সারদার সংসার

ও লো সই
সুদীপ্ত সেন যে ঘোর সঙ্কটে পড়েছেন, তা প্রথম মালুম হল এ বছরের জানুয়ারিতে। সে-বার আর মাসের মাইনে কর্মীদের অ্যাকাউন্টে অনলাইন পাঠানো হয়নি। নির্দিষ্ট সময়ের বেশ কিছু পরে বিভিন্ন শাখার উঁচুতলার কর্তাদের চেকে মাইনে দিয়েছিলেন সারদা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বেশ কয়েক জনের চেকই ‘বাউন্স’ করে। খোদ সিএমডি-স্যারের সই করা চেক। হতবাক কর্মীদের কেউ কেউ এর পরে সিএমডি-র সঙ্গে যোগাযোগ করলেন। শুনে সিএমডি-র স্মিত জবাব, “ওহ্...তাই! আসলে হঠাৎ আমার সইয়ে একটু গণ্ডগোল হয়ে গিয়েছে।” সইয়ের ভুল শুধরে নতুন চেক বিলির কাজটা অবশ্য শেষ পর্যন্ত সুদীপ্ত আর সেরে উঠতে পারেননি।

কল্পতরু ভোজ
মিডিয়ার ব্যবসা শুরুর সময়ে অফিসের পরিবেশে খুশিই ছিলেন সারদার কর্মীরা। কাজের সময়ে দরকার মতো গাড়ি শুধু নয়, সেক্টর ফাইভের নলেজ হাবে রোজ থাকত জমিয়ে ভূরিভোজের ঢালাও ব্যবস্থা। পিওন থেকে বিভাগীয় প্রধান, সবার জন্য। নিখরচায় এন্তার চা-কফি থেকে শুরু করে ভেজ-মিল। এক দিন অন্তর এগ-মিল। বিশেষ দিনে পোলাও, লুচির সঙ্গে নারকেল-কিসমিস দিয়ে ছোলার ডাল, বেগুন ভাজা, ছানার ডালনা বা আলুর দম। শেষ পাতে পায়েস। কিন্তু ক্রমশ এই আড়ম্বর ফিকে হতে থাকে। পরের দিকে ভোজ হত বিশেষ বিশেষ দিনে। বিধানসভা ভোট কভার করতে কত কী খরচ হবে ঠিক করতে সংবাদমাধ্যমের এডিটোরিয়াল টিমের সঙ্গে বৈঠক ডেকেছেন সারদা প্রধান। হিসেব শুনে প্রায় আঁতকে ওঠেন, “ওরে বাবা, আরও... নির্বাচনী-ফান্ডে টাকা তো ঢেলেই চলেছি।” অগত্যা কিছু কাটছাঁট হল পরিকল্পনায়।

যত মত
‘দীপাবলি উৎসবে উদ্ভাসিত সারদা সিটি।’ ‘ত্যাগের ইদে মাতল সারদাও।’ সারদা-গোষ্ঠীর ইন-হাউস পত্রিকার অনেকটা জুড়ে ছাপা হত এই সব বড়-বড় প্রতিবেদন। সিএমডি-র কড়া নির্দেশ, মানুষের কাছে পৌঁছতে বিভিন্ন উৎসবের সঙ্গে যোগ তৈরি করতে হবে। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে এজেন্ট-গ্রাহকদের কাছে টানতে ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তি মেলে ধরতেও কসুর করতেন না সারদা-কর্তৃপক্ষ। কলকাতার পুজোয় টাকা ঢালা বা বিষ্ণুপুরে সারদা সিটিতে কালীপুজোর আয়োজনে তাই কার্পণ্য ছিল না। সিএমডি স্যার ধর্মভীরু, কথায় কথায় ইষ্টদেবদেবীর নাম করেন। তবে রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীর কায়দায় নিখুঁত ভাবে মেলে ধরতেন সব ধর্মের প্রতি তাঁর সমদর্শিতা।

বাহনহারা
ঢাউস এসইউভি-র চাবিটা হাতে পেয়ে থ হয়ে গিয়েছিলেন সারদার নবনিযুক্ত ম্যানেজার। শিক্ষাগত যোগ্যতা যৎসামান্য। পেশাগত অভিজ্ঞতাও বলার মতো কিছু নেই। সারদা-সংবাদমাধ্যমের নতুন কর্তা তাঁকেই গুরুদায়িত্ব অর্পণ করলেন। মোটা মাইনে, সারা ক্ষণ গাড়ি। সারদার এত বড় বিপর্যয়ের পরেও সেই বাহনের মায়া ছাড়তে পারেননি ওই কর্তা। মাইনে বন্ধ অনেক দিন। কিন্তু আদরের গাড়িতে চড়ে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। এমন সময়ে গাড়ির বকেয়া ঋণ পড়ে থাকায় ব্যাঙ্ক থেকে সেটি বাজেয়াপ্ত করার কথা ঘোষণা করে। গাড়ির খোঁজে গিয়ে ব্যাঙ্কের কর্তারা দেখেন সাহেব গাড়ির কাচ তুলে কোথায় যাচ্ছেন। ব্যাঙ্কের লোকেদের ধমক খেয়ে গাড়ি থেকে নেমে বিসর্জন দিতে হল সাধের বাহন।

নারী-রহস্য
পুরোদমে তদন্ত চলছে দু’সপ্তাহ ধরে। কিন্তু মহিলাদের তালিকাটি এখনও পুরোপুরি হাতে মেলেনি। সারদার সিএমডি স্যারের মহিলা বলয়ের খুঁটিনাটি জানতে গিয়ে পুলিশের কালঘাম ছুটছে। সমস্যা হল, মিডল্যান্ডের পাঁচতলায় যে মহিলারা সুদীপ্ত সেনকে ঘিরে থাকতেন, তাঁদের মধ্যে জনা দশেক পুরনো মুখ ছাড়া বাকি সব মুখ বদলে যেত কিছু দিন অন্তর। কোথায় যেতেন তাঁরা? চাকরি ছেড়ে দিতেন, না বদলি করে দেওয়া হত? রহস্য-ভেদ হয়নি এখনও।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.