গ্রাহকদের টাকা ফেরত পেতে ‘সুরাহা মাইক্রো ফাইন্যান্স’ নামে একটি সংস্থার এজেন্টদের একাংশ প্রশাসনের দ্বারস্থ হলেন। প্রধানমন্ত্রী, রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়ে এজেন্টরা এ ব্যাপারে জানিয়েছেন। সংস্থার কাছে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা পাওনা রয়েছে বলেও এজেন্টদের দাবি। সংস্থার তরফে বারবার টাকা মেটানোর আশ্বাস দেওয়া হলেও এখনও তা হয়নি।
২০০৮ সালে এই লগ্নি সংস্থাটি কালনা শহরের বৈদ্যপুর মোড়ে ব্যবসা শুরু করে। চড়া কমিশন দিয়ে গ্রাম ও শহর থেকে বহু এজেন্ট নিয়োগ করা হয়। ২০১০ সাল থেকে ওই সংস্থা ব্যবসা জমে ওঠে। ২০১০ সাল থেকে ২০১১ সালের শেষ পর্যন্ত প্রতি মাসে আমানতকারীদের থেকে মাসে প্রায় এক কোটি টাকা উঠে আসতে থাকে বলে দাবি এজেন্টদের। এজেন্টদের মিলিত প্রয়াসে রক্তদান শিবির, কম্বলবিলির অনুষ্ঠান এবং গণবিবাহের আয়োজনও করা হয়।
প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগে এজেন্টরা দাবি করেন তাঁরা শিক্ষিত ছাত্রছাত্রী অথবা বেকার। তাঁরা যে সংস্থার হয়ে কাজ করতেন তার মুখ্য কার্যালয় রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবারের নুনগোলায়। সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর দিলীপরঞ্জন নাথ এবং তাঁর স্ত্রী বাসন্তী মণ্ডল নিজেদের কাছে আমানতকারীদের টাকা জমা রাখতেন বলে জানিয়েছেন এজেন্টরা। ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাস থেকে থেকে লেখা চিঠিতে এজেন্টরা জানিয়েছেন বহু আমানতের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সংস্থার তরফে আমানতকারীদের টাকা পরিশোধ করা হচ্ছে না। প্রায় দেড় বছর ধরে টাকা ফেরত দেওয়া নিয়ে টালবাহানা করা হচ্ছে সংস্থার তরফে, এমনই দাবি করেছেন এজেন্টরা। মেয়াদউত্তীর্ণ টাকা ফেরত না পেয়ে আমানতকারীদের হতাশা বেড়ে চলেছে। তাঁরা হামলা করছেন এজেন্টদের উপর। পাওনা টাকা যাতে সঠিক সময়ে ফেরত পাওয়া যায়, এমন আর্জি জানিয়ে চিঠিতে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের আবেদন করা হয়েছে এজেন্টদের তরফে। সংস্থার সিনিয়ার এজেন্ট রবি দাস জানান, পাওনা টাকার জন্য ক্ষোভ চরমে ওঠার পর ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাস থেকে যে ভাড়া বাড়িতে সংস্থার অফিসটি চালানো হত সেটি বন্ধ হয়ে যায়। রবিবাবু বলেন, “পাওনাদারের চাপের মুখে বহু এজেন্ট নিজেদের সম্পত্তি বিক্রি করে টাকা ফেরত দিয়েছেন। বর্তমানে তাঁদের অবস্থাও সঙ্গীন। প্রশাসন পাশে না দাঁড়ালে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।” সংস্থার বিরুদ্ধে টাকা ফেরত না দেওয়া সত্ত্বেও থানায় কোনও অভিযোগ দায়ের হল না কেন? রবিবাবুর বক্তব্য, “সারদা কাণ্ডের আগেও সংস্থার তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল দফায় দফায় টাকা শোধ করার। টাকা ফেরত পাওয়ার আশায় ছিলাম। তবে এখন মালিকের নামে অভিযোগ দায়ের ছাড়া কোনও উপায় নেই।” সংস্থার আর এক এজেন্ট দেবাশিস ঘোষ বলেন, “আমার মাধ্যমে যে সব আমানতকারীরা টাকা রেখেছিলেন তাঁদের পাওনা প্রায় তিন লক্ষ টাকা। কী হবে জানি না।” তবে সংস্থার কোনও আধিকারিকের সঙ্গেই যোগাযোগ করা যায়নি।
কালনা শহর এবং তার আশপাশে লগ্নি সংস্থার সংখ্যা প্রায় ৪০টি। সারদা-সহ পাঁচটি সংস্থা ইতিমধ্যে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। কয়েকটির কার্যালয় খোলা থাকলেও কেউ কেউ টাকা ফেরত দিতে টালবাহানা করছে বলে দাবি এজেন্টদের। কোনও সংস্থার বিরুদ্ধেই প্রশাসনিক তদন্ত শুরু হয়নি বলে অভিযোগ এজেন্টদের। মহকুমা পুলিশের এক আধিকারিক মঙ্গলবার বলেন, “কোনও সংস্থার বিরুদ্ধে লিখিত কোনও অভিযোগ নেই। অভিযোগ হলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |