কৃষিখামারে যে জলাশয় রয়েছে, তাতে মাছ চাষ করার জন্য তোড়জোড় শুরু করল কৃষি দফতর। মাছ চাষ করার জন্য মে-জুন মাসই ভাল সময়। কৃষি দফতরের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, চলতি মরসুমেই রাজ্যের ১৯৬টি কৃষিখামারের মধ্যে ৭৫টিতে মাছ চাষ করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাঁরা। এর জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবে মৎস্য দফতর।
এই রাজ্যে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ১৯৬টি কৃষিখামার রয়েছে। প্রতিটি খামারেই একাধিক জলাশয় আছে। এতদিন কিছু-কিছু জলাশয়ে চুক্তি ভিত্তিক মাছ চাষ হয়েছে। কিন্তু এই নিয়ে নির্দিষ্ট কোনও পরিকল্পনা না-থাকায় সেই ভাবে আয় হত না। এ বার বছরে দু’বার পুকুরগুলিতে রুই, কাতলা, মৃগেল, সিলভার-কাপ-সহ বিভিন্ন ধরনের মাছ চাষের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সহ কৃষি-অধিকর্তা আনন্দ মণ্ডল এই প্রকল্পটি দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন। আনন্দবাবু বলেন, “প্রাথমিক ভাবে রাজ্যে ৭৫টি কৃষিখামারে মাছ চাষ করা হবে। পরে সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। মাছ চাষের জন্য খামারের লোকজন ছাড়াও চুক্তিভিত্তিক লোক নিয়োগ করা হবে। তাঁরা পুকুর সংস্কার থেকে যাবতীয় কাজ দেখভাল করবেন। চলতি মরসুমেই শুরু হবে মাছ চাষ।” |
মাছের উৎপাদন বাড়ানোই লক্ষ্য।—নিজস্ব চিত্র। |
কৃষি দফতর সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই পশ্চিমাঞ্চলের চারটি জেলাদুই মেদিনীপুর, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়াতে কোন খামারে কোন পুকুরে চাষ হবে, তা ঠিক হয়ে গিয়েছে। কৃষি দফতরের যুগ্ম অধিকর্তা (মেদিনীপুর রেঞ্জ) আসেক আজম জানান দুই মেদিনীপুরে মোট ১৮টি পুকুরে মাছ চাষ করা হবে। পশ্চিম মেদিনীপুরে ৯টি (২০.৬৪ একর), পূর্ব মেদিনীপুরেও ৯টি (১১.৬ একর)। এ ছাড়াও বাঁকুড়ায় ১২টি (২১.৭একর) এবং পুরুলিয়ায় ২২টি পুকুরে (৪০.৭একর) প্রাথমিক ভাবে মাছ চাষ হবে।
কৃষি দফতর সূত্রের খবর, পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশিয়াড়ি, আনন্দপুর, নারায়ণগড়, বেলপাহাড়ি, পিংলা, গোয়ালতোড় ও পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম, কাঁথি, পটাশপুর, এগরা, ভগবানপুরের খামারগুলিতে একাধিক জলাশয়ে মাছ চাষ হবে। অন্য দিকে, বাঁকুড়ায় রানিবাঁধ, শালতোড়া, জয়পুর, জয়রামবাটি, পাত্রসায়র, বিষ্ণুপুরে এবং পুরুলিয়ায় হুড়া, জয়পুর, বলরামপুর, মানবাজার, পুঞ্চা, নিতুড়িয়া, সাতুড়ি, পাড়া, ঝালদা-সহ বেশ কিছু খামারে মাছ চাষ হবে। মৎস্য দফতরের উপ অধিকর্তা (পশ্চিমাঞ্চল) উৎপল সর বলেন, “আমার চারটি জেলায় জলাশয়গুলি ঠিক করা হয়ে গিয়েছে। কিছু পুকুরে জল কম আছে বলে সেখানে মাছ চাষের জন্য পর্যাপ্ত জলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”
সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি এবং মাছের উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই সরকারি উদ্যোগে উপগ্রহ চিত্রের মাধ্যমে জলাশয়, দিঘি থেকে ছোটখাটো পুকুরগুলি চিহ্নিতকরণের কাজ শুরু হয়েছে। দু’একটি জেলা বাদে সমস্ত জেলায় এই কাজ শেষের মুখে। পশ্চিমাঞ্চলের চারটি জেলায় জলাশয় চিহ্নিতকরণের কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। মে মাসেই প্রাথমিক ভাবে ২০ একর বা তার থেকে বড় মাপের জলাশয়গুলিতে মাছ চাষের জন্য সমবায় বা স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। পরে তুলনায় ছোট জলাশয়গুলিতেও মাছ চাষ করার ভাবনা রয়েছে কৃষি দফতরের। |