মিষ্টিতেই মন জয়, ব্যবসায় ভাগ্যও জয় করেছেন কুন্তল
গ্নি সংস্থা খুলে যখন রাতারাতি বড়লোক হওয়ার চেষ্টা করছেন কিছু ধুরন্ধর, শুধু নিজের বুদ্ধি ও নিষ্ঠা পুঁজি করে মিষ্টির দুনিয়ায় উঠে আসছেন মঙ্গলকোটের এক যুবক।
বর্ধমানের সেই মঙ্গলকোট, গত এক দশক ধরে বোমা-গুলি-বারুদের সৌজন্যে যার রাজ্য জোড়া খ্যাতি। সেখানেই বছর তেত্রিশের কুন্তল হাজরা ছোট-ছোট গোলা বানান চকোলেট দিয়ে। মিষ্টিলুব্ধ হাজারো চোখের দিকে ছুড়ে দেন মালাই লাড্ডু।
আজ থেকে নয়। গত দশকের শুরুতে যখন এ নেতা-ও নেতার উস্কানিতে এলাকার অনেক সমবয়সী বোমা বাঁধায় হাত পাকাচ্ছে, সেই বয়সে ক্ষীর নিয়ে খেলায় মেতেছিলেন কুন্তল। পড়াশোনা অবশ্য চোকাতে হয়েছে তার আগেই। অভাবের সংসার টানতে স্কুল পেরিয়েই বর্ধমানের দোকানে কাজে ঢুকেছিলেন। সেই কাজ ছেড়েই পথে নামেন।
মাত্র সাড়ে ছ’শো টাকায় যার শুরু, সেই ব্যবসার পুঁজি বিশ লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে। এক সময়ে মিষ্টি তৈরির বরাত পেতে ঘুরতে হয়েছে দরজায়-দরজায়। এখন রাজ্যের নানা প্রান্ত তো বটেই, বরাত আসে ভিন্ রাজ্য থেকেও। মঙ্গলকোটের ‘কুন্তলের মিষ্টি’ সারা বাংলার মিষ্টি ব্যবসায়ীদের কাছেই বেশ পরিচিত নাম।
কারখানায় কর্মীদের সঙ্গে কুন্তল হাজরা।
পরিচিতি অবশ্য সহজে মেলেনি। একে বাড়ির অবস্থা স্বচ্ছল ছিল না। কুন্তলের বাবা অমলেন্দু হাজরা মিষ্টির দোকানে কারিগরের কাজ করতেন। অভাব ছিল নিত্যসঙ্গী। মঙ্গলকোটের নিগন গ্রামে নিজের মিষ্টি তৈরির কারখানায় বসে কুন্তলের মনে পড়ে, সেই দোকানে কাজ করেই ৬৪৭ টাকা জমিয়েছিলেন। তা তুলে দেন মা বন্দনাদেবীর হাতে। বন্দনাদেবী বলেন, “আমিও মিষ্টির দোকানে কাজ করতাম। ছেলের দেওয়া টাকায় প্রথম ক্ষীরের মিষ্টি গড়ি।”
সেটা ২০০০ সাল। কুন্তলের ভাই সুমন্ত বলেন, “ক্ষীরের প্যাঁড়া, সন্দেশ নিয়ে আমরা সাইকেলে চেপে দোকানে-দোকানে ঘোরা শুরু করি। বিক্রিও হতে থাকে।” ধীরে বাড়তে থাকে ব্যবসা। কিন্তু সত্যিকারের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে কয়েক বছর আগে সল্টলেকে পশ্চিমবঙ্গ মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী সমিতির বার্ষিক সম্মেলনের পরে। সম্মেলনে কুন্তল স্টল দিয়েছিলেন। নিজের মতো করে বিভিন্ন মিষ্টি তৈরি করেছিলেন সেখানে। রাজ্যের কয়েক লক্ষ মিষ্টি ব্যবসায়ীর সে সব মনে ধরে যায়। তাঁরাই কুন্তলকে বরাত দিতে শুরু করেন।
কলকাতারও হৃদয় জয় করে ফেলেন কুন্তল। সত্যি বলতে, কলকাতার বহু দোকানে যে চকোলেট মিষ্টির রমরমা, তার অনেকটাই কুন্তলের কারখানায় তৈরি। মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সম্পাদক, শ্যামবাজারের জগন্নাথ ঘোষের কথায়, “জেলায় তো সাধারণত শুকনো মিষ্টি তৈরি হয় না। কুন্তল তৈরি করেন বলেই চলে।”
কী রকম মিষ্টি?
তাঁর তৈরি ‘চকোলেট বল’।
মালাই লাড্ডু, ম্যাঙ্গো রোল, ম্যাঙ্গো পান, ড্রাইফ্রুট স্যান্ডউইচ, অ্যাপেল স্ট্যাপিং, চকোলেট রোল, চকোলেট বল... কয়েক শতাব্দী ধরে রসগোল্লা-সন্দেশে হৃদয়হারা বাঙালির পাতে অচেনা সব নাম! বেশি নয়, মোটে পনেরো রকম। যার প্রতিটির নমুনা বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজে পাঠিয়ে পরীক্ষা করানো হয়েছে বলে কুন্তলের দাবি। তাঁর মতে, “মরসুমি ফল দিয়ে তৈরি মিষ্টির চাহিদা বাড়ছে। কলকাতা, বর্ধমান ও হলদিয়া শিল্পাঞ্চল ছাড়াও ভিন্ রাজ্যের মিষ্টি ব্যবসায়ীরা বরাত দিয়ে যাচ্ছেন।” কারখানাও তাই কলেবরে বাড়ছে। আপাতত সেখানে স্থায়ী কর্মী আছেন ১৫ জন, অস্থায়ী ২০। এ বার নিগন গ্রামেই তিনতলা কারখানা ও একটি ল্যাবরেটরি তৈরি করবেন বলে ঠিক করে ফেলেছেন কুন্তল। কে বলে, বাঙালি ব্যবসা বোঝে না?

—নিজস্ব চিত্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.