউনিলিভারের মতো বহুজাতিক।
• তৃতীয়ত, ভারতে বৃদ্ধি এক দশকে সবচেয়ে নীচে নেমে (প্রায় ৫%) আসা সত্ত্বেও দীর্ঘ মেয়াদে অর্থনীতির হাল ফেরা নিয়ে তারা আশাবাদী।
মঙ্গলবার লোকসভায় অর্থ বিল পাশ হওয়া ও বিদেশি লগ্নিতে উত্সাহ দিতে অর্থমন্ত্রী চিদম্বরমের ঘোষণাও সূচককে উঠতে সাহায্য করে। প্রসঙ্গত, ইউনিলিভারের প্রস্তাবে দিনের শুরুতে সূচক উঠলেও দুপুরের পর থেকে তা পড়তে থাকে। চলতি আর্থিক বছরের জন্য বিশ্বব্যাঙ্ক ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির পূর্বাভাস ৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৬.১ শতাংশ করার জেরেই নামতে থাকে সূচকের পারা।
তবে তার পরেই আসে অর্থ বিল পাশ হওয়া এবং শেয়ার বাজারে বিদেশি লগ্নি নিয়ে চিদম্বরমের আশ্বাস দেওয়ার খবর। বিদেশি আর্থিক সংস্থা সংশ্লিষ্ট বিদেশি সরকারের কাছ থেকে যে ‘ট্যাক্স রেসিডেন্সি সার্টিফিকেট (টি আর সি) হাতে পান, সেটিই ভারতে গ্রাহ্য হবে বলে জানিয়ে দেন অর্থমন্ত্রী। কর সংক্রান্ত বিষয়ের জন্য বিদেশে বসবাসের প্রমাণ হিসাবে তা গৃহীত হবে। এর আগে বাজেট পেশ করার সময়ে অর্থমন্ত্রী ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, বিশেষ করে কর এড়াতে মরিশাসের মতো কয়েকটি দেশের মাধ্যমে আসা লগ্নির ক্ষেত্রে এই সার্টিফিকেট গ্রাহ্য করার ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করা হবে। তা নিয়ে আশঙ্কা কেটে যাওয়ায় বিদেশি আর্থিক সংস্থাগুলির লগ্নি বেড়ে যায়।
কৃষি জমিতে কর না-বসানো এবং অনাবাসী ভারতীয়দের দেওয়া সুবিধাও বাজারকে চাঙ্গা করে তোলে। অনাবাসীরা দীর্ঘ মেয়াদি পরিকাঠামো বন্ডে লগ্নি করলে তার উপর সুদ নেওয়ার ক্ষেত্রে প্যান দাখিল করতে হবে না এবং বাড়তি করও বসবে না। |