সাড়া প্রায় মিলছেই না
আতঙ্ক কাটাতে এখন এজেন্টদেরই বিনিয়োগ করতে বলছে বহু সংস্থা
তুন টাকা তো আসছেই না। উল্টে টাকা তোলার ধুম পড়ে গিয়েছে আমানতকারীদের। এই দুইয়ের সাঁড়াশি চাপে লগ্নিকারীদের ‘আস্থা’ ফেরাতে এ বার এজেন্টদেরই টাকা বিনিয়োগ করতে বলছে কিছু লগ্নি সংস্থা।
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, রবিবার হাওড়ার বীরশিবপুর এবং হুগলির আরামবাগে তিনটি অর্থ লগ্নি সংস্থা তাদের এজেন্টদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসে। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে প্রায় কেউই ওই প্রস্তাবে রাজি হননি বলে একাধিক সংস্থার এজেন্টরা জানিয়েছেন।
কিন্তু কেন এই উলটপুরাণ?
বিভিন্ন অর্থ লগ্নি সংস্থার একাধিক কর্তা বলছেন, “গ্রামেগঞ্জে এজেন্টরাই আমাদের মুখ। তাঁদের কথাতেই মানুষ বিভিন্ন প্রকল্পে লগ্নি করেছে। কিন্তু সারদা গোষ্ঠীতে তছরুপের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরে আমানতকারীদের মধ্যে যে-ভাবে আতঙ্ক ছড়িয়েছে, তার প্রভাব পড়ছে অন্যান্য লগ্নি সংস্থাতেও।” ওই সব সংস্থার কর্তাদের বক্তব্য, মেয়াদ শেষের আগে টাকা তুললে ২০-২৫ শতাংশ কেটে নেওয়া হবে, এ কথা বলার পরেও শত শত মানুষ অফিসে ভিড় জমাচ্ছেন। এরই মধ্যে তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা বিভিন্ন সভা-সমাবেশে টাকা তুলে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়ায় গত দু’দিনে আমাতকারীদের ভিড় আরও বেড়েছে। ওই সংস্থা-কর্তারা জানান, এই ‘দুর্দিনে’ তাঁদের কাছে পেতে, একই সঙ্গে আমানতকারীদের আস্থা অর্জনের জন্য এজেন্টদেরই লগ্নি করতে বলা হয়েছে।
অধিকাংশ এজেন্টই অবশ্য এই প্রস্তাবে রাজি নন। এজেন্টদের একাংশ বলছেন, এত দিন তাঁরাই মানুষকে বিভিন্ন প্রকল্পে লগ্নি করতে বলতেন। কিন্তু সারদা কাণ্ডের পরে তাঁদের সেই বিশ্বাসে চিড় ধরেছে। এই পরিস্থিতিতে তাঁদের কথা শুনে কত জন লগ্নি করবেন, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন এজেন্টরাই। আন্দুলের বাসিন্দা কমল নায়েক বলেন, “কোলাঘাটের একটি লগ্নি সংস্থার এজেন্ট হিসেবে গত চার বছরে আমি ২০ লক্ষেরও বেশি টাকা তুলে দিয়েছি। কিন্তু এক বছর ধরে লগ্নিতে ভাটা চলছে। এখন আমানতকারীদের ধরে রাখতে আমাদেরই লগ্নি করতে বলা হচ্ছে। এ কি সম্ভব?” কমলের সহকর্মী বিপুল দলুই বলেন, “আমরা কমিশনে কাজ করতাম। লগ্নির টাকা কর্তারা কোথায় রাখছেন, কোথায় খাটাচ্ছেন, আমরা জানি না। এখন টাকা না-পেয়ে আমানতকারীরা আমাদের উপরে চড়াও হচ্ছেন। নিরাপত্তা দেওয়া তো দূরের কথা, উল্টে সংস্থায় লগ্নি করতে চাপ দিচ্ছেন কর্তারা।”
আমানতকারীরা অবশ্য এই পরিস্থিতির জন্য এজেন্টদেরও দায়ী করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, আমানতকারীদের টাকা থেকেই তো তাঁরা কমিশন পেতেন। সেই টাকায় অনেকেই পাকাবাড়ি তুলে ফেলেছেন। তাঁদের জীবনযাত্রাও বদলে গিয়েছে। এখন যখন আমানতকারীরা সর্বস্বান্ত, তখন হাতের কাছে কোনও এজেন্টকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করছেন অনেকেই। কিন্তু কমলদের পাল্টা অভিযোগ, “সারদা ৪০% পর্যন্ত কমিশন দিত এজেন্টদের। আমরা পেতাম ২০-২২%। তা-ও সব সময় পুরো টাকা হাতে দেওয়া হত না।” তবে অনেক এজেন্টই তাঁর কমিশনের টাকা সংশ্লিষ্ট সংস্থায় লগ্নি করতেন বলে কমলেরা জানিয়েছেন।
কেমন ছিল এজেন্টদের সুযোগ-সুবিধা? সারদা গোষ্ঠীর একাধিক এজেন্ট বলছেন, ২০১০-এর শেষে তৈরি হয়েছিল ‘চেয়ারম্যানস ক্লাব’। বছরে মোট কমিশনের ২৫% সেখানে জমা রাখলে আপদে-বিপদে ওই ক্লাবের তহবিল থেকে এজেন্টদের অর্থসাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সংস্থা-কর্তৃপক্ষ। এজেন্টরা জানাচ্ছেন, তাঁদের বলা হয়েছিল, পরিবারের কেউ হাসপাতালে ভর্তি হলে বা কারও মেয়ের বিয়ে আটকে গেলে ওই তহবিল থেকে টাকা পাওয়া যাবে। শুধু তা-ই নয়, ওই টাকার সঙ্গে সংস্থাও দেবে সমপরিমাণ অর্থ।
হাওড়ার এক সারদা-এজেন্ট বলেন, “মাস ছয়েক আগে আমাদের বলা হয়েছিল, কাজের সুবিধার জন্য প্রত্যেককে মোটরসাইকেল দেওয়া হবে। তার মোট মূল্যের অর্ধেক সংস্থায় জমালে বাকি টাকা দেবেন কর্তৃপক্ষ। সেই আশ্বাসে অনেক এজেন্টই কমিশনের টাকা সারদায় রেখেছিলেন।” এজেন্টদের অভিযোগ, এ ভাবেই মোটা কমিশনের লোভ দেখিয়ে কাজ হাসিলের পরে সেই টাকাই নানা ছলে নিজের কাছে রাখার ফাঁদ পেতেছিলেন সারদা-প্রধান সুদীপ্ত সেন। আর তাতেই আমানতকারীদের মতো আখেরে ক্ষতিগ্রস্ত তাঁরাও।
যদিও এজেন্টদের এই দাবি পুরোপুরি সত্য বলে মানছেন না আমানতকারীরা। তাঁদের অভিযোগ, বিনিয়োগের সময়ে অধিকাংশ এজেন্টই বলতেন, ‘আমরা তো আছি। আমাদের উপরে বিশ্বাস রাখুন।’ এখন সব দায় সংস্থার উপরে ছেড়ে নিজেরা হাত গুটিয়ে নিলে হবে কেন?
গোয়েন্দারা জানান, লগ্নিকারীদের টানতে সংস্থাগুলির মধ্যে কমিশন দেওয়ার প্রতিযোগিতা চলত। ১২-১৩ বছর আগে এজেন্টরা যেখানে ১০ শতাংশের বেশি কমিশন পেতেন না, বছর দুয়েক আগে সেটাই পৌঁছে যায় ৩৫ শতাংশে। এক গোয়েন্দাকর্তা বলেন, “সেই লোভেই বহু যুবক-যুবতী রাতারাতি এজেন্ট হয়ে যান।”
এখন বিপন্ন তাঁদের অনেকেই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.